জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে নতুন জেলার সূচনা। অনুষ্ঠানে তাই মাওবাদী পর্বের স্মৃতি উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা ঘোষণার মুর্হূতে মমতা মনে করালেন, ‘‘এক সময় জঙ্গলমহলের পথে থাকত রক্তের দাগ। বাইরের লোকজন ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি, লালগড় যেতে ভয় পেতেন। শিলদায় জনা ৩০ ইএফআর জওয়ান খুন হয়েছিলেন। বেলপাহাড়ি, শিলদা, ঝাড়গ্রামের কত লোককে চিনতাম, যাঁরা খুন হয়ে গিয়েছেন।’’
তাঁর সরকার আতঙ্কের সেই দিনলিপিতে দাঁড়ি টেনে উন্নয়ন আর শান্তি ফিরিয়ে এনেছে বলেই মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। মমতার কথায়, ‘‘যে জঙ্গলমহলে এক সময় রক্তের হোলি খেলা হত, এখন সেখানে বসন্তের ফাগ খেলা হয়।’’ সেই বসন্ত দিনেই পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলার জন্ম হল। এ দিন দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরের রাজ কলেজ মাঠে প্রশাসনিক সভায় আত্মপ্রকাশ করে রাজ্যের ২২তম এই জেলা। অনুষ্ঠানের জাঁক ছিল নজরকাড়া। দুপুর একটায় মুখ্যমন্ত্রী সভাস্থলে পৌঁছনোর আগেই শুরু হয়ে যায় লোকশিল্পীদের নাচ-গান। পুলিশ ব্যান্ডে বাজানো হয় জাতীয় সঙ্গীতের সুর। পরে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র) মলয় দে ঝাড়গ্রাম জেলা তৈরির সরকারি বিজ্ঞপ্তি পড়ে শোনান। মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, ‘‘সর্বস্তরের সরকারি দফতর থেকে ঝাড়গ্রাম জেলাবাসীকে সহজে পরিষেবা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।’’
আরও পড়ুন: দোকান সরালে ফি মকুব
বঞ্চনার অভিযোগ তুলে এ দিনও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিঁধেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলের উন্নয়নে দিল্লির সরকার আগে টাকা দিত। সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা নিজেরাই ১১০ কোটি টাকার পরিকল্পনা করে উন্নয়ন করছি।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমি কৃষি জমির খাজনা মকুব করে দিয়েছি। কেন্দ্রকে বলব, আপনারা কৃষকদের ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করে দিন।’’
বঞ্চনা সত্ত্বেও আগামীতে জঙ্গলমহলের এই জেলার উন্নয়নই যে তাঁর সরকারে অগ্রাধিকার পাবে, এ দিন ফের তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। শতাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নতুন জেলার উন্নয়নে দু’শো কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।’’ জঙ্গলমহলের পড়ুয়াদের উচ্চ শিক্ষার স্বার্থে ঝাড়গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘ঝাড়গ্রামে অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস করা হতে পারে। মুখ্যসচিবকে দেখে রাখতে বলব, যাতে ঝাড়গ্রাম জেলাকে এটা উপহার দেওয়া যায়।’’ জঙ্গলমহলের পড়ুয়াদের মেধাবিকাশের স্বার্থে রামকৃষ্ণ মিশনকে ঝাড়গ্রামে পাঁচ একর জমি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জানান, এখন থেকে ৪ এপ্রিল ঝাড়গ্রাম জেলার জন্মদিন পালন করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy