Advertisement
E-Paper

সুরক্ষা-নির্দেশ কি যথাযথ মানছে স্কুল, ধন্দে প্রশাসন

গত ডিসেম্বরে পেশোয়ারের স্কুলে জঙ্গি হানার পরেই স্কুলে স্কুলে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশিকা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, অবাঞ্ছিত লোকেদের প্রবেশ রুখতে স্কুলের মূল ফটকে যথেষ্ট সংখ্যায় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হবে। গত শুক্রবার রাতে রানাঘাটের কনভেন্টে লুঠতরাজ ও বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের পরে প্রশ্ন উঠছে স্কুলগুলি সেই নির্দেশিকা যথাযথ ভাবে কার্যকর করছে কি না, তা নিয়ে। আক্রান্ত কনভেন্টটিতেই হামলার রাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র এক জন দ্বাররক্ষী। তাঁকে বেঁধে রেখে দুষ্কৃতীরা কনভেন্টের ভিতরে অবাধ তাণ্ডব চালিয়ে পালিয়ে যায়।

সাবেরী প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৪:৩৬

গত ডিসেম্বরে পেশোয়ারের স্কুলে জঙ্গি হানার পরেই স্কুলে স্কুলে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশিকা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, অবাঞ্ছিত লোকেদের প্রবেশ রুখতে স্কুলের মূল ফটকে যথেষ্ট সংখ্যায় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হবে। গত শুক্রবার রাতে রানাঘাটের কনভেন্টে লুঠতরাজ ও বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের পরে প্রশ্ন উঠছে স্কুলগুলি সেই নির্দেশিকা যথাযথ ভাবে কার্যকর করছে কি না, তা নিয়ে।

আক্রান্ত কনভেন্টটিতেই হামলার রাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র এক জন দ্বাররক্ষী। তাঁকে বেঁধে রেখে দুষ্কৃতীরা কনভেন্টের ভিতরে অবাধ তাণ্ডব চালিয়ে পালিয়ে যায়। নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বেশি হলে ওই অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো যেত কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।

পেশোয়ারের ঘটনার পরে কেন্দ্রের জারি করা নির্দেশিকার প্রেক্ষিতে রাজ্যের জেলাশাসকেরা বেসরকারি স্কুলগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেন। স্কুলে অগ্নিকাণ্ড ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা রুখতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, ফটকে মেটাল ডিটেক্টর লাগানো-সহ এক গুচ্ছ পরামর্শ দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। স্কুলগুলি কী ব্যবস্থা নিল, চিঠি পাওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যে তা জানিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছিলেন জেলাশাসকেরা।

আড়াই মাস আগে সেই চিঠি পাঠানো হলেও কি বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে স্কুলগুলি? নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে সেই সময় রিপোর্ট পেয়েছিলাম। তবে গাংনাপুরের কনভেন্টের ঘটনা থেকে তো মনে হচ্ছে যে স্কুলটিতে যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল না।” বেসরকারি স্কুলের উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই বারবার নির্দেশিকা জারি করে বা চিঠি পাঠিয়ে ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দিহান সালিম।

নানা খ্রিস্টান সংগঠন ইতিমধ্যেই দাবি করেছে, স্কুলটিতে ক’বার হুমকি ফোন এসেছিল। সে খবর পুলিশকে জানানো হয়েছিল। পুলিশ তখন যথেষ্ট তৎপর হলে এই অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, স্কুলগুলি নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে কতটা সচেতন, তা নিয়েও।

শুধু বেসরকারি কেন, সরকারি স্কুলগুলিতেও নিরাপত্তা কতখানি জোরদার, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, সিসিটিভি বসানো তো দূরের কথা, এখনও সরকারি স্কুলে বহিরাগতদের প্রবেশ রুখতে সে ভাবে কড়াকড়ি নজরে পড়ে না।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, সরকারি ও সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে নিরাপত্তা এমনিতেই যথেষ্ট কড়া। নতুন করে তা জোরদার করার প্রয়োজন নেই। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক মঙ্গলবার বলেন, “নিরাপত্তা ও সচেতনতাটা সব সময় দরকার। একটা ঘটনা ঘটেছে বলেই তা নিয়ে নতুন করে হইচই করার মানে হয় না। সরকারি স্কুলগুলিতে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তার কারণ আছে বলে মনে হয় না।” তবে সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, কলকাতায় তাদের আবাসিক স্কুলগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানানো হবে।

কলকাতার প্রথম সারির অনেক বেসরকারি স্কুলের অবশ্য দাবি, সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁক নেই। যেমন, বিড়লা হাইস্কুলের অধ্যক্ষা মুক্তা নৈন বলেন, “পরিচয় না দিয়ে কেউ আমাদের স্কুলে ঢুকতে পারে না। তা ছাড়া, প্রচুর সিসিটিভি আছে, নিরাপত্তারক্ষীরা আছেন। সিসিটিভির সাহায্যে স্কুলের সামনের রাস্তায় কী হচ্ছে, তা-ও আমরা দেখতে পাই।” পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা দীপা সেনের কথায়, “স্কুলের মূল ফটক সব সময়ই বন্ধ থাকে। কেউ চাইলেই ভিতরে ঢুকতে পারে না। আর খুব শীঘ্র সিসিটিভিও বসানো হবে।”

কেবল কলকাতাই নয়, জেলারও বহু বেসরকারি স্কুলে নিরাপত্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন মঙ্গলবার জানান, গত ডিসেম্বরে দেওয়া চিঠির প্রেক্ষিতে সেখানকার অনেক স্কুলই ভাল বন্দোবস্ত করেছে। যে সব স্কুল পিছিয়ে আছে, সেখানে কাজ কত দূর এগোল, সে ব্যাপারে নিয়মিত খবর হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ফের যদি কোনও স্কুলে রানাঘাটের কনভেন্টের মতো হামলা হয়, তা হলে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কত দূর কার্যকর হবে, সে উত্তর দেবে সময়ই।

saberi pramanick security measures in school ranaghat convent school nun gang rape case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy