E-Paper

উঠল মতুয়া-অনশন, দাবি নিয়ে বিজেপি বাদে এক সুরে সবাই

এসআইআর-এ যাতে মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাম যাতে বাদ না-যায়, মতুয়াদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার মতো বিভিন্ন দাবিতে ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল অনশন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৫৬
৫ নভেম্বর থেকে বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে আমরণ অনশন শুরু করেন তৃণমূল সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের অনুগামী মতুয়ারা।

৫ নভেম্বর থেকে বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে আমরণ অনশন শুরু করেন তৃণমূল সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের অনুগামী মতুয়ারা। ছবি: সংগৃহীত।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রেক্ষিতে নাগরিকত্ব এবং ভোটাধিকারের প্রশ্নকে সামনে রেখে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের ডাকে যে অনশন চলছিল, অবশেষে সোমবার ১৩ দিনের মাথায় তা উঠল। এই অনশন-পর্বে মতুয়াদের পাশে দাঁড়াতে বিজেপিকে দূরে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্বকে বার বার দেখা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে একে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।

এসআইআর-এ যাতে মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাম যাতে বাদ না-যায়, মতুয়াদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার মতো বিভিন্ন দাবিতে ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল অনশন। অনশন-আয়োজক সংগঠনের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুরের সঙ্গে শনিবার ফোনে কথা হয়েছিল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, স্নেহাশিস চক্রবর্তীদের হাত দিয়ে রবিবার চিঠিও পাঠিয়েছিলেন অভিষেক। মতুয়াদের পাশে থাকার পাশাপাশি অনশন তোলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। শেষমেশ এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ অনশন মঞ্চে ফলের রস পান করে অনশন-ভঙ্গ করেন মমতা ঠাকুর। পরে তাঁকে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মমতা বলেছেন, “অভিষেক-সহ বিভিন্ন দলের নেতারা কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন। সবাইকে ধন্যবাদ। আমরা এসআইআর-এর বিরুদ্ধে নই। কিন্তু বৈধ ভোটারদের নাম কাটা চলবে না। কমিশন আধার কার্ডকে মান্যতা দিক।” অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশচন্দ্র চৌধুরীও জানিয়েছেন, তাঁদের দাবিগুলি নিয়ে দিল্লিতে কর্মসূচি করার আশ্বাস দিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।

অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে এ দিন ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। মতুয়াদের দাবি তাঁরা বরাবরই সমর্থন করেছেন জানিয়েও তাঁদের সমস্যার জন্য বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষকেই নিশানা করে সুজন বলেছেন, “মতুয়ারা চাইছিলেন অভিষেকরা আসুন। ১২ দিনের মাথায় বার্তা দিয়েছেন। তাতে কাজ হয় না। তা হলে আগেই অনশন উঠত। মতুয়াদের সমস্যা ২০০৩-এর নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীকে কেন্দ্র করে। তখন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বিজেপি, তৃণমূল দায়িত্ব এড়াতে পারে না।” এ দিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের চিঠি নিয়ে দলের নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, ইন্দ্রাণী দত্ত চট্টোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর বার্তা নিয়ে দলের মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি মনোজ চক্রবর্তীরা অনশন-মঞ্চে গিয়েছিলেন। মতুয়াদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে শুভঙ্কর বলেছেন, “কংগ্রেস আমলে মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু এই এলাকা থেকে নির্বাচিত কয়েক জন জনপ্রতিনিধি মতুয়াদের নাগরিকত্বের জন্য এখন সিএএ-র ফর্ম পূরণ করতে বলছেন।”

মতুয়া-সমস্যার কারণ নিয়ে বিভিন্ন দলের নানা মত থাকলেও, তাঁদের দাবিদাওয়াকে কেন্দ্র করে অনশন-মঞ্চে বিজেপি বাদে তিনটি প্রধান দলের উপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই অনেকে মনে করছেন। যদিও এমন ‘ঐক্য’ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন বড় মা’কে মতুয়াদের জন্য সিএএ করার কথা দিয়েছিলেন, তখন মমতা ঠাকুর বড় মা’র পাশে বসে ছবি তুলেছিলেন। এখন উনি অনশন না-করে সিএএ ফর্ম পূরণ করুন। সিপিএম, কংগ্রেস তো দিগ্‌ভ্রান্ত। তারা খোলাখুলি তৃণমূলের বি-টিম হিসাবে কাজ করুক।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hunger strike Matua Community

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy