Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বিরোধীদের ভোট নয়, নলহাটিতে কেষ্ট

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলার অন্য ব্লকের মতো হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন নলহাটি ২ ব্লকের লোহাপুরে দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তা ফের মনে করিয়ে দিলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (ওরফে কেষ্ট) নিজেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনে হাঁসন কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী অসিত মালের হার তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে এখনও গলায় কাঁটা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলার অন্য ব্লকের মতো হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন নলহাটি ২ ব্লকের লোহাপুরে দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তা ফের মনে করিয়ে দিলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (ওরফে কেষ্ট) নিজেই। সেই সুরেই বক্তব্য রেখে গেলেন তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি, মন্ত্রী থেকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি, বিধায়ক থেকে ব্লক নেতৃত্বও। সকলেরই আর্জি, বিধানসভার ভুল যেন আর না হয়।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় শুক্রবার থেকে অনুব্রত মণ্ডল প্রতিটি ব্লকে বড় মাপের সভা শুরু করলেন। প্রথম সভা করলেন লোহাপুরে। আজ, শনিবার রামপুরহাট ২ ব্লকের মাড়গ্রামে সভা করার কথা। আগামী ৮, ৯, ১০ ডিসেম্বর মুরারই ১, নলহাটি ১ এবং মুরারই ২ ব্লকে সভা হওয়ার কথা।

তবে শুক্রবারের নলহাটি ২ ব্লকের লোহাপুরের সভা তৃণমূলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেননা, নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতি এখনও সিপিএমের দখলে। পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ৬টি পঞ্চায়েতের একটিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তৃণমূলের দখলে যায়নি। জেলা পরিষদের দুই সদস্যও এখন সিপিএমেই আছেন। লোকসভা নির্বাচনেও এলাকায় পিছিয়ে ছিলেন শতাব্দী রায়। আর বিধানসভা ভোটের হার তো রয়েছেই। এই এলাকা থেকে কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রসিদ বিধানসভা ভোটে নির্বাচিত হন।

সেই সব কাঁটা ডিঙিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের সভায় লোক কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল তৃণমূল নেতাদের একাংশের মধ্যেও। যদিও প্রকাশ্যে তা স্বীকার করতে চাননি তৃণমূলের রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য বা নলহাটি ২ ব্লক সভাপতি বিভাষ অধিকারীরা। সভার শুরুতে সভাস্থলে মেরেকেটে হাজারখানেক লোকের উপস্থিতি ঘিরে অনুব্রতকেও খুব একটা স্বস্তিতে দেখা যায়নি। পরে একে একে বারা ১, বারা ২ এবং ভদ্রপুর ১ এবং ভদ্রপুর ২ পঞ্চায়েত থেকে সভাস্থলে মানুষের ঢল বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি দেখে স্বস্তি ফেরে তৃণমূল নেতৃত্বের শরীরি ভাষায়।

সভায় ভিড় দেখে খুশি অনুব্রত বলেন, ‘‘নলহাটি ২ ব্লকের মানুষ এখনও জেলার অন্য ব্লকের থেকে পিছিয়ে আছেন। আপনারা কী চান বলুন, অর্ডার করুন, নির্দেশ করুন। আমি নিজে হাজির হয়ে সেই কাজ করে দেব। জেলা পরিষদের সভাধিপতি, ব্লক সভাপতি আপনাদের পাশে থেকে কাজ করে যাবে। আপনারা খালি আমাদের নির্দেশ দিন। দেখবেন রাস্তাঘাট, নিকাশি নালা উন্নয়নের কাজ হয়ে যাবে।” দলের কর্মীদের উদ্দেশে এক সময় অনুব্রতকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মানুষের পাশে থেকে কাজ করুন। এলাকার মধ্যবিত্ত মুসলিম এবং মধ্যবিত্ত হিন্দুদের বড় বিপদ। এঁরা চাইতে পারেন না।’’ তাঁদের পাশে থেকে কাজ করার নির্দেশও দেন অনুব্রত। বক্তব্য শেষে অনুব্রত মনে করিয়ে দেন, ‘‘নলহাটি ২ এর মানুষ পঞ্চায়েতে ভুল করবেন না। বড় ভুল হয়ে যাবে।’’ যে ইঙ্গিতটা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন অনুব্রত, সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন অন্য নেতারা। তাঁরা সাফ জানান, আর কংগ্রেস বা বাম নয় এ বারের পঞ্চায়েত ভোট তৃণমূলের পক্ষেই দিন। এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক উন্নয়নের কাজে তেমন আগ্রাসী নন বলেও সমালোচনা করেন অনুব্রত। জেলা তৃণমূলের সভাপতির কথায়, ‘‘এখানকার কংগ্রেসের বিধায়ক কী কাজ করেছেন? অনেক স্কুল তো খারাপ আছে। টাকা দিয়েছে।’’ চলতি মাসের ১৫ তারিখ মুকুর রায়ের সাঁইথিয়ায় আসার কথা। সাংবাদিকরা সে কথা তুললে অনুব্রতর জবাব, ‘‘কে মুকুল রায়। দু’পয়সার মুকুল রায়ের কোনও দাম আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিল, মুকুল রায় ছিল। এখন কোনও দাম নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE