শুরু হয়েছিল পুরুলিয়ায়। এ বার মুকুল রায়ের ছবিসহ ব্যানার দেখা গেল আরও বেশ কয়েকটি জেলায়। মেদিনীপুর, মালদহ, বালুরঘাট শহরের বেশ কিছু স্থানে ফ্লেক্স-ব্যানারে দীপাবলীর শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে হাজির সদ্য তৃণমূলত্যাগী প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। তবে এ বার ওই সব ফ্লেক্স বা ব্যানার কারা লাগিয়েছেন, তাঁদের নাম দেওয়া হয়নি। কারণ, পুরুলিয়ায় যাঁদের নামে ব্যানার লাগানো হয়েছিল ঘটনাচক্রে পুলিশ তাঁদের অন্য অভিযোগে পরের দিনই গ্রেফতার করেছিল। এ বার যে সব ব্যানার বিভিন্ন জেলায় দেখা গিয়েছে সেগুলি দেখতেও প্রায় একরকম। যা প্রমাণ করছে রাজ্যজুড়ে এই ব্যানার-ফ্লেক্স টাঙানোর পিছনে একটি ‘সংগঠিত’ প্রয়াস রয়েছে।
যদিও মুকুল রায় বলেছেন, ‘‘আমি জানি না কে বা কারা এই ফ্লেক্সগুলি লাগিয়েছেন। তবে এটা প্রমাণ হচ্ছে এ সব লাগানোর লোক এখনও জেলায় জেলায় রয়েছেন।’’ তৃণমূলের অবশ্য এ নিয়ে হেলদোল নেই। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার বণিকসভার এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে বলেন, ‘‘কত হাতি গেল তল, মশা বলে কত জল।’’
কিন্তু সেই জলের মাপার কাজই যে হচ্ছে তা পার্থবাবু স্বীকার না করলেও শাসক দলের একাংশ মেনে নিয়েছে। মুকুল রায়ের ছবি, সঙ্গে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ ও দীপাবলীর শুভেচ্ছা জানিয়ে যে সব ফ্লেক্স নজরে এসেছে তা নিয়ে চর্চাও শুরু হয়েছে জেলায় জেলায়। এ দিন ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘ওই সব ফ্লেক্স বিজেপি রাতের অন্ধকারে দিয়েছে। মুকুল রায় বিজেপি-তে গেলে একবিন্দু প্রভাব থাকবে না। ফুলের মালা থেকে যে ফুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাকে কেউ যেমন মনে রাখে না।’’ একই ভাবে মুকুলের ছবি দিয়ে ফ্লেক্স পড়েছে মালদহেও। ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার অবশ্য জানিয়েছেন, পুরসভার অনুমতি না নিয়ে ফ্লেক্স ঝোলানো যায় না। তাই তা খুলে ফেলা হবে। মালদহের মতো উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেও মুকুল রায়ের ছবি দেওয়া ফ্লেক্স লাগানো হবে বলে মুকুল ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করেছেন। যা নাকি তদারকি করছেন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের এক আইনজীবী নেতা। সংগঠনে পছন্দমতো পদ না পেয়ে যিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিক্ষুব্ধ। নাগরিক মঞ্চের আড়ালে আসলে এই ধরনের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতারাই কলকাঠি নাড়ছেন বলে শাসক দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তৃণমূলের খবর, দলের কারা জড়িত রয়েছেন, তা খোঁজ নেওয়াও শুরু হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকেও সতর্ক করা হয়েছে।
শুধু পোস্টার লাগানোই নয়, লক্ষ্মীপুজো থেকে কালীপুজোর মধ্যে তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রী দিল্লি গিয়ে মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। এমনটাই দাবি মুকুল শিবিরের। সে খবর শুনেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও। তিনি বলেন, ‘‘অন্ধকারে যারা ফ্লেক্স লাগায়, বুঝতে হবে দিনের বেলায় তাদের কিছু করার সাহস নেই। যাঁর কথা বলা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের প্রথম সারির নেতা তো দূরের, একজন সক্রিয় কর্মীও নেই।’’
রাজ্যে এ সব যখন চলছে তখন মুকুল রয়েছেন দিল্লিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে তাঁর নিরাপত্তা দেওয়া নিয়েও তৎপরতা চলছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে ও কেন্দ্রীয়
বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়েই তিনি কলকাতায় নামবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি।