Advertisement
E-Paper

সঙ্গীতা-ফঙ্গিতা চিনি না, সব রং চড়ানো: অনুব্রত এক্সক্লুসিভ

অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘আউশগ্রামে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নামে আমাদের এক কর্মী খুন হয়েছিলেন। সেই খুনিদের ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলছিলাম।’’ কিন্তু আপনাকে তো ‘গাঁজা কেস’ দেওয়ার কথা বলতে শোনা গিয়েছে! অনুব্রত মণ্ডল বললেন, ‘‘ওই খুনিরা এখন গাঁজার ব্যবসা করে। সেই কারণেই গাঁজা কেসে অ্যারেস্ট করার কথা বলেছি। এতে ভুলটা কী আছে?’’

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:২৮
বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি

বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি

খুনের আসামি, এখন গাঁজার ব্যবসা করে। তাঁকেই গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। দাবি অনুব্রত মণ্ডলের। রবিবার বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে অনুব্রত মণ্ডলের বৈঠকের একটি ভিডিয়ো ক্লিপিং ভাইরাল হয়েছে ইন্টারনেটে। বিতর্কিত সেই ভিডিয়ো ক্লিপিং নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে। রবিবার বিষয়টি নিয়ে বিশদে মুখ খুলতে চাননি বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি। ‘বাজে কথা, ফালতু কথা’— শুধু এই বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। সোমবার আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে মুখ খুললেন অনুব্রত। বৈঠকে ‘আসলে’ কী নিয়ে কথা হচ্ছিল, তার ব্যাখ্যা দিলেন। আর জানালেন, সঙ্গীতা চক্রবর্তী নামে কাউকে চেনেনই না।

অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘আউশগ্রামে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নামে আমাদের এক কর্মী খুন হয়েছিলেন। সেই খুনিদের ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলছিলাম।’’ কিন্তু আপনাকে তো ‘গাঁজা কেস’ দেওয়ার কথা বলতে শোনা গিয়েছে! অনুব্রত মণ্ডল বললেন, ‘‘ওই খুনিরা এখন গাঁজার ব্যবসা করে। সেই কারণেই গাঁজা কেসে অ্যারেস্ট করার কথা বলেছি। এতে ভুলটা কী আছে?’’

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতির মুখে এ দিন জয়দেব মণ্ডল নামে এক জনের নাম উঠে এসেছে। কে এই জয়দেব মণ্ডল? অনুব্রত মণ্ডল জানালেন, জয়দেব মণ্ডল আউশগ্রামের সিপিএম নেতা। জয়দেব মণ্ডলের পরিবারের লোকজনের হাতেই না কি উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নামে এক তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছিলেন। সেই খুনিদের ধরিয়ে দেওয়ার কথাই তিনি বলতে চেয়েছেন বলে অনুব্রতর দাবি।

আরও পড়ুন: ‘ওকে অ্যারেস্ট করিয়ে দে, গাঁজা কেস...’, অনুব্রতর ভিডিয়ো ক্লিপ ঘিরে তোলপাড় রাজ্য

যে ভিডিয়ো ক্লিপিং রবিবার ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে কিন্তু কথোপকথনটা অন্য রকম ছিল। ওই ভিডিয়োয় শোনা গিয়েছিল, অনুব্রত বলছেন, ‘‘ওই ফাইভ ম্যান কমিটি থেকে এক জনকে বাদ দিলাম না?... ওই ছেলেটাকে, ওকে অ্যারেস্ট করিয়ে দে। ওই যে মেয়েটার কী নাম? মোটা করে মেয়েটা, কাপড়ের দোকান আছে।... সঙ্গীতা (কেউ মনে করিয়ে দেওয়ার পরে)। ও বিজেপি করে, ওকেও অ্যারেস্ট করিয়ে দে গাঁজা কেসে।’’ আর তার পরেই পাশের সিটে বসে থাকা বীরভূমের জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহকে বলেন— ‘‘আইসিকে ধর তো। বর্ধমানের এসপিকেও ফোন কর।’’ সামনের দিকে অনুব্রত ফের প্রশ্ন করেন ‘‘ওঁদের কন্ট্রোল করতে পারবি কি? কন্ট্রোল করতে পারলে বল, না হলে অ্যারেস্ট করিয়ে দেবো। কে আছিস রে? পারবি কন্ট্রোল করতে?’’ সামনে থেকে উত্তর আসে ‘হ্যাঁ, চেষ্টা করছি।’ তাতে ফের মেজাজ হারিয়ে অনুব্রতর উত্তর ‘‘ও সব চেষ্টা চলবে না। হ্যাঁ কি না? উত্তর চাই।’’

এই কথোপকথনে কোথাও উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নামে কোনও খুন হওয়া তৃণমূল কর্মীর নাম শোনা যায়নি। বরং ‘‘ফাইভ মেন কমিটি’ থেকে বাদ পড়া এক তৃণমূল কর্মীর বিষয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই তৃণমূল কর্মীর নাম উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এবং তিনি বর্তমানে বিক্ষুব্ধ। অনুব্রত মণ্ডল এই ধোঁয়াশার বিশদ ব্যাখ্যায় যেতে চাইলেন না। বললেন, ‘‘উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় আমাদের এক কর্মী আউশগ্রামে খুন হয়েছিলেন, সেটা সবাই জানে। জয়দেব মণ্ডলের লোকজন খুন করেছিল, সেও সবাই জানে। বোধহয় জেলও খেটে এসেছে। এখন তারা গাঁজার ব্যবসা করছে। তাদেরকেই গ্রেফতার করানোর কথা বলেছি।’’

আরও পড়ুন: আমার কোনও বিপদ হলে দায়ী অনুব্রত: ভিডিয়ো বার্তা সঙ্গীতার

কিন্তু সঙ্গীতা চক্রবর্তী তো সিপিএম করতেন না। তিনি খুনও করেননি, গাঁজার ব্যবসাও করেন না। তা হলে সঙ্গীতাকে গাঁজার কেসে গ্রেফতার করানোর কথা বললেন কেন? অনুব্রত ফের স্বমহিমায়। বললেন, ‘‘কে সঙ্গীতা? কোনও সঙ্গীতা-ফঙ্গিতাকে চিনি না।’’ কিন্তু ভিডিয়োতে যে দেখা গিয়েছে, আপনি সঙ্গীতা নামে কোনও এক জনকে গ্রেফতার করানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। অনুব্রত বললেন, ‘‘ওসব ফালতু, রং চড়ানো ভিডিয়ো। কে কী ভিডিয়ো ছড়িয়েছে, দেখিনি। দেখার ইচ্ছাও নেই। আমার মুখে কী কথা বসানো হয়েছে, জানি না। ওসব ভিডিয়োয় কে কী দেখাল, তাতে কিছু যায় আসে না।’’

রবিবার বীরভূম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহও একই কথা বলেছিলেন। ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়ানো হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সোমবার অনুব্রত বললেন, ‘‘রানা (অভিজিৎ সিংহের ডাক নাম) তো ভুল কিছু বলেনি। আমাদের দলীয় বৈঠকের ভিডিয়ো বাইরে যাওয়ারই কথা নয়। সেই ভিডিয়ো বাইরে যখন গেল, তখন বুঝতে হবে, ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ সেটা করেনি। আর উদ্দেশ্য যদি খারাপ থাকে, তাহলে ভিডিয়োর মধ্যে মুখে কথা বসিয়ে নিতেও পারে।’’

আরও পড়ুন: কিছু প্রভাবশালীকে ঘিরে সঙ্কটে সিবিআই

অনুব্রত মণ্ডলের ভিডিয়ো রবিবার ভাইরাল হওয়ার পরে সামনে আসেন সঙ্গীতা চক্রবর্তী নামে এক মহিলা। তিনি আউশগ্রামেরই বাসিন্দা। তিনি একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করে দাবি করেন, অনুব্রত মণ্ডল তাঁকেই গ্রেফতার করানোর কথা বলেছেন। অনুব্রতর প্ররোচনায় তাঁর উপরে আগেও হামলা হয়েছে বলে সঙ্গীতা চক্রবর্তী অভিযোগ করেন। সোমবার সঙ্গীতা চক্রবর্তীর সেই ভিডিয়ো বার্তা প্রসঙ্গেও প্রশ্ন করা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। অনুব্রত ফের বলেন, ‘‘বললাম তো, কোনও সঙ্গীতা চক্রবর্তীকে চিনি না। ওসব ফালতু কথা, কারা কী বলছে, আমার জানার দরকার নেই।’’

প্রশ্ন তবুও থেকেই যাচ্ছে, খুনের মামলার কোনও আসামি বা কোনও গাঁজা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করানোর নির্দেশ তৃণমূলের দলীয় বৈঠক থেকে কেন যাবে? পুলিশ-প্রশাসন নিজে থেকে কেন পদক্ষেপ করবে না? দলীয় বৈঠক থেকে নির্দেশ না গেলে কি ‘খুনের আসামি’ বা ‘গাঁজা ব্যবসায়ী’ গ্রেফতার হবেন না? অনুব্রত মণ্ডলকে কে, যে তিনি পুলিশকে ‘অ্যারেস্ট’ করানোর নির্দেশ দিতে পারেন? এ সব প্রশ্নের উত্তর না অনুব্রত মণ্ডল দিয়েছেন, না তৃণমূলের তরফ থেকে কেউ দিয়েছেন।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

Anubrata Mandal TMC Birbhum Viral Video অনুব্রত মণ্ডল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy