Advertisement
E-Paper

ক্ষীণদৃষ্টি ছাত্রীকে ফের ডাক স্কুলের

কাদাকুলি-বাউরিপাড়ায় স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়ে মঙ্গলাকে নিয়ে বাস জগন্নাথ সাঁতরার। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় মেয়ের চোখে সমস্যা দেখা দিতে হাসপাতালে-হাসপাতালে ছুটেছেন। কিন্তু চোখ ঠিক হয়নি। বাঁকুড়া মেডিক্যাল মঙ্গলাকে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র দেয়।

শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৯
জেদ: এভাবেই চলে লেখাপড়া। —নিজস্ব চিত্র।

জেদ: এভাবেই চলে লেখাপড়া। —নিজস্ব চিত্র।

চোখের খুব কাছে বই এনে আতসকাচ ধরলে, তবেই পড়তে পারে মেয়েটি। কষ্ট হয়। কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে স্বাবলম্বী হতে চায় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রিকশাচালকের মেয়ে মঙ্গলা সাঁতরা। যদিও একই ক্লাসে দু’বার ফেল করায় তাকে তার স্কুলের প্রধানশিক্ষক স্কুল ছেড়ে দিতে বলেন বলে অভিযোগ।

তবে মঙ্গলার পড়তে চাওয়ার জেদের কথা তার বাবা প্রশাসনকে জানান। প্রশাসনের নড়াচড়ায় টনক নড়ে স্কুলের। শনিবার বছর আঠারোর ওই মেয়েটির বাড়ি গিয়ে তাকে বুধবার থেকে ফের স্কুলে আসতে বলে এসেছেন শিক্ষকেরা।

কাদাকুলি-বাউরিপাড়ায় স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়ে মঙ্গলাকে নিয়ে বাস জগন্নাথ সাঁতরার। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় মেয়ের চোখে সমস্যা দেখা দিতে হাসপাতালে-হাসপাতালে ছুটেছেন। কিন্তু চোখ ঠিক হয়নি। বাঁকুড়া মেডিক্যাল মঙ্গলাকে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র দেয়।

কষ্ট হলেও পড়া ছাড়েনি মঙ্গলা। বাঁকুড়া মেডিক্যালের চক্ষু বিভাগের প্রধান বিশ্বরূপ রায় বলেন, ‘‘একশো শতাংশ প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে সামান্য দেখার ক্ষমতা থেকে যায়। তবে আতসকাচ দিয়ে পড়াশোনা চালানো কম কষ্টের নয়।’’ জগন্নাথবাবুর ক্ষোভ, ‘‘এত কষ্ট করে পড়ছে যে মেয়ে, সে নবম শ্রেণিতে দু’বার ফেল করায় গত ডিসেম্বরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ওকে আর স্কুলে রাখবেন না। তার পর থেকে মেয়ে স্কুলে যায়নি।’’

মঙ্গলার কথায়, ‘‘সে দিন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। হেডস্যারকে বলেছিলাম, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। এ বার পাশ করবই।’’ তাতে লাভ হয়নি। মঙ্গলা অবশ্য বই-খাতা ছাড়েনি। রোজ সকাল-বিকেল মিলিয়ে ঘণ্টা দু’য়েক করে নিজের মতো পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। জগন্নাথবাবুর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, ক’টা দিন গেলে ওর পড়ার নেশা কাটবে। কিন্তু ও বারবার আমাকে বলত, ‘দেখো না, কী ভাবে আমাকে স্কুলে ফেরানো যায়’।’’

মেয়ের চাপাচাপিতেই শুক্রবার তিনি স্কুলে যান। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের দেখা পাননি। পরে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিষ্ণুপুরের মহকুমা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস, মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে মেয়েকে স্কুলে ফেরানোর আর্জি জানান। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েদের পড়াশোনার জন্য কি না করছেন? সেখানে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে তাড়িয়ে দিলেন!’’ ঘটনা জেনে বাঁকুড়া জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় ও মহকুমা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নৃপেন মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্কুলের এই নির্দেশ দেওয়ার অধিকার নেই।’’ এর পরেই নড়াচড়া শুরু করে প্রশাসন।

শনিবার সকালে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজয় হেমব্রম মঙ্গলাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করার কথা মানতে চাননি। যদিও পরে তিনি ফোন করে বলেন, ‘‘মঙ্গলার বাড়িতে গিয়ে আমরা ওকে বুধবার থেকে স্কুলে আসতে বলেছি।’’ কিন্তু এত দিন কেন সে উদ্যোগ দেখা গেল না? স্কুলের পরিচালন সমিতির সহ-সভাপতি রেভারেন্ড পঙ্কজ পান্ডে বলেন, ‘‘মানবিকতার দিক থেকে খারাপ ঘটনা। নিশ্চয় খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

স্কুলের সিদ্ধান্তে মুখে হাসি। মঙ্গলা বলে, ‘‘জানতাম, ওরা আমাকে ফিরিয়ে নেবে।’’

Student Miopic School Administration মঙ্গলা সাঁতরা Magnifying Glass
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy