Advertisement
০২ মে ২০২৪
Kali Puja 2021

Kali Puja 2021: ‘মা-ই তো কালী’, বর্গি নেতার শেষ কথা এখনও ফেরে সোনামুখীবাসীর মুখে মুখে

প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে মা-ই-তো কালীর পুজো করে চলেছে সোনামুখী। আজও ওই মন্দিরে গেলে বর্গী হানার রোমহর্ষক কাহিনি মানুষের শোনা যায়।

জাগ্রত কালী হিসেবে প্রসিদ্ধ মা-ই-তো কালী।

জাগ্রত কালী হিসেবে প্রসিদ্ধ মা-ই-তো কালী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১ ২৩:১২
Share: Save:

কথায় আছে ‘কালী কার্তিকে সোনামুখী’। বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো প্রাণের উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও উৎসব বলতে কালী পুজোই বোঝে বাঁকুড়ার প্রাচীন শহর সোনামুখী। প্রায় শতাধিক কালীপুজো হয়ে থাকে ওই শহরে। এদের মধ্যে সব চেয়ে জাগ্রত কালী হিসেবে প্রসিদ্ধ মা-ই-তো কালী। সোনামুখীর এই কালী মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে বাংলার বর্গি আক্রমণের বহু স্মৃতি। কথিত আছে, এক সময় বর্গি হানার হাত থেকে সোনামুখীকে রক্ষা করেছিলেন এই ‘মা-ই-তো কালী’।

নির্দিষ্ট নিয়ম রীতি মেনে পুজো হয় ‘মা-ই-তো কালী’র। পুজোর পর দেবী মূর্তির বিসর্জন হলেও হয় না ঘট বিসর্জন। পরের বছর কালীপুজোর দিন পুরনো ঘট বিসর্জন দিয়ে সে দিনই আবার নতুন ঘট স্থাপন করা হয়। মা-ই-তো কালীপুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ শ্রীকান্ত দে বলেন, ‘‘পুরনো ঐতিহ্য মেনে আজও বিসর্জনের সময় কোচডিহি গ্রামের ৪২ জন বেহারা মন্দির থেকে কাঁধে করে দেবীমূর্তি নিয়ে গোটা সোনামুখী শহর প্রদক্ষিণ করেন। পরে স্থানীয় একটি পুকুরে বিসর্জন করা হয় দেবীমূর্তি।’’

প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে মা-ই-তো কালীর পুজো করে চলেছে সোনামুখী। আজও ওই মন্দিরে গেলে বর্গি হানার রোমহর্ষক কাহিনি শোনা যায়। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ। মরাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতের সৈন্যসামন্তের হানায় তখন তটস্থ গোটা বাংলা। প্রবল পরাক্রমশালী মল্ল সৈন্যবাহিনীর কাছে বাধা পেয়ে তৎকালীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুরে লুটপাটের পরিকল্পনা বাতিল করেছিল বর্গিরা। পরিবর্তে তারা রওনা দেয় সোনামুখীর উদ্দেশে। জনশ্রুতি, বিষ্ণুপুর থেকে এক সন্ধ্যায় বর্গি সেনার দল হা-রে-রে-রে আওয়াজ তুলে সোনামুখী শহরের রানির বাজারে উপস্থিত হয়।

সেই সময় বর্গি সেনারা দেখতে পায়, চারিদিকে গাছপালা ঘেরা একটি মন্দিরের ভিতরে প্রদীপ জ্বলছে। হাঁড়িকাঠের সামনে মাথানত করে প্রণাম করছেন এক বৃদ্ধ পুরোহিত। কথিত আছে, হাতের খড়্গ দিয়ে ওই পুরোহিতকে বলি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন বর্গি সেনাপতি। সেই সময় দৈব শক্তির প্রভাবে তাঁর হাতের খড়্গ আটকে যায়। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন ভাস্কর পণ্ডিত। বাকি বর্গি সেনারা তৎক্ষণাৎ বিষয়টি বুঝতে পেরে সেনাপতির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করতে শুরু করেন। বর্গিসেনাদের অনুরোধেই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছিলেন ভাস্কর। এর পরই মরাঠা সেনা একত্রে চিৎকার করে বলে ওঠেন ‘মা-ই তো মা, কালী হ্যায়’। এই ভাবেই সেদিন রক্ষা পেয়েছিল সোনামুখী।

শ্রীকান্ত বলছেন, ‘‘পুজোর দিন ও তার পরের দু’দিন দূরদুরান্ত থেকে মায়ের মন্দিরে আসেন মানুষ। এই মন্দিরে প্রার্থনা জানালে মা কাউকে ফিরিয়ে দেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2021 bankura festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE