(বাঁ দিকে) শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে) । —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটগণনার আগের সন্ধ্যায় নতুন বিতর্ক তৈরি করে দিলেন তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। নির্বাচন পর্বে এত মৃত্যু কেন, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি ফের পথে নামার কথাও শোনালেন। বললেন, ‘‘দেশের কোথাও ভোটে এমন হিংসা হয় না। গণতন্ত্রের উৎসবে কেন এত মৃত্যু! আমাদের রাজ্যের এই সংস্কৃতির বদল দরকার। সময় এসে গিয়েছে, মুক্তমনা ও বুদ্ধিজীবী মানুষদের একত্রিত হয়ে ফের পথে নামা। এই বাংলা মনীষীদের পীঠস্থান। সবার কাছে আমরা আহ্বান করতে পারি। আগে যেমন মিছিল করেছিলাম, তেমন ভাবেই আবার মিছিল করব।’’
সাম্প্রতিক কালে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই ‘পানি’ বনাম ‘জল’, ‘দাওয়াত’ বনাম ‘নিমন্ত্রণ’ শব্দ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। এর পরে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ রাজ্য সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে, তাঁর সমর্থন নেই জানিয়ে তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। প্রতি বারই তৃণমূলের পক্ষে তাঁকে জবাব দিয়েছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কখনও কখনও শুভাপ্রসন্নকে সামলাতে ‘অপ্রীতিকর’ পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। শুভাপ্রসন্নের সোমবারের মন্তব্যের পরেও পাল্টা জবাব দিয়েছেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘মাঝেমাঝে ওঁর চুলকোয়। ওর মলম লাগানো দরকার।’’ এর পাশাপাশি কুণালের মন্তব্য, ‘‘ভোটে খুনোখুনি আমরা কেউ চাই না। ৬১ হাজারের বেশি বুথে অবাধ শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে, এটাও শুভাদার জানা উচিত।”
শুভাপ্রসন্নের মতো এতটা কড়া না হলেও অনেকটা একই সুর শোনা গিয়েছে দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এবং বারাসতের বিধায়ক চিরঞ্জিতের মুখে। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত যেমন বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছুটা হলেও নিরপেক্ষ।’’ পাশাপাশি, হুমায়ুনের কথায়, ‘‘এমন ভোট দেখে মাথা হেঁট হয়ে যায়।’’ বামফ্রন্ট জমানা শেষের উদাহরণ তুলে আবার চিরঞ্জিৎ বলেছেন, ‘‘মানুষ ঘুরে গেলে এমন ভাবেও ক্ষমতায় থাকা যায় না।’’
পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোটের দিনের সংঘর্ষের ঘটনা জেরে মৃত্যুর সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১৮। এই পরিস্থিতি নিয়েই আক্ষেপ শুভাপ্রসন্নের। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এমনটা ভারতবর্ষের অন্য কোনও রাজ্যে হয় না। তা হলে বাংলায় কেন? বাংলায় রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, সুভাষ বসুর জন্ম। সেই বাংলা কেন কিছু মানুষের অসংস্কৃত কার্যকলাপে এমন ভাবে পদদলিত হচ্ছে? এখন সময় এসেছে, সরবে মানুষের কাছে বলতে চাই, আমাদের সংস্কৃতির বদল ঘটানো দরকার।” এখানেই না থেমে শিল্পী বলেন, ‘‘২০০৮ মনে আছে? অবস্থার পরিবর্তন হয়নি? আমরা পরিবর্তন চাই, সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। সব মিলেমিশে যার যা করার করে যাচ্ছে। মানুষ নিপীড়িত হচ্ছে, রক্তারক্তি হচ্ছে।’’
শাসকদল রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সন্ত্রাসকে প্রথম থেকেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দেখাতে চেয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে ‘তৃণমূলপন্থী’ শুভাপ্রসন্নের সোমবারের বক্তব্য নিঃসন্দেহে শাসক শিবিরের কাছে অস্বস্তির। এটা ঠিক যে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম পর্বে সিপিএমের বিরুদ্ধে আরও অনেক বিশিষ্টজনের সঙ্গে পথে নেমেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। ‘পরিবর্তন’ চেয়ে মিছিল করেছিলেন। আবার বদলের জন্য মিছিল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি কি তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চান? সে প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। আবার তাঁর সঙ্গে আর কারা রয়েছেন বা আদৌ রয়েছেন কি না তারও কোনও ইঙ্গিত দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy