Advertisement
E-Paper

বিজেপিতে যাব, ফের গোলন্দাজ আসিফ

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে তাঁকে বলেছিলেন ‘ডাকাতরানি’। এ বার মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের শাসক দলের বিরোধিতায় বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার হুমকি দিলেন আসিফ খান। বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে ওই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাঁর কথা হয়েছে বলে আসিফ বৃহস্পতিবার দাবি করেন। বারাসত আদালত-চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “জেল থেকে ছাড়া পেয়েই আমি নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের রথে সওয়ার হবো। এ রাজ্যে বিজেপি-ই মানুষের আশা পূরণ করবে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৮
বারাসত আদালতে আসিফ খান। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।

বারাসত আদালতে আসিফ খান। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে তাঁকে বলেছিলেন ‘ডাকাতরানি’। এ বার মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের শাসক দলের বিরোধিতায় বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার হুমকি দিলেন আসিফ খান।

বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে ওই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাঁর কথা হয়েছে বলে আসিফ বৃহস্পতিবার দাবি করেন। বারাসত আদালত-চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “জেল থেকে ছাড়া পেয়েই আমি নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের রথে সওয়ার হবো। এ রাজ্যে বিজেপি-ই মানুষের আশা পূরণ করবে।”

তিনি কি এখন বেকায়দায় পড়েই বিজেপিতে যেতে চাইছেন?

জবাব দিতে গিয়ে ফের গোলন্দাজের ভূমিকা নেন আসিফ। তিনি বলেন, “আমি বেকায়দায় পড়িনি। জেল থেকে বেরিয়ে এমন সব তথ্য বার করব, তখন দেখা যাবে, কে বেকায়দায় পড়েছে!” তার পরেই বিজেপি-তে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন তিনি এবং যথারীতি তোপ দাগেন রাজ্যের শাসক দলের দিকে। বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের আশাভঙ্গ করেছে। এই অবস্থায় একমাত্র বিজেপি-ই এ রাজ্যের উন্নয়ন করতে পারে।”

হুঙ্কার ও হুমকির ঢঙের দিক থেকে সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত কুণাল ঘোষের সঙ্গে আসিফের মিল পাওয়া যাচ্ছে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি তো কুণাল ঘোষের পথেই চলছেন। এ বার কি আত্মহত্যার হুমকি দেবেন? জেলে ঘুমের বড়ি খাবেন না তো?

‘‘উনি (কুণাল) তো পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য এ-সব করেছেন। আমি তো পাপ করিনি। আমি তো এ বার খেলা দেখানো শুরু করব,” জবাব আসিফের।

রাজ্যের শাসক দলের নেত্রানেত্রীদের কাঠগড়ায় তুলে আসিফ যে বিজেপি-তে ঢুকতে চাইছেন, সেই বিষয়ে কী বলছে কেন্দ্রের শাসক দল?

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন বলেন, “ওঁর ভাবাবেগকে সম্মান করি। কিন্তু উনি অভিযোগমুক্ত না-হওয়া পর্যন্ত এই নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই।” একই কথা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের। তিনিও মনে করেন, আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত না-হলে এই নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আর বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “পুলিশি হেফাজতে আসিফ কোন পরিস্থিতিতে, কী উদ্দেশ্যে, ঠিক কী বলেছেন, জানি না। ঠিক সময়ে ওঁর বক্তব্য ভেবে দেখা হবে।”

আসিফের নতুন দলে ঢোকার ইচ্ছের ব্যাপারে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূলেরই এক শীর্ষ নেতা বলেন, “যিনি আমাদের দলে নেই, তাঁকে নিয়ে আমরা কথা বলব কেন?”

আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ আছে আসিফের বিরুদ্ধে। সেই আসিফই সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে মমতা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভূমিকা আছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলে আসছেন। ঠিক কুণালের মতোই। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র জেরার মুখে পড়েই আভাসে-ইঙ্গিতে এই বিষয়ে প্রথম মুখ খোলেন তিনি। এবং তখনই তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আসিফ। আর প্রতারণার অভিযোগে মমতার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার পরেই মুখের আগল একেবারে খুলে দিয়েছেন একদা উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক-পদে থাকা এই নেতা। সুযোগ পেলেই মমতা, মুকুল রায় প্রমুখের দিকে গোলা দাগতে কসুর করছেন না তিনি। এ দিন বারাসত আদালতে আসিফকে পাওয়া গেল তেমনই বিস্ফোরক ভূমিকায়।

সোমবার বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের সঙ্গে তদন্তের প্রয়োজনে উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার পথে মুখ খুলেছিলেন আসিফ। বিমানবন্দরে হেঁটে যেতে যেতে তখনই সারদা কেলেঙ্কারিতে টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে ‘ডাকাতরানি’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। তার পরে পুলিশ অবশ্য আসিফকে সংবাদমাধ্যমের সামনে খুব একটা মুখ খোলার সুযোগ দেয়নি। বুধবার রাতে বিমানবন্দরে আসিফকে নিয়ে ফেরার পথে তাঁর কাছে কাউকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। এ দিন বারাসত আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়েও পুলিশি বেষ্টনীতে থাকা আসিফের কাছে যাওয়ার উপায় ছিল না সংবাদমাধ্যমের। কিন্তু চিৎকার করে সাংবাদিকদের ডাকতে থাকেন খোদ আসিফই। বলেন, “এজলাসে ঢুকেই মুখ খুলব।”

বারাসত আদালতের এজলাসে জালে ঘেরা লক-আপে দাঁড়ানোর পরে আসিফকে দমাতে পারেনি পুলিশ। আদালতকক্ষে দাঁড়িয়েই তিনি ফের মুকুল-মমতাদের ভূমিকা নিয়ে মুখ খুলেছেন।

এ দিন আদালতে খোশ মেজাজেই ছিলেন আসিফ। এজলাসের মধ্যে কখনও হাঁটছেন তো কখনও হাসছেন। আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন দে এবং শান্তময় বসু বলেন, “উত্তরপ্রদেশে আসিফকে নিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ অনেক তথ্য পেয়েছে। রাজারাম শরাফের কাছ থেকে পাওয়া আট কোটি টাকার অনেকটাই আসিফ পাঠিয়ে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের এক ব্যক্তির কাছে। ওই টাকায় সেই ব্যক্তি বেশ কিছু জমি কিনেছেন। সেই জমির কাগজপত্রও উদ্ধার হয়েছে।” এর পরেই আসিফকে আরও দু’দিনের জন্য পুলিশি হাজতে নেওয়ার আবেদন জানান সরকারি আইনজীবী। শান্তময়বাবু বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের ওই ব্যক্তি ছাড়াও ওড়িশার এক জনের কাছে রাজারামের টাকা পাঠিয়েছেন আসিফ। সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সমস্ত তথ্য উদ্ধারের জন্যই অভিযুক্তকে আরও দু’দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ চাওয়া হচ্ছে।”

আসিফের আইনজীবী লোকেশ শর্মা আদালতে জানান, বিধাননগর পুলিশ ১২ দিন ধরে তাঁর মক্কেলকে আটকে রেখে ১২ টাকাও উদ্ধার করতে পারেনি। সুপ্রিম কোর্টে এই রাজ্য পুলিশই আবেদন করেছিল, আদালতের অনুমতি ছাড়া আসিফ যেন রাজ্যের বাইরে না-যান। কিন্তু বিধাননগর পুলিশই আদালতের অনুমতি ছাড়া আসিফকে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে গিয়েছে। পরে লোকেশবাবু বলেন, ‘‘আদালত অবমাননার দায়ে আমরা বিধাননগর কমিশনারেটের বিরুদ্ধে মামলা করছি।’’ আসিফকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এডুইন লেপচা।

এ দিনও বেনিয়াপুকুর থানার ১০ নম্বর তালবাগান লেনে আসিফের বাড়িতে হানা দেয় বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। বারাসত আদালতে আসিফের স্ত্রী তবস্সুমা বলেন, ‘‘পুলিশ আজ সকালেও বাড়ি এসেছিল। যা ইচ্ছে তা-ই লিখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জানি না, আর কত ভাবে আমাদের হেনস্থা করা হবে!’’

saradha scam asif khan tmc join BJP vote mamata banerjee state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy