দফতরে রাজা দত্ত। - নিজস্ব চিত্র।
বান্টি খুনের ঘটনায় রাজা দত্তের নামে এফআইআর করা হয়েছিল গত শনিবার। তিনদিন পরে, বুধবার এ বার রাজার নামে আরও একটি এফআইআর দায়ের করা হল।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহের কাছে করা এই অভিযোগটি দায়ের করেছেন তিন বছরের সায়ন্তিকার মা দেবশ্রী ঘোষ। ভোটের আগের রাতে রাজার দলবল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকে তাঁদের মারধর করে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন দেবশ্রী। এ দিন তিনি লিখিতভাবে পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছেন, এই ঘটনার কথা পুলিশে জানানোয় রাজার লোকজন তাঁকে হুমকি দিচ্ছে।
পর পর দু’টি এফআইআর হওয়ায় স্পষ্ট, রাজার কার্যকলাপ যত সামনে আসছে, ততই ভয় ভাঙছে এলাকার মানুষের। শুধু আক্রান্তরাই নন, মুখ খোলা শুরু করেছেন সমাজের সব স্তরের মানুষও। রাজার সাকরেদের একাংশও নানা তথ্য দিয়ে রাজার দুষ্কর্মের কথা খোলাখুলি জানাচ্ছে। সব থেকে বড় কথা, এত দিন পরে পুলিশও রাজার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কিন্তু, ভোট-বাজারে মেরুদণ্ড ফিরে পাওয়া পুলিশ কি সত্যিই রাজার বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে?
সে প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে। কিন্তু, নিহত রাজ-অনুচর বান্টির স্ত্রী পায়েল ঘোষের করা অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন করে তদন্ত শুরুর ইঙ্গিত মিলেছে। পুলিশ রাজার বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহেও নেমে পড়েছে।
২০১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি খুন হয় বান্টি ওরফে সৈকত ঘোষ। সেই মামলায় রাজার সাত সাকরেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও সিআইডি। ধৃতেরা এখন জামিনে রয়েছে। সেই সময় বান্টির বাড়ির লোক বারবার রাজার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চেয়েও পুলিশকর্মীদের একটি অংশের বাধায় তা করতে পারেননি বলে অভিযোগ। কিন্তু রাজার বিরুদ্ধে জনমত জোরালো হতেই আর অপেক্ষা করেননি পায়েল। রাজার বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তদন্তের দাবিতে তিনি দিনকয়েক আগেই ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহের দ্বারস্থ হন। মঙ্গলবার রাতে বীজপুর থানার পুলিশ পায়েলকে ডেকে পাঠায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, থানার আইসি দেবনাথ সাধুখাঁ নিজে পায়েলের সঙ্গে কথা বলেন। আইসি তাঁকে জানান, পুলিশ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে। বান্টি খুনের ঘটনায় পায়েলের কাছে রাজার বিরুদ্ধে যে সব তথ্য এবং প্রমাণ রয়েছে, তা যেন তিনি বুধবার পুলিশের হাতে তুলে দেন। পায়েল জানান, তিনি পুলিশকে সহযোগিতা করতে চান।
আইসি পায়েলের কাছে জানতে চান, বান্টি খুনের এতদিন পরে তিনি রাজার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন কেন? পায়েল তাঁর কাছে অভিযোগে জানান, তিনি একাধিকবার থানায় অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন। কিন্তু থানারই এক অফিসার তাঁকে দিনের পর দিন এই বলে বারণ করেছিলেন,— ‘রাজা দত্ত প্রভাবশালী লোক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে লাভ হবে না’। এ কথা শোনার পরই আইসি সেই অফিসারকে ডেকে পাঠান। তিনি এমন করেছেন কিনা, জানতে চান। কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও কথা বলতে পারেননি সেই অফিসার।
আইসি পায়েলকে বলেন, ‘‘বান্টি খুনের ঘটনায় ওই অফিসার তদন্তকারী দলে থাকলেও অন্য এক অফিসারকে তিনি এই তদন্তের দায়িত্ব দিচ্ছেন। পায়েলের কাছ থেকে তিনিই সব তথ্য সংগ্রহ করবেন।’’
পায়েল পরে বলেন, ‘‘আইসি-র সঙ্গে কথা বলে পুলিশ সম্পর্কে ধারণাটা বদলে গিয়েছে। এর আগে যতবার পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি, নিরুৎসাহিত হয়েছি। এ বার যদি কিছু হয়, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’’
তবে যাকে ঘিরে এত আলোচনা, বুধবার শেষ পর্যন্ত আনন্দবাজারের কাছে মুখ খুলেছে সে। তার বিরুদ্ধে ওঠা পুকুর-ভরাট থেকে বালি-খাদানের ব্যবসা, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট— সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে রাজা দত্ত। এমনকী, ‘রায়বাড়ি’র সঙ্গে তার ‘বিশেষ সম্পর্ক’ নিয়ে বিরোধীরা যে তোপ দাগছিল, তা-ও অস্বীকার করেছে এই তৃণমূল নেতা। রাজার দাবি, ‘‘এলাকার বিধায়ক বা তাঁর বাবার সঙ্গে অন্যদের যেমন সম্পর্ক রয়েছে, আমারও তেমনই। এর বেশি কিছু নয়। আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছুই লেখা হচ্ছে। আমি এখন ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। সময়ে আসল তথ্য প্রকাশ পাবে।’’
আর যে বান্টিকে খুনের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মূল ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, তা-ও নাকচ করেছে রাজা। তার দাবি, ‘‘বান্টি আমার পরিচিত ছিল। ওর মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু তাতে আমার কোনও যোগ নেই। আইন আইনের পথে চলুক। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে বান্টি কিন্তু আমার নাম করেনি।’’
হালিশহরও চায়— আইন আইনের পথে চলুক। তদন্তে কোনও প্রভাবশালী বাড়ির ছায়া যেন না পড়ে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy