একলক্ষ্মী গ্রামের পুলিশ ক্যাম্পে ভাঙচুরের পরে। —নিজস্ব চিত্র।
রাতে ম্যাটাডরে বেশ কিছু গরু নিয়ে যেতে দেখে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। চোর সন্দেহে পাঁচ জনকে আটকে রেখে মারধরও শুরু করেন তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ ওই পাঁচ জনকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপরেই পুলিশের গাড়ি ও ক্যাম্প ভাঙচুর করে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। চার জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ। সোমবার রাতে মাধবডিহি থানার একলক্ষ্মী গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। পরে ছয় গ্রামবাসীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
একলক্ষী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর নদী। নদীর উল্টো দিকে রয়েছে বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার পালান, লাউগ্রাম, তারকবেড়িয়া-সহ নানা গ্রাম। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব গ্রামে গত ২০ দিন ধরে গরু চুরির অভিযোগ উঠছে। চুরি আটকাতে শীতের রাতে গ্রাম পাহারার ব্যবস্থাও করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। এর মধ্যেই সোমবার রাত ৯টা নাগাদ ম্যাটাডরে করে ১২টি গরু নিয়ে হাটে যাচ্ছিলেন বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকার পাঁচ ব্যবসায়ী। পাহারা দেওয়া বাসিন্দারা দেখতে পান, গাড়িতে করে একদল লোক গরু নিয়ে যাচ্ছে। গরু চুরি যাচ্ছে বলে সন্দেহ করেন তাঁরা। চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে বাঁকুড়ার প্রান্তের ওই বাসিন্দারা গাড়িটিকে ধাওয়া করেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে দ্বারকেশ্বর নদীর উপর তৈরি হওয়া নতুন সেতু ধরে একলক্ষী গ্রামে চলে আসে ম্যাটাডরটি। ততক্ষণে অবশ্য বাঁকুড়া থেকে ফোনে খবর পৌঁছেছে একলক্ষী গ্রামে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফোনে খবর পাওয়ার পরেই একলক্ষী বাজার এলাকায় প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে যান। গরু ভর্তি ম্যাটাডরটি বাজারে পৌঁছতেই আটকে ফেলা হয়। এরপরে ওই পাঁচ গরু ব্যবসায়ীকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে এলোপাথারি মারধর শুরু হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে কাছেই ক্যাম্প থেকে পুলিশ কর্মীরা গিয়ে ওই গরু ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসেন। তবে পিছু ছাড়েন না গ্রামবাসীরাও। পুলিশ ক্যাম্পের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে তাঁরা বলতে থাকেন, ‘ওই ৫ জন গরু চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছিল, ওঁদের আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে। বিচার আমরাই করব।’ কিন্তু পুলিশ ওই পাঁচ জনকে না ছাড়ায় গ্রামবাসীরা ক্যাম্পের উপর চড়াও হন। ক্যাম্প লক্ষ্য করে কয়েকজন ইট ছুঁড়তে থাকেন বলেও অভিযোগ। আরেক দল পুলিশ ক্যাম্পের কোলাপসিবল গেট, দরজা-জানলা ভাঙচুর করেন। বাধা দিতে গেলে এক পুলিশ কর্মীকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
এরপরে পুলিশের বাধা টপকে ক্যাম্পের ভিতর ঢুকে এক ব্যবসায়ীকে ছিনিয়ে বের করে নেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করতে গেলে জিপ ভাঙচুর করা হয়। পরে বর্ধমান দক্ষিণের সিআই ও মাধবডিহি থানার ওসি বিশাল বাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনেন। ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মাধবডিহি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ছ’জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। ধৃতদের মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে তোলা হলে খোকন দত্ত, প্রশান্ত সরকারের দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকিদের ১৪দিন জেল হেফাজত হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার ভোরেই দু’জন গরু ব্যবসায়ীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জখম গোপীকৃষ্ণ রায়ের বাড়ি বাঁকুড়া জেলার কোতলপুরে ও আর এক জন প্রণব দুলে বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ দিন তাঁরা বলেন, ‘‘সোমবার পুরুলিয়া থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে ১২টি গরু কিনে কোতলপুরের হাটে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ইন্দাসের কাছ থেকে কয়েকজন গরু চোর বলে তাড়া করে। নদী পেরিয়ে একলক্ষী বাজারে কাছে আমাদের আটকায়, তাঁরা আমাদের কথা শোনার আগেই মারধর শুরু করে দেয়।” গরুর পাইকারি ব্যবসার চালান কাছে ছিল বলেও তাঁদের দাবি। এসডিপিও (বর্ধমান সদর) কার্তিক মণ্ডল জানিয়েছেন, খওঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে ওই পাঁচ জন গরু ব্যবসায়ী। তাঁদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy