Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জীবন দিয়ে দাম চোকাতে হল, আক্ষেপ তরুণীর

দিন পাঁচেক আগে সরস্বতী পুজোর ভাসানের শোভাযাত্রা দেখতে এ ভাবেই পথের ধারে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। সোমবার সন্ধ্যায় সালকিয়ার বিবিবাগানের হৃষীকেশ লেনে যখন দাদার দেহটা এসে পৌঁছল, গোটা এলাকা ভেঙে পড়ার উপক্রম। তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে ওই দুই তরুণী। সে দিন তাঁদেরই সম্ভ্রম রক্ষায় মাতাল যুবকদের অভব্যতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পাড়ার দাদা অরূপ ভাণ্ডারী। দুই মেয়ের এক জন সবে বিএ পড়তে ঢুকেছেন। আর এক জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বয়সে অপেক্ষাকৃত ছোট মেয়েটি কোনও মতে কান্না গিলে বললেন, “অরূপদাকে জীবন দিয়ে দাম দিতে হবে, সত্যিই ভাবতে পারিনি!” পাশে দাঁড়িয়ে তখন সালওয়ারের ওড়নায় ঘন ঘন চোখের জল মুছছেন আর এক জন।

অরূপ ভাণ্ডারী। সোমবার হাওড়ার সালকিয়ায় অরূপের বাড়িতে দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

অরূপ ভাণ্ডারী। সোমবার হাওড়ার সালকিয়ায় অরূপের বাড়িতে দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৯
Share: Save:

দিন পাঁচেক আগে সরস্বতী পুজোর ভাসানের শোভাযাত্রা দেখতে এ ভাবেই পথের ধারে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। সোমবার সন্ধ্যায় সালকিয়ার বিবিবাগানের হৃষীকেশ লেনে যখন দাদার দেহটা এসে পৌঁছল, গোটা এলাকা ভেঙে পড়ার উপক্রম। তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে ওই দুই তরুণী।

সে দিন তাঁদেরই সম্ভ্রম রক্ষায় মাতাল যুবকদের অভব্যতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পাড়ার দাদা অরূপ ভাণ্ডারী। দুই মেয়ের এক জন সবে বিএ পড়তে ঢুকেছেন। আর এক জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বয়সে অপেক্ষাকৃত ছোট মেয়েটি কোনও মতে কান্না গিলে বললেন, “অরূপদাকে জীবন দিয়ে দাম দিতে হবে, সত্যিই ভাবতে পারিনি!” পাশে দাঁড়িয়ে তখন সালওয়ারের ওড়নায় ঘন ঘন চোখের জল মুছছেন আর এক জন।

কোন ঘটনার জেরে এত বড় মূল্য দিতে হল অরূপকে?

অরূপের দেহ তখনও মর্গ থেকে বাড়িতে এসে পৌঁছয়নি। অপেক্ষায় গোটা পাড়া। ভিড়ের মধ্যে মিশেছিলেন ওঁরা দু’জনও। জানালেন, ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন। “মাস কয়েক আগেই সিভিক পুলিশের চাকরি পেয়েছিল অরূপদা। ছোটবেলা থেকে ওই নামেই ডাকতাম।” বলে চললেন দু’জনে, “... আর অরূপদাকে পিটিয়ে খুন করায় যারা অভিযুক্ত সেই শুভম দুবে, আনন্দ প্রসাদ, বরুণ শর্মারা ‘পাড়ার গুন্ডা’ হিসেবে পরিচিত। পেটে মদ পড়লে মেয়েদের সঙ্গে চরম অভব্যতা করত। পাড়ায় সেই ‘সুনাম’ রয়েছে ওদের। তবে এ বার সরস্বতী পুজোর ভাসানের সময়ে যে এতটা বাড়াবাড়ি হবে, তা ভাবতে পারেননি দুই তরুণী।

সে দিন বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে পাড়ার মধ্যেই হৃষীকেশ লেনের এক ধারে কিছু তরুণীর সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন ওঁরা। বললেন, “হঠাৎ করে শুভম, বরুণরা আমাদের গায়ে এসে পড়ল। মুখে মদের গন্ধ গা গুলিয়ে আসছিল। হাত ধরে টানতে শুরু করে ওরা। সঙ্গে অশ্লীল ডাকাডাকি।”

অরূপ ও তাঁর বন্ধু অভিজিৎ না-থাকলে সে-দিন অভিযুক্তরা আরও সাহস পেয়ে যেত, দাবি এক তরুণীর। এর মধ্যেই একটি মেয়ে বললেন, “অরূপদাই ছেলেগুলোকে সরিয়ে দিয়ে বলে, পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে একদম অসভ্যতা করবি না।” কিন্তু এই গোলমালের জের যে শেষমেশ এত দূর গড়াবে তা কেউই আন্দাজ করতে পারেননি।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

শুভম, বরুণদের থেকে বয়সে সামান্য বড় ছিল ২৪ বছরের যুবক অরূপ। পাড়ার পুজোয় সবাই এক সঙ্গে হইচই করলেও অরূপের সামনে সচরাচর কেউ মেয়েদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করার সাহস পেত না, জানিয়েছেন পাড়ার লোকজনই। কিন্তু সে-দিন ভাসানের সময়ে মদ্যপ অবস্থায় কয়েক জন লাগামছাড়া হয়ে ওঠে। অরূপ-অভিজিৎরা প্রতিবাদ করায় তার বদলা নিতে অভিযুক্তেরা মরিয়া হয়ে যায়।

তারা প্রথম যাঁর উপরে চড়াও হয়েছিল, সেই অভিজিৎ বসু বন্ধু অরূপের দেহ আনতে এ দিন সারা ক্ষণ মর্গে পড়েছিলেন। এক বারও কথা বলেননি কারও সঙ্গে।

দিন ভর সাংবাদিকদের বহু প্রশ্নের মুখে শুধু একটাই কথা বললেন, “দোষীদের শাস্তি চাই। পাড়ার কয়েক জন মেয়ের সঙ্গে অসভ্যতার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমার বন্ধুটা শেষ হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE