Advertisement
০৫ মে ২০২৪
IIT Kharagpur

ফেরিওয়ালার ছেলে আইআইটি খড়্গপুরে, পড়ার খরচ সামলানোই এখন বড় চিন্তা

সাতসকালে বেরিয়ে পড়েন বাঁকুড়ার বাসিন্দা কানাই কর্মকার। গ্রামের পথে পথে ঘুরে যেটুকু আয় করেন, তাতে কোনওমতে সংসার চলে। সেই ফেরিওয়ালার ছেলে ছোটন জেইই মেইন এবং অ্যাডভান্স-এর বেড়া টপকেছেন।

আইআইটি খড়্গপুরের ক্যাম্পাসে পৌঁছেও চিন্তায় ছোটন কর্মকার (ডান দিকে) এবং তাঁর মা-বাবা।

আইআইটি খড়্গপুরের ক্যাম্পাসে পৌঁছেও চিন্তায় ছোটন কর্মকার (ডান দিকে) এবং তাঁর মা-বাবা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৫৬
Share: Save:

মালা-চুড়ি-ফিতের মতো রকমারি জিনিসপত্র গ্রামেগঞ্জে ফেরি করে সংসার টানেন বাবা। কষ্টেসৃষ্টে সংসার টানলেও ছোট ছেলের পড়ার খরচ জোগাড় হবে কী করে? ইদানীং সে ভাবনাতেই নাভিশ্বাস উঠছে বাঁকুড়ার কর্মকার পরিবারের কর্তার। ছেলে যে আইআইটি খড়্গপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েছে। খরচ তো বড় কম নয়!

সাতসকালেই বাড়ি থেকে মোপেডে চড়ে বেড়িয়ে পড়েন বাঁকুড়ার বাসিন্দা কানাই কর্মকার। গ্রামের পথে পথে ঘুরে যেটুকু আয় করেন, তাতে কোনওমতে সংসার চলে। সেই ফেরিওয়ালার ছেলে ছোটন জেইই মেইন এবং অ্যাডভান্স পরীক্ষার বেড়া টপকে ফেলেছেন। সুযোগ পেয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের মতো নামজাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড নিয়ে পড়াশোনা করবেন তিনি। ৪ বছরের কোর্সের খরচ ১২ লক্ষ টাকা।

ছোটছেলের এই সাফল্যে কর্মকারদের ঘরে খুশির হাওয়া বইলেও আশঙ্কার কালো মেঘও রয়েছে। ছেলের পড়ার খরচ সামলাবেন কী ভাবে, তা ভেবেই ঘুম ছুটেছে কানাই এবং তাঁর স্ত্রী ববিতার। দু’জনের কেউই হাইস্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। সে-ও আর্থিক অনটনের জন্য। মা-বাবার মতো একই দশা হয়েছিল বড় ছেলের। টানাটানির সংসারে তাঁকেও মাঝপথে পড়া ছাড়তে হয়েছে। তবে ছোট ছেলের উপর আশায় বুক বেঁধেছে কর্মকার পরিবার।

ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছোটন। পড়াশোনায় তাঁর আগ্রহ দেখে শত কষ্টেও তাতে বাধা দেননি মা-বাবা। গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিকের পর বাঁকুড়া শহরের একটি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে ভর্তি হন ছোটন। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুরু হয় অন্য লড়াই!

বিক্রিবাটায় হাতে হাত রাখার মাঝে আইআইটি খড়্গপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ঢোকার জন্য কঠোর পরিশ্রমও শুরু করেন ছোটন। তাতে ফলও মেলে। একে একে জেইই মেইন এবং অ্যাডভান্স পরীক্ষার মেধাতালিকায় উপরের দিকে জায়গা করে নেন।

আইআইটি খড়্গপুরে ভর্তির জন্য ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা জোগাড় হবে কী ভাবে? কাউন্সেলিংয়ের ৩৫ হাজার টাকাই বা কী ভাবে হাতে আসবে? এ বার আরও কয়েকটি বাধার মুখোমুখি কর্মকার পরিবার। তবে ছোটনের স্বপ্নপূরণের পথে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকরা থেকে বহু পাড়াপ্রতিবেশী। তাঁদের আর্থিক সহায়তায় আইআইটিতে কাউন্সেলিংয়ের খরচ উঠে গিয়েছে।

খড়্গপুরের ক্যাম্পাসে পৌঁছলেও ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তির লক্ষাধিক টাকা জমা দিতে হবে ছোটনকে। তবে কী ভাবেই সে খরচ জুটবে? উত্তর জানা নেই ছোটনের। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘ভর্তির জন্য অনেক টাকা জোগাড় করা বাকি। সরকারি সাহায্য পেলে ভাল হয়।’’

ছেলের মতো পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কানাইও। যদিও তিনি জানেনই না, ঠিক কত টাকা প্রয়োজন! কানাই বলেন, ‘‘আমরা তেমন লেখাপড়া জানি না। আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে ছেলে। কিন্তু সেখানে পড়ার খরচ কেমন, তা-ই জানি না। পাড়াপ্রতিবেশীরা বলছেন, ‘খরচ অনেক।’ কী ভাবে সে টাকার জোগান দেব, ভাবলেই রাতের ঘুম উড়ে যাচ্ছে।’’ কর্মকারদের সংসারের হাল ধরা ছোটনের মা ববিতার খেদ, ‘‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয় আমাদের।’’ তাঁর আর্জি, ‘‘সরকারি সাহায্য না পেলে ছেলের পড়ার খরচ চালাতে পারব না আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IIT Kharagpur JEE Education bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE