বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে উত্তাপ বাড়তে থাকায় এ বার তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বিজেপি-শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাঁর বক্তব্যে ‘বাঙালি বিদ্বেষ’ ছিল না। বাংলাদেশি, মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার অভিযান যে তাঁরা চালিয়ে যাবেন, সে কথাই তিনি বলেছিলেন। হিমন্তের মতে, তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করে বাংলায় রাজনীতি করছে তৃণমূল কংগ্রেস। অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন করে এ রাজ্যের শাসক দলকে তোপ দেগেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
জনগণনার নথিতে মাতৃভাষা বাংলা উল্লেখ করলেই অসমে ‘বিদেশি’র সংখ্যা বোঝা যাবে, হিমন্তের এমন মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেও ‘মুসলিম’দের আলাদা করে চিহ্নিত করতে ছাড়েননি অসমের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, বাংলাভাষী-সহ অসমের সব বাসিন্দাই মুসলিম অনুপ্রবেশ নিয়ে তাঁদের অবস্থান জানেন ও সমর্থন করেন। হিমন্তের পক্ষে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর সংযোজন, বাংলায় তৃণমূল এই অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থনেই টিকে আছে!
হিমন্ত-শুভেন্দুদের এমন দাবিতে অবশ্য বাংলায় রাজনৈতিক প্রতিবাদ স্তিমিত হচ্ছে না। বিজেপি-শাসিত দিল্লি, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, অসম-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার প্রতিবাদে আজ, বুধবার শহরে মিছিল করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে একই বিষয়কে সামনে রেখে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যাদবপুর ৮-বি থেকে রামগড় পর্যন্ত মিছিল করেছে সিপিএম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষুদিরাম বসু, সূর্য সেনদের ছবি হাতে মিছিল থেকে আওয়াজ তোলা হয়েছে, বাংলাভাষীদের কেন হেনস্থা, তার জবাব দিতে হবে বিজেপি-আরএসএস’কে। মিছিলে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, দলের কেন্দ্রীয় কমটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দুই সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, রতন বাগচী প্রমুখ। সেলিম বলেছেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বিভাজনের রাজনীতির চাষ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কাল মিছিল করবেন। কিন্তু ওঁর পুলিশ কোচবিহারে গিয়ে অসম সরকারের হয়ে এনআরসি’র নোটিস ধরাচ্ছে এ রাজ্যের নাগরিককে, উনি জানতেন না?’’ সিপিএমের অভিযোগ, বাংলাদেশি-রাজনীতিতে আক্রান্ত হচ্ছেম গরিব মানুষ।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘দেশ জুড়ে ভাষাকে কেন্দ্র করে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রে হিন্দি- মরাঠি সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি? তা হলে তামিলভাষীরা সকলেই শ্রীলঙ্কার বাসিন্দা? ভারতে বসবাসকারী পাঞ্জাবিদের কি পাকিস্তানি বলা হবে?’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘হেমন্ত, শুভেন্দুরা বিদ্বেষ আর বিভাজনের রাজনীতি করছেন। বাংলায় রাজনৈতিক প্রত্যাখ্যানের কারণে এটা তাঁদের প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু নয়।’’ আর সিপিএমের সুজন বলেছেন, ‘‘বিজেপি এমন একটা বল দিয়েছিল, যাতে তৃণমূল বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে পারে। কিন্তু একেবারে লোপ্পা ফুলটস হয়ে গিয়েছে দেখে হিমন্তেরা এখন নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন! আরএসএস-বিজেপির বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষ নিয়ে সংশয় নেই।’’
বাংলাভাষীদের নিগ্রহ-প্রশ্নে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
মমতার পথে নামার প্রেক্ষিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ওয়াকফের প্রতিবাদে আন্দোলন করতে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যেতে বলেছিলেন। তা হলে এখন এখানে কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে বলছেন তিনি? কেন ওড়িশা, মহারাষ্ট্র বা দিল্লি যাচ্ছেন না?’’ বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগে এ দিনই দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে যদুবাবুর বাজার মোড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। সেই সঙ্গেই জেলা কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের বক্তব্য, “নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। রুটি-রুজির খোঁজে রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীরা পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হচ্ছেন।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)