Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Cyclone Yaas

পৌঁছল সেনা, ইয়াস দেখতে দিঘায় পর্যটকও

দিঘায় পৌঁছেছে এক কোম্পানি সেনা। স্থলভূমিতে 'ইয়াস' আছড়ে পড়ার পরের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের কাজে লাগানো হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

ঘায় নিজস্বী। মঙ্গলবার।

ঘায় নিজস্বী। মঙ্গলবার। ছবি: কিংশুক আইচ

কেশব মান্না
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ০৬:২৩
Share: Save:

দিঘা: মুহুর্মুহু রং বদলাচ্ছে আকাশ। এই রোদের আঁচ তো পরক্ষণেই ধুম্র-মেঘের ঘটা, কখনও আঁধার করা বৃষ্টি। আর দফায় দফায় উথাল-পাথাল সমুদ্র।

‘ইয়াস’ আসার ২৪ ঘণ্টা আগে দিঘা-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ উপকূলের আবহাওয়া ছিল এমনই খামখেয়ালি। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দিঘা থেকে মাত্র ৩৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে অতি শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়। পূর্বাভাস বলছে, বুধবার সকালেই দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণির উপর দিয়ে বয়ে যাবে ‘ইয়াস’। ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি এড়াতে সৈকত ফাঁকা করার কাজ চলছে কয়েকদিন ধরেই। তবে দুর্যোগ শুরুর মুখে মঙ্গলবার কিন্তু পর্যটকের দেখা মিলেছে দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুরে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল— কেউ উত্তাল সমুদ্র পিছনে রেখে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত, আবার কোথাও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত এলাকা দেখতে উৎসাহীদের জমায়েত দেখা গিয়েছে।

ঝড় মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তিনটি দল, নৌ বাহিনী, সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। তা-ও এ দিন নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে সৈকতের ধারে ঘুরে বেড়ালেন বেশ কিছু লোকজন। জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‘সকালের দিকে এ রকম দু’-একজন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়েছিলেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরা ভিড় জমালে স্থানীয় থানাকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছি। কোথাও হোটেলে কোনও পর্যটককে রাখা হচ্ছে কিনা তা-ও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এ দিন দুপুরে দিঘায় পৌঁছেছে এক কোম্পানি সেনা। স্থলভূমিতে 'ইয়াস' আছড়ে পড়ার পরের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের কাজে লাগানো হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সন্ধে নাগাদ শঙ্করপুরে সর্বশেষ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘এ দিন সব জায়গাতেই বাঁধ ছাপিয়ে সমুদ্রের জল ঢুকেছে। তবে কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব আয়োজন চূড়ান্ত। আর পরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে মানবিক মুখ্যমন্ত্রী অবশ্যই থাকবেন।’’

মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ জোয়ার শুরু হয় বঙ্গোপসাগরে। ওল্ড দিঘায় গার্ডওয়াল ছাপিয়ে একের পর এক মস্ত ঢেউ আছড়ে পড়ে। জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা বেশি ছিল শঙ্করপুরে। কিছুদিন আগে স্থায়ীভাবে যে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করেছিল সেচ দফতর, তা ছাপিয়ে রাস্তায় জল ঢুকে পড়ে। আরও ক্ষতি হয় মেরিন ড্রাইভের। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কর বলেন, ‘‘সকাল থেকে সমুদ্রের জল ঢুকে গোটা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি আরও গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ জামড়া গ্রামে রাস্তার ধারে বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢেউয়ের সঙ্গে আসা পাথর, নোনা বালি আর কংক্রিটের খুঁটির ধাক্কায় বহু বাড়িরই বিপজ্জনক দশা। গ্রামবাসী সিদ্ধেশ্বর জানা বলছিলেন, ‘‘আমপানে মাটির বাড়ির অনেকটাই ভেঙেছিল। সরকারি সহযোগিতা পাইনি। এক বছরের মাথায় ঘূর্ণিঝড় আসার আগে এ বার জলোচ্ছ্বাসে গিলে খেল বাড়িটাকে।’’

উপকূল থেকে এ দিন বাসিন্দারা গিয়ে উঠেছেন আশ্রয় শিবিরে। দিনভরই চলেছে ঘর ছাড়ার আগে জরুরি জিনিসপত্র গোছানোর পালা। চালের বস্তা কাঁখে ত্রাণ শিবিরের পথে এক মহিলার আশঙ্কা, ‘‘বাড়িটা বোধহয় আর থাকবে না। যেটুকু যা আছে, সব সরিয়ে নেব সন্ধের জোয়ারের আগে।’’

এ দিন সকাল থেকে দিঘা মোহনা সংলগ্ন একাধিক গ্রামে সাইরেন বাজিয়ে সচেতনতা প্রচার চালান এনডিআরএফের কর্মীরা। কাঁচা বাড়ি এবং নিচু এলাকায় পাকা বাড়ি রয়েছে যাঁদের, তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াই ছিল লক্ষ্য। তবে দিনের অনেকটা সময় আকাশ কিছুটা পরিষ্কার থাকায় অনেকেই গোড়ায় বাড়ি ছাড়তে রাজি হননি। পরে অবশ্য ধীরে ধীরে বেশিরভাগ উপকূলবাসীই সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছেছেন বলে এনডিআরএফ সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE