—ফাইল চিত্র।
এক দিকে অনুব্রত মণ্ডলকে তৃণমূলের সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া, অন্য দিকে সরকারি স্তরে প্রচারে জোর। লোকসভা ভোটের আগে নদিয়ায় এসে এই দুই দাওয়াই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নদিয়ায় দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ভালই ধাক্কা দিয়েছে। মাঝে কিছু দিন শুভেন্দু অধিকারী জেলার দায়িত্ব নিচ্ছেন বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ পার্থর পাশাপাশি বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলকেই তৃণমূল স্তর থেকে সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব দিলেন দলনেত্রী। এ মাসের মাঝামাঝি থেকেই তাঁর কাজে নেমে পড়ার কথা।
মঙ্গলবার রানাঘাটের হবিবপুরে প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন সরকারি প্রচারের উপরে। চাষিদের যে সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা কিসান মান্ডি থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় ফ্লেক্স টাঙিয়ে প্রচারের নির্দেশ দেন তিনি, যাতে চাষিরা জানতে পারেন।
বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত জাতীয় সড়কের বেহাল দশা ও তিন বছর ধরে ‘ডিটেলড প্রজেক্ট রিপোর্ট’ তৈরি করতে না পারায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উপরেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। শঙ্কর সিংহকে দায়িত্ব দেন, নদিয়ার অংশে ফ্লেক্স টাঙিয়ে প্রচার করতে যে এই রাস্তাটা কেন্দ্র সরকারের। রাজ্য চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছে না। কেন সেটা এত দিন করা হয়নি, তা নিয়েও তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন।
যে রাস্তাগুলি নতুন করে তৈরি হচ্ছে সেগুলিতে এলইডি লাইটের মাধ্যমে বোর্ড টাঙিয়ে ‘নতুন’ বলে প্রচার করার জন্য জেলা পরিষদ ও পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দেন মমতা। তাঁর কথায়, “আপনাদের কাজের কথা কেউ জানতে পারে না। বড় বড় করে প্রচার করুন। এলইডি লাইটের খরচ কম। সেগুলো লাগিয়ে প্রচার করুন। জেলা পরিষদ থেকেও যে কাজ হয় সেগুলোও মানুষ জানতে পারে না। প্রচার করুন।”
পাশাপাশি, একশো দিনের কাজ নিয়েও নজরদারি বাড়াতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর হুঁশিয়ারি, এক জনের কার্ড নিয়ে অন্য কেউ যাতে কাজ করতে না পারে। কাজ দেখাতে গিয়ে যেন প্রকৃত গরিবদের বঞ্চিত না করা হয় জেলাশাসককে তা দেখতে নির্দেশ দেন তিনি। মমতা বলেন, “দেখতে হবে, কেউ যেন কার্ড বিক্রি না করে। হয়তো আমার জব কার্ড আছে। কিন্তু আমি কাজ করব না, কিন্তু আমার কার্ড নিয়ে অন্য কেউ কাজ করল। যেন এটা না হয়। আমাদের দেখতে হবে, প্রকৃত গরিব যেন উপকৃত হয়। এর মধ্যে যেন ফড়ে না ঢোকে।”
কৃষ্ণনগরের মসলিন তীর্থের অবস্থাও জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তার দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদি বোর্ডের এক কর্তা বলেন, তাঁরা গুজরাত থেকে চরকা এনে তা তাঁতশিল্পীদের মধ্যে বিলি করছেন। শুনেই রেগে গিয়ে মমতা বলেন, “গুজরাত থেকে কেন চরকা বিলি করা হচ্ছে? কেন সেটা নিজেরা তৈরি করছি না, যেখানে আমরা বেশি বেশি করে মানুষকে কাজ দিতে চাইছি?” থমকে গিয়ে চুপ করে থাকেন ওই কর্তা। অগত্যা তাঁতশিল্পে একের পর সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে পরিস্থিতি সামাল দেন সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। নদিয়ায় জেলায় তাঁত, মসলিন ও লিনেনের জন্য ‘এক্সপোর্ট হাব’ তৈরির নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গেই এইমস-এর কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং সমস্ত প্রসব হাসপাতালে করাতে জন্য প্রয়োজনে চর এলাকার প্রসূতিদের আগে থেকে এনে রাখার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সীমান্তে আরও কড়া নজরদারি নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। পুলিশ সুপারকে তিনি বলেন, ‘‘তেহট্ট, করিমপুর, কৃষ্ণগঞ্জ, হাঁসখালি এলাকাগুলো ভাল করে দেখতে হবে।’’ তেহট্ট ও হাঁসখালিতে খুন নিয়েও তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি, কল্যাণী আর গয়েশপুর থানার আইসি-দের কড়া হাতে দুষ্কৃতী দমনের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কেউ দুষ্টুমি করলে ছাড়া যাবে না। কাউকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy