E-Paper

কয়লা দুর্নীতির অতীত রেকর্ড কি ভাঙছে বঙ্গ, প্রশ্ন তদন্তকারীদেরও

ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বেআইনি কয়লা পাচার চক্রের সিন্ডিকেটে এ বারও প্রশাসনের উঁচুতলার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক, কর্মীদের যোগসাজশ মিলছে বলে দাবি ইডির।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৩

—প্রতীকী চিত্র।

সেই ট্র‍্যাডিশন সমানে চলছে! বা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি! যে কোনও ভাবেই বিষয়টি ব‍্যাখ‍্যা করা যায় বলে দেখছেন ইডি কর্তারা। ২০১৯-এর পরে ২০২৩ থেকে ফের নতুন করে কয়লা পাচার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইডির দাবি, ২০১৫ থেকে ২০১৯-এর মধ‍্যে ২০০০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি সামনে আসে। ২০২০-তো ইসিআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে ইডি। এ বার কয়লা কেলেঙ্কারির যা বহর, অতীতের দুর্নীতির মাত্রাও ছাপিয়ে যাবে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে।

ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বেআইনি কয়লা পাচার চক্রের সিন্ডিকেটে এ বারও প্রশাসনের উঁচুতলার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক, কর্মীদের যোগসাজশ মিলছে বলে দাবি ইডির। শুক্রবার সকাল থেকে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ ও দুমকায় কয়লা মাফিয়াদের বাড়ি, অফিস, ফ্ল্যাট মিলিয়ে ২০টি জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। এ রাজ‍্যেও আসানসোল, দুর্গাপুর, কলকাতা, পুরুলিয়ায় প্রভাবশালী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং কয়লা কারবারিদের বাড়ি, অফিস, ফ্ল‍্যাটসুদ্ধ ২৪টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।

ইডি সূত্রের দাবি, তদন্তকারীদের চারটি দল এখনও আসানসোল, বর্ধমান, দুর্গাপুরে কয়লা পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। দাবি, তাদের বয়ান নথিবদ্ধ করে বেআইনি কয়লা কোথা থেকে কোথায় কোথায় পাচার হয়েছে এবং এর সঙ্গে স্থানীয় কোন প্রভাবশালী নেতা জড়িত, তা বের করার চেষ্টা হচ্ছে।

ইডির এক কর্তা বলেন, “ঝাড়খণ্ড থেকে আসা কয়লার বেআইনি পাচারে কুলটির নিয়ামতপুর ফাঁড়ির ডুবিডুবি চেকপোষ্টই খাস তালুক। সরকারি রাজস্বের কোটি কোটি টাকা স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন ও প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে সরানো হয়েছে। এবং তার একটা বড় অংশ দাপুটে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।’’ ইডি সূত্রে দাবি, ২০২৩-এর পর থেকে রোজ কয়লা বোঝাই ১০ চাকা, ১৪ চাকা ও ১৬ চাকার হাজার দেড়েক লরি ঝাড়খণ্ড থেকে এ রাজ্যে ঢুকেছে। ইডির এক কর্তার দাবি, “বাজেয়াপ্ত নথি দেখে মনে হচ্ছে, লরি পিছু ২৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লুট হয়েছে। স্থানীয় নেতাদের আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই লরি পিছু দু’-আড়াই হাজার টাকা পকেটে ভরেছিল।”

সাম্প্রতিক তল্লাশি অভিযানে ঝাড়খণ্ডের কয়লা মাফিয়া লালবাহাদুর সিংহ, অনিল গোয়েল, অমর মণ্ডল ও সঞ্জয় খেমকাদের অফিসে, ফ্ল্যাটে একাধিক ডায়েরি, নোটবুক এবং নথি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ইডি। ইডির তরফে দাবি, ঝাড়খণ্ডের ওই কয়লা কারবারিদের সঙ্গে এ রাজ্যের প্রভাবশালী ঘনিষ্ঠ ব‍্যবসায়ী নরেন্দ্র খাড়কা, কৃষ্ণমুরারি কয়াল, যুধিষ্ঠির ঘোষ, রাজকিশোর যাদব, লোকেশ সিংহ, চিন্ময় মণ্ডল, নীরদ বর্মণ মণ্ডলদের যোগসূত্র মিলেছে।

এ রাজ্যের প্রভাবশালী ঘনিষ্ঠ কয়লা ব্যবসায়ীদের একাংশের নিয়মিত দুবাই এবং লন্ডনে যাতায়াত রয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। কয়লা পাচারের কালো টাকা বিদেশেও নানা সংস্থায় লগ্নি করা হয় বলে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ওই সংক্রান্ত কিছু নথি এ বার দিল্লিতে সদর দফতরে পাঠায় ইডি। সিঙ্গাপুর, তাইল‍্যান্ডেও হোটেল ও পরিবহণ ব্যবসায় কয়লা পাচারের কালো টাকা ঢুকেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ইডির সন্দেহ।

২০১৫-১৯-এর কয়লা পাচার মামলায় একাধিক ইসিএল কর্তা ও কয়লা মাফিয়া গ্রেফতার হন। দিল্লির রাউজ় অ‍্যাভিনিউ সিবিআইস্পেশাল কোর্টে চার্জ গঠনের তোড়জোড় চলছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Coal Smuggling Bengal Coal Scam police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy