Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

টাকা ফেরত না দিতেই কি খুনের ছক

বিকেলে দুই বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন স্বামী। সন্ধে নাগাদ দুঃসংবাদ পান প্রতিবেশীদের কাছে। বাড়ি থেকে ছুটে গিয়ে দেখেন, জিটি রোডের পাশে পড়ে রয়েছে স্বামীর মৃতদেহ। ২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর জামুড়িয়ার বোগড়াচটি ৭ নম্বর গেস্টহাউসের সামনে রাস্তা থেকে উদ্ধার হয় রামসেবক সিংহের (৬০) মৃতদেহ।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

বিকেলে দুই বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন স্বামী। সন্ধে নাগাদ দুঃসংবাদ পান প্রতিবেশীদের কাছে। বাড়ি থেকে ছুটে গিয়ে দেখেন, জিটি রোডের পাশে পড়ে রয়েছে স্বামীর মৃতদেহ।

২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর জামুড়িয়ার বোগড়াচটি ৭ নম্বর গেস্টহাউসের সামনে রাস্তা থেকে উদ্ধার হয় রামসেবক সিংহের (৬০) মৃতদেহ। তাঁর স্ত্রী কিরণদেবী শনাক্ত করেন স্বামীর গুলিবিদ্ধ দেহটি। তেরো বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি এই খুনের মামলায়।

ইসিএলের সাতগ্রাম কোলিয়ারির কর্মী ছিলেন রামসেবকবাবু। তাঁদের আদি বাড়ি উত্তরপ্রদেশে চন্দৌলী জেলার ভিমাগ্রামে। ঘটনার কিছু দিন আগে অবসর নিয়েছিলেন। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সে দিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ স্থানীয় হনুমান মন্দিরে পুজো দিতে যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন দুই বন্ধু দেবু পাসোয়ান ও সরজন দুষাদ। রাত ৮টা নাগাদ কিরণদেবী খবর পান, বাড়ি থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে রাস্তায় পড়ে রয়েছে স্বামীর দেহ। দেবুবাবু ও সরজনবাবুরা জানান, মন্দির থেকে বেরিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। রামসেবকবাবু বাড়ি ফেরেননি, তাঁরা জানতেন না। নিহতের পরিবার অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তদন্তে নেমে মাস দুয়েকের মাথায় গ্রেফতার করা হয় ইদ্রিশ খান নামে এক জনকে। তাকে জেরা করে দু’দিন পরে ধরা হয় মিন্টু রবিদাস নামে আর এক জনকে। এর পরে ২০০৪-এর ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয় চন্দ্রমা যাদবকে। ধৃতদের জেরা করে আরও তিন জনের নাম পায় পুলিশ। সেই তিন অভিযুক্ত বিহারের ছাপরার রাজু সিংহ, ভাগলপুরের হরিকেশ সিংহ ও নয়াদিল্লির সাফরজ খানকে আর পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। ২০০৫ সালের ২০ অগস্ট পুলিশ আদালতে যে চার্জশিট জমা দেয় তাতে ওই ছ’জনকেই খুনের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

পুলিশ জানায়, রাজু ও হরিকেশ ছিল রামসেবকবাবুর বন্ধু। পারিবারিক সূত্রে তাদের সঙ্গে আলাপ। দু’জনকে তিনি মোট প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন। পরে তা ফেরত চান। কিন্তু তারা টাকা ফেরত না দেওয়ায় বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, টাকা শোধ না করে রামসেবকবাবুকে খুনের ছক কষে রাজু ও হরিকেশ। টাকার বিনিময়ে ওই চার জনকে সেই কাজে লাগায় তারা।

পুলিশ জানায়, যে তারিখে টাকা রাজু ও হরিকেশ টাকা ধার নিয়েছিল বলে ধৃতেরা দাবি করেছিল, তার আগের দিন ব্যাঙ্ক থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন রামসেবকবাবু। ধৃতেরা পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণও শুরু হয়নি মামলার।

একমাত্র ছেলেকে নিয়ে কিরণদেবী এখন উত্তরপ্রদেশে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ফোনে তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ প্রথমের দিকে যে তৎপরতা দেখিয়েছিল, পরে তা ঝিমিয়ে পড়ে। জামুড়িয়ায় থাকা নিরাপদ বলে মনে হয়নি, তাই চলে এসেছি। দোষীদের শাস্তি চাই।’’ মূল অভিযুক্তেরা ধরা না পড়ায় বিচার থমকে রয়েছে বলে নিহতের পরিবারের দাবি। পুলিশ অবশ্য জানায়, তিন অভিযুক্তের খোঁজ চালিয়েও কোনও হদিস মেলেনি।

জামুড়িয়ার বোগড়াচটিতে ২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর গুলিতে খুন হন রামসেবক সিংহ (৬০)।

অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পরিবার।

তদন্তে পুলিশ ছ’জনের নাম পায়। গ্রেফতার হয় তিন জন। বাকি তিন জনের হদিস মেলেনি।

আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি এখনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

murder mystery murder Jamuria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE