E-Paper

সংঘর্ষের প্রতি মুহূর্তের খবরে নজর? মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত ডাক্তারদের

ক্রমাগত এই অনিশ্চয়তা নিয়ে ভাবনা থেকেই মনের মধ্যে আতঙ্ক বা ভয় তৈরি হচ্ছে। সেটা হয়তো অনেকে বুঝেও উঠতে পারছেন না।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ০৮:৫৯
সত্যিই কি গোলাগুলি, বিস্ফোরণ বন্ধ হল?

সত্যিই কি গোলাগুলি, বিস্ফোরণ বন্ধ হল? —প্রতীকী চিত্র।

বিকেলে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা হলেও, রাতে ফের আক্রমণ চালিয়েছিল পাকিস্তান। যদিও শনিবার রাতের পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আর সংঘর্ষ হয়নি। কিন্তু সত্যিই কি গোলাগুলি, বিস্ফোরণ বন্ধ হল? না কি, আবার শুরু হবে? এই অনিশ্চয়তার উত্তরই খুঁজে চলেছেন বহু মানুষ।

যদিও এই বিষয়টিকে সাধারণ চিন্তা বলে মনে করছেন না মানসিক রোগের চিকিৎসকেরা। বরং তাঁরা জানাচ্ছেন, ক্রমাগত এই অনিশ্চয়তা নিয়ে ভাবনা থেকেই মনের মধ্যে আতঙ্ক বা ভয় তৈরি হচ্ছে। সেটা হয়তো অনেকে বুঝেও উঠতে পারছেন না। কিন্তু প্রায় সারা দিনই সমাজমাধ্যমে বা টিভির পর্দায় চোখ রাখা থেকে রাত জেগে সংঘর্ষের প্রতিনিয়ত আপডেট পাওয়ার প্রবণতা মানসিক উদ্বেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত চিকিৎসকদের।

পহেলগামের ঘটনার প্রত্যুত্তরে আচমকাই ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু হওয়ায়, উত্তেজনার পারদ বেড়েছিল প্রায় সব বয়সিদের মধ্যেই। অনেকেই কার্যত সারা রাত চোখ রেখেছেন সংঘাতের খবরে। শনিবার সংঘর্ষ বিরতির পরেও সেই প্রবণতা কমেছে, তেমনটা নয়। বহু মানুষই জানতে চাইছেন, এর পরে কী? অনেকেই আবার সেটা পরিচিত মহলেও জানাচ্ছেন। কেউ কেউ ছোটদের সঙ্গেও আলোচনা করছেন।

কিন্তু এমন করার প্রয়োজন নেই বলেই মতামত মনোরোগ চিকিৎসকদের। তাঁদের প্রশ্ন, যেটা ঘটছে, সেটা সেই মুহূর্তেই জানতে হবে কেন? মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের কথায়, ‘‘বিভিন্ন সমাজমাধ্যম থেকে খবর জানার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠার দরকার নেই। বরং যাঁরা যুদ্ধ পরিচালনা করছেন, তাঁরা যখন বিবৃতি দেবেন, তখন জানলেই চলবে।’’

মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল জানাচ্ছেন, প্রতিনিয়ত তথ্যের ভার বাড়ছে। তাতে উদ্বেগজনিত রোগে যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের সমস্যা মারাত্মক রকমের বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার যাঁদের সেই প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু প্রকাশ পায়নি, তাঁদের এই সময়ে উদ্বেগজনিত সমস্যা পুরোপুরি শুরু হতে পারে। সুজিত আরও বলেন, ‘‘সংঘাত পরিস্থিতিকে রোমহর্ষক ঘটনা ভেবে উত্তেজনার পারদ বাড়ালে চলবে না। বরং সাধারণ জীবনযাপন করে বাস্তবকে বুঝতে হবে।’’

কিন্তু আদৌ কি সাধারণ মানুষের একাংশ তা বুঝছেন? চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, বেশির ভাগই সেটা বুঝছেন না। বরং সংঘর্ষ বিরতির অনিশ্চিয়তায় ভাবছেন, আবার আচমকা যুদ্ধ শুরু হলে নিত্য ব্যবহৃত সামগ্রীতে টান পড়তে পারে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যুদ্ধের বিপক্ষে কেউ মত প্রকাশ করলেই তিনি কার্যত একঘরে হয়ে পড়ছেন, এটাও মারাত্মক প্রবণতা তৈরি হয়েছে। শুধু প্রাপ্তবয়স্কেরাই নন। সংঘাতের আবহে ছোটদের মনেও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলেও পর্যবেক্ষণ মনোরোগ চিকিৎসকদের।

মনোরোগ চিকিৎসক প্রথমা চৌধুরী বলেন, ‘‘শত্রুপক্ষের ড্রোন নামানো হচ্ছে, তাতে কতিপয় মানুষ উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন। বাড়ির বড়দের সঙ্গে সেটা শিশুও দেখছে। তাতে তার মনে অবশ্যই একটা প্রভাব পড়বে।’’ তাঁর আরও বিশ্লেষণ, এক জন শিশু এ সব দেখার পরে স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রাসনকে স্বাভাবিক মনে করছে। তার জেরে নিজের বন্ধুর সঙ্গে কোনও রকম মনোমালিন্য হলেই তাকে শত্রু ভেবে আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে পারে ওই শিশুটি।

বড়দের মতো ছোটদের মধ্যেও একটা উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে বলে মত অনিরুদ্ধ দেবের। তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চারা ভাবছে, তা হলে যুদ্ধ হলে কি মরে যাব? এই ভাবনা শিশুমনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।’’ আবার সুজিত বলছেন, ‘‘বড়দের থেকে প্রভাবিত হয় বাচ্চারা। কোনও ভাবেই যাতে সেই প্রভাব বাচ্চার মনে ঢুকে না যায়, সে দিকে লক্ষ রাখা বিশেষ জরুরি।’’ তবে তিনি এটাও বলছেন, ‘‘ঘটনা সম্পর্কে বাচ্চাকে অবশ্যই বলব। কিন্তু আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আবেগতাড়িত হয়ে বাচ্চাকে ঘটনা সম্পর্কে ধারণা না দেওয়াই উচিত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Psychology Mental Health

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy