বন্ধ: সিল করা হচ্ছে বনানী নার্সিংহোম। ছবি: সুজিত দুয়ারি
প্রসূতিদের আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন। দরকার আধার কার্ড বা ভোটার কার্ডের মতো সচিত্র পরিচয়পত্র। সেই সব কাগজপত্র বনানী নার্সিংহোম থেকেই জোগাড় করে দিত কর্তৃপক্ষ। তবে নথিপত্র হত ভুয়ো।
শিশু বিক্রি কাণ্ডের তদন্তে নেমে এমনই তথ্য জানতে পেরেছে হাবড়া থানার পুলিশ। যে সব অবিবাহিত তরুণী বা বিধবা মহিলা গর্ভপাতের জন্য আসতেন, তাঁদেরই পরিচিত প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে পাঠানো হত নার্সিংহোম থেকে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বনানী নার্সিংহোমে গর্ভপাত করাতে আসা মহিলাদের আলট্রাসনোগ্রাফি করিয়ে ভ্রূণের অবস্থান জেনে নেওয়া হত। জানা হত ভ্রূণের লিঙ্গও। যা পুরোপুরি বেআইনি। যে সব মহিলার পুত্রসন্তান জন্মের সম্ভাবনা, তাদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখাশোনা করা হত। কারণ, বেশি দামে ওই শিশুকে বিক্রির সম্ভাবনা দেখতে পেত নার্সিংহোম।
তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ধৃত হাতুড়ে মনোজ মাধ্যমিক পাশ। আরও কিছু হাতুড়েকে নিয়ে কারবার চালাত সে। দক্ষিণবঙ্গের নানা প্রান্তে ছড়ানো ছিল এজেন্ট। যারা কমিশনের ভিত্তিতে প্রসূতিদের বনানী নার্সিংহোমে গর্ভপাত করাতে পাঠাত। মাঝে মধ্যে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সাইন বোর্ড খুলে রাখত। যাতে এখানে আদৌ কোনও নার্সিংহোম রয়েছে, তা কেউ জানতে না পারে।
যে শিশুটিকে বিক্রির সূত্র ধরে গোটা ঘটনা সামনে এল, সে এখনও হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শিশুটির মায়ের বাড়ি বাগুইআটিতে। তিনি বিধবা। ওই মহিলাকেও আলট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়েছিল। তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ডাক্তারের ভুয়ো প্রেসক্রিপশন ও অন্য এক মহিলার আধার কার্ডের ফটোকপি। ওই মহিলার নামেই শিশুটির মা আলট্রাসনোগ্রাফি করিয়েছিলেন।
কী ভাবে সচিত্র পরিচয়পত্র সংগ্রহ করত মনোজরা?
আরও পড়ুন: আড়াই বছরেও মিলল না অর্থ কমিশনের বরাদ্দ
পুলিশ জানিয়েছে, নার্সিংহোমে আসা মহিলাদের কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ তাঁদের আধার কার্ডের ফটোকপি রেখে দিত। অন্য মহিলাদের তা দেওয়া হত। ভুয়ো আধার কার্ড তৈরির চক্রের সঙ্গেও কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বনানী নার্সিংহোমটি সরকারি ভাবে সিল করে দেওয়া হয়েছে। ডেপুটি সিএমওএইচ স্বপন বিশ্বাসের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা ঘটনার তদন্ত করেছি। নার্সিংহোমের কোনও সরকারি অনুমোদন ছিল না।’’
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ দিন সিআইডির একটি দল হাবড়া থানায় এসে তদন্তের নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। শিশু বিক্রি কাণ্ডের প্রতিবাদে অশোকনগর থানায় স্মারকলিপি দিয়েছে এসইউসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy