২৩ বছর বিবাহিত জীবন কাটিয়ে ফেলেছিলেন এক দম্পতি। রয়েছেন এক ছেলেও। বিয়ের ২৩ বছর পরে স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিয়ে বাতিলের মামলা করেছিলেন স্বামী। বৃহস্পতিবার স্বামীর সেই মামলা খারিজ করে দিল ব্যাঙ্কশালের পরিবার আদালত।
আদালত সূত্রের খবর, ১৯৯৯ সালের ১৫ এপ্রিল জোড়াবাগান থানার নাথের বাগান এলাকার বাসিন্দা, শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের সিভিক ভলান্টিয়ার প্রশান্ত মান্নার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুনীতা মান্নার। সুনীতার মা-বাবার বাড়িও নাথের বাগানে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বিয়ের আগে সুনীতার আরও একটি বিয়ে হয়েছিল এবং সেই বিয়ের সূত্রে তাঁর চার সন্তান রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ২০২২-এর ১২ এপ্রিল পরিবার আদালতে তাঁদের বিয়ে বাতিলের আর্জি জানিয়ে মামলা করেন প্রশান্ত। এ দিন সুনীতার আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হিন্দু বিবাহ আইনে এই মামলা করেছিলেন প্রশান্ত। অতিরিক্ত প্রধান বিচারক সন্দীপকুমার মান্না সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। নিজের অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রশান্ত সুনীতার একটি রেশন কার্ড আদালতে জমা দিয়েছিলেন। তাতে সুনীতার আগের স্বামীর নাম আছে বলে তিনি দাবি করেছিলেন। সেই রেশন কার্ডটি ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়েছে।’’
আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, বিবাহ-বিচ্ছেদ আর বিয়ে বাতিল এক নয়। বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা হামেশাই হয়। কিন্তু ২৩ বছর বিবাহিত জীবন কাটানোর পরে স্বামী বিয়ে বাতিলের মামলা করছেন, এটা নজিরবিহীন। বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং বিয়ে বাতিলের মধ্যে পার্থক্য কী? সুনীতার আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ জানান, বিবাহ-বিচ্ছেদ মানে বিয়ে হয়েছিল। বিচ্ছেদের আগে পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর স্বীকৃতি থাকে। কিন্তু বিয়ে বাতিল হয়ে গেলে স্ত্রী বা স্বামী হিসাবে কোনও স্বীকৃতি থাকে না। সে ক্ষেত্রে বিয়েটিই অবৈধ হয়ে যায়। ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘প্রশান্তের বিয়ে বাতিলের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ায় সুনীতা এখনও তাঁর স্ত্রী। সুনীতাকে মাসিক চার হাজার টাকা করে খোরপোশ দেওয়ার জন্য প্রশান্তকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি, মামলার খরচ বাবদ সুনীতাকে এককালীন পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশান্তকে। সুনীতার পক্ষে তাঁর এবং প্রশান্তের ছেলে-সহ তিন জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।’’
আর সুনীতা জানান, মামলা জেতায় তিনি খুশি। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে স্বামীর আনা সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এখনও আমার শ্বশুরবাড়িতেই রয়েছি। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে আমার স্বামী অন্য এক মহিলার সঙ্গে হাওড়ার সালকিয়ায় থাকছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)