Advertisement
০৭ মে ২০২৪
শাসকদলের দ্বন্দ্বই নিশানায়

অশোক-হত্যায় অভিযুক্তকে খুন

গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ঠেকাতে দলনেত্রীর কড়া বার্তা আগেই ছিল। তার পরেও কালীঘাটে বৈঠকের ঠিক আগেই শাসকদলের আরও এক কর্মী বলি হলেন বলে অভিযোগ। শনিবার দুপুরে খয়রাশোলের কাঁকরতলায় আততায়ীদের ছোড়া গুলিতে খুন হলেন তৃণমূল কর্মী শেখ সাইফুল (৩৫)।

সাহাপুর ও হজরতপুরের মাঝে ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। শনিবার ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

সাহাপুর ও হজরতপুরের মাঝে ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। শনিবার ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৩৬
Share: Save:

গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ঠেকাতে দলনেত্রীর কড়া বার্তা আগেই ছিল। তার পরেও কালীঘাটে বৈঠকের ঠিক আগেই শাসকদলের আরও এক কর্মী বলি হলেন বলে অভিযোগ।

শনিবার দুপুরে খয়রাশোলের কাঁকরতলায় আততায়ীদের ছোড়া গুলিতে খুন হলেন তৃণমূল কর্মী শেখ সাইফুল (৩৫)। ওই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূল নেতা (প্রাক্তন ব্লক সভাপতি) অশোক মুখোপাধ্যায় খুনে অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। প্রকাশ্য না হলেও আড়ালে তৃণমূলের নেতাদের একাংশ মানছেন, গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরেই এই খুন। জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেব।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্থানীয় সাহাপুরের বাসিন্দা শেখ সাইফুল এ দিন দপুর ১টার সময় বাড়ি ফিরছিলেন মোটরবাইকে। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে সাহাপুর ও হজরতপুরের মাঝে ফাঁকা রাস্তায় তাঁকে কাছে থেকে গুলি করে আততায়ীরা। বাঁ কানে গুলি লেগে রাস্তায় ছিটকে পড়েন সাইফুল। কিন্তু কে বা কারা ওঁকে মারল, কত জন দুষ্কৃতী ছিল, তা বলার মতো প্রত্যক্ষদর্শী এখনও পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরে পথচলতি লোক জনের মাধ্যমেই খবর যায় গ্রামে। ছুটে আসেন গ্রামবাসী ও পরিজনেরা। খবর যায় পুলিশের কাছেও।

পুলিশ এলে কিছুটা ক্ষোভের মুখে পড়ে। কেন এ ভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় খুন করা হল, তা নিয়ে উপস্থিত স্থানীয়দের সঙ্গে একপ্রস্ত ধস্তাধস্তি বেঁধে যায়। পুলিশ জনতার মধ্যে হাতাহাতিও হয় বলে খবর। ভাঙে পুলিশের গাড়ির একটি কাঁচ। কোনও মতে দেহ উদ্ধার করে খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে চলে যাচ্ছে দেখে বড় কর্তাদের খবর পাঠায় কাঁকরতলা থানার পুলিশ। পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী।

এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ নাকড়াকোন্দা হাসপাতালে পৌঁছে দেখা যায়, হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হয়েছেন নিহতের আত্মীয় ও গ্রামের লোক জন। পৌছে গিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও। দেহটি রাখা হয়েছে হাসপাতালের একটি স্ট্রেচারে। কিছু ক্ষণের মধ্যে পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠায়। নিহতের ভাই শেখ উজির আলি এবং মামাতো ভাই শেখ সাফিরুলরা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক শত্রুতা থেকেই খুন হয়েছেন সাইফুল। খুনের চক্রীরা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের না তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠীর, সে নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি নিহতের ভাইরা। যদিও খয়রাশোলের ব্লক সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার জন্য দায় চাপিয়েছেন সিপিএমের কাঁধে। অন্য দিকে, অভিযোগ উড়িয়ে খয়রাশোলে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক তপন দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘সম্পূর্ণ ভাবে ওদের নিজেদের দ্বন্দ্বের ফলে এই খুন। পিছনে অবশ্যই কয়লা কারবার। সেটা থেকে দৃষ্টি সরাতেই আমাদের উপর দোষারোপ করা হচ্ছে।’’

এ দিকে, এ দিন রাত পর্যন্ত পরিবার কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে অবৈধ কয়লা নিয়ে তৃণমূলের দুই পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীর বিবাদের জেরেই এই খুন, আড়ালে মানছেন তৃণমূলের একাংশই। ঘটনা হল, ২০১৩ সালে আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন খয়রাশোল ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ। পরের বছর একই সময়ে খুন হয়ে যান তাঁর খুনে মূল অভিযুক্ত তথা দলের আর এক প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়। দুই অশোকের খুন পাল্টা খুনের নেপথ্যে অবৈধ কয়লা কারবারে কার রাশ থাকবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব বলেই পুলিশের একাংশের দাবি। দ্বিতীয় অশোক খুনে অন্যতম অভিযুক্ত সাইফুলের হত্যাও তার থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং জেলা পুলিশেরই একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news ashok mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE