Advertisement
১১ মে ২০২৪

অনুপমের আর্জি কেন্দ্রের কোর্টে

বিশ্বভারতীর পর আসাম বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও কাজে যোগ দিতে দেওয়া হল না বোলপুরের সাংসদ তৃণমূল অনুপম হাজরাকে।

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপম। নিজস্ব চিত্র।

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপম। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

বিশ্বভারতীর পর আসাম বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও কাজে যোগ দিতে দেওয়া হল না বোলপুরের সাংসদ তৃণমূল অনুপম হাজরাকে।

তবে কি তাঁর শিক্ষকতার চাকরিটা ধরে রাখা গেল না? আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সঞ্জীব ভট্টাচার্যও এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, ‘‘অনুপমবাবুর লিখিত বক্তব্য এবং এ সংক্রান্ত আমাদের কাগজপত্র কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হচ্ছে। তাঁরা যে ভাবে বলবেন, সে ভাবেই চলব আমরা।’’ তিনি জানান, এ ধরনের ঘটনা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম। তার মধ্যে আবার নানা জটিলতা। প্রথমত, একই সঙ্গে শিক্ষক ও সাংসদ থাকা সম্ভব কি না। দ্বিতীয়ত, অনুপমবাবু লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে তিনি কোনও এনওসি (দাঁড়াতে কোনও আপত্তি নেই) নেননি। সাংসদ হয়েও সে কথা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাননি। তৃতীয়ত, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে লিয়েন শেষ হওয়ার পর ৮-৯ মাস ধরে বিনা অনুমতিতে ছুটিতে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজেরা কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ। বল ঠেলে দিয়েছেন দিল্লির কোর্টে।

তবে কেন চিঠি পাঠিয়ে ডাকা হল তাঁকে? বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য, কেউ লিয়েন নিয়ে গেলেও যতক্ষণ আর ফিরবেন না বলে জানাচ্ছেন, ততক্ষণ তিনি তাঁদের শিক্ষক। ফলে ৮-৯ মাস ধরে অনুপস্থিত থাকলে তাঁর খোঁজ নিতেই হয়। চিঠি পাঠিয়ে মূলত তাঁর বক্তব্যই জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি ফিরতে না চাইলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু সাংসদ থেকে শিক্ষকতা করতে চাইছেন বলে মন্ত্রক ও ইউজিসির পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।

এ সবে অবশ্য আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও দোষ দেখছেন না অনুপমবাবু। সব দায় চাপান বিশ্বভারতীর কাঁধে। নিজের হাতে রাখা ফাইল ঘেঁটে দেখান, এনওসি-র জন্য তিনি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও আবেদন করেছিলেন। নিয়ম মেনে তা জমা দিয়েছিলেন বিশ্বভারতীতে। তা শিলচরে পৌঁছয়নি। তার বদলে বিশ্বভারতীই একটি এনওসি দিয়ে দিয়েছিল।

তাঁর অভিযোগ, শুধু এনওসি নয়, ইচ্ছাকৃত ভাবে বিশ্বভারতী তাঁর বহু চিঠি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়নি। অথচ তিনি সময়ে সময়ে সমস্ত কথা বিশ্বভারতীর (থ্রু প্রপার চ্যানেল) মাধ্যমে শিলচরে জানাতে চেয়েছিলেন।

শিলচরে বসেও অনুপমবাবু বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই লোকটিই সব গণ্ডগোল পাকিয়েছেন। আসলে তাঁর ১২ কোটি টাকার দুর্নীতি সামনে নিয়ে এসেছিলাম বলে সহ্য করতে পারতেন না আমাকে। না হলে কেউ অনুপস্থিতির জন্য আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গিয়েছি ধরে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন!’’ অনুপমবাবু আজও আশাবাদী, আইন মেনে বিশ্বভারতী তাঁকে শীঘ্রই ডেকে নেবে।

আর এর আগেই আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার অনুমতি মিললে, কোনটা রাখবেন, কোনটা ছাড়বেন? কোনও আমতা আমতা নেই, অনুপম শোনান, ‘‘বিশ্বভারতীর সঙ্গে এখন ইগোর লড়াই। ফলে বুঝতেই পারছেন, সেখানেই তো যেতে হবে।’’

সে জন্য তাঁর চাকরি চলে যাবে, এমন মনে করেন না সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনুপম হাজরা। তিনি নিশ্চিত, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এবং ইউজিসি তাঁকে চাকরিতে পুনর্নিয়োগের নির্দেশ দেবে।

কীসের ভিত্তিতে এমন দাবি? এ বারও ফাইল ঘেঁটে বহু কাগজপত্র, চিঠি-নথি দেখান অনুপমবাবু। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরই তাঁর দফতরকে চিঠি লিখে দিয়েছেন, এই ধরনের জটিলতায় কী কী নিয়মনীতি রয়েছে, তা দেখানোর জন্য। এরা ১৯৭৪ সালের এ সংক্রান্ত একটি নিয়মের কথা জানিয়েছে। ১৯৮৭ সালে তা সংশোধিনও করা হয়েছে। সে অনুসারেই তিনি নাকি একই সঙ্গে লোকসভা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারেন। দুই জায়গা থেকে আর্থিক সুবিধাও পেতে পারেন। এমনকী, অধিবেশনে যোগদানের জন্য ছুটিরও প্রয়োজন নেই, শুধু জানিয়ে রাখলেই হয় বলে দাবি করেন অনুপমবাবু।

এ নিয়ে অবশ্য সঞ্জীববাবু কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রকই এ সব খতিয়ে দেখুক। আমরা শুধু নির্দেশ পালন করে যাব।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক অফিসার জানান, অনুপমবাবু ১৯৭৪ সালের সংশোধনী বলে ইউজিসি সচিবের যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে না আছে সচিবের স্বাক্ষর, না ইউজিসির সিলমোহর। সেটি কম্পিউটারে টাইপ করা। ১৯৭৪ সালে ইউজিসি কম্পিউটার ব্যবহার করত কি না, তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।

তাঁর বক্তব্য, প্রতিটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে শিক্ষক-কর্মচারী সংক্রান্ত নিজস্ব নিয়মনীতি প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু সে জন্য প্রথমে এগজিকিউটিভ কাউন্সিলে তা অনুমোদন করাতে হবে। পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকেরও অনুমোদন প্রয়োজন। তার আগে পর্যন্ত ১৯৬৪ সালের সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসেস (সিসিএস) কন্ডাক্ট রুলস মেনে চলতে হবে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় এখনও নিজস্ব নিয়মনীতি প্রণয়নের কথা ভাবেনি। ফলে এখানে সিসিএস রুলস মেনে চলা হয়। শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের নিয়োগপত্রেও এর উল্লেখ থাকে। ওই নিয়মেই স্পষ্ট বলা হয়েছে, কেউ সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন না। জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ভোটে অংশ নিতেও বারণ করা হয়েছে।

অনুপমবাবু অবশ্য এ সব শুনেও জানান, তিনি বিশ্বাস করেন, আইনের উর্ধ্বে কেউ নন। ফলে আইনত যা হয়, তা-ই তিনি মেনে নেবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মুরলীমনোহর জোশী, সৌগত রায়ের নামোল্লেখ করেন। জানান, তাঁরা একইসঙ্গে সাংসদ ও শিক্ষকতা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assam university Anupam Hazra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE