Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
ঘরে আটকে রাখার নালিশ

লোডশেডিংয়ে চেঁচায় কে, উদ্ধার নাবালিকা

সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ের সময়ে নাবালিকার চিৎকার ভেসে আসায় অবাক হয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। দিন চারেক তালাবন্ধ বাড়ি থেকে চিৎকার করল কে, দেখার জন্য জড়ো হন তাঁরা। একটি খোলা জানলা দিয়ে ভিতরে নজর রাখতেই সবার চোখ কপালে। ঘরের মধ্যে আটকে রয়েছে বছর চোদ্দোর পরিচারিকা।

তালা ভাঙল পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

তালা ভাঙল পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক ও চিত্তরঞ্জন
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ের সময়ে নাবালিকার চিৎকার ভেসে আসায় অবাক হয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। দিন চারেক তালাবন্ধ বাড়ি থেকে চিৎকার করল কে, দেখার জন্য জড়ো হন তাঁরা। একটি খোলা জানলা দিয়ে ভিতরে নজর রাখতেই সবার চোখ কপালে। ঘরের মধ্যে আটকে রয়েছে বছর চোদ্দোর পরিচারিকা।

আসানসোলের চিত্তরঞ্জন রেল কলোনির আবাসনে ওই পরিচারিকাকে আটকে রেখেই বাইরে চলে গিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। শনিবার রাতে প্রতিবেশীদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। বাড়ির কর্তা, আরপিএফের কর্মী মুক্তিপ্রকাশ ঠাকুরের বিরুদ্ধে ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’-এ মামলা রুজু করেছে পুলিশ। রবিবার আসানসোল আদালতে মেয়েটির গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। অভিযুক্তকে গ্রেফতারেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। মুক্তিপ্রকাশবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁরা সে দিন সকালেই বাইরে গিয়েছিলেন। মেয়েটিকে ও ভাবে রেখে যাওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় ছিল না।

প্রতিবেশীরা জানান, চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত মুক্তিপ্রকাশবাবুর বাড়িতে কয়েক বছর ধরে রয়েছে অনাথ ওই নাবালিকা। বাড়ির নানা কাজকর্ম ও মুক্তিপ্রকাশবাবুর শিশুকন্যার দেখভাল করে সে। পড়শিদের দাবি, গত মঙ্গলবার সপরিবারে ওই আরপিএফ কর্মী বাইরে যান। কিন্তু পরিচারিকাকে যে তাঁরা ভিতরে রেখে গিয়েছেন, তা কেউ শনিবার সন্ধের আগে টের পাননি। প্রতিবেশী রামকানাই মণ্ডল বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি, মেয়েটি ভয়ে কাঁপছে।’’

পুলিশ তালা ভেঙে উদ্ধার করার পরে মেয়েটি জানায়, এর আগেও কয়েক বার তাকে এ ভাবে বন্ধ করে রেখে গিয়েছে বাড়ির লোকজন। তবে পর্যাপ্ত খাবারদাবার রেখে যাওয়ায় তার কোনও অসুবিধে হয়নি। কিন্তু আচমকা লোডশেডিংয়ে চার দিক অন্ধকার হয়ে পড়ায় ভয় পেয়ে গিয়েছিল। সে বলে, ‘‘ভয় পেয়ে চিৎকার করেছি। কিন্তু আর কিছু বলব না। মালিক রাগ করবে।’’

পুলিশ নানা সূত্রে জেনেছে, চার বছর আগে ঝাড়খণ্ডের চাইবাসা থেকে এক মহিলা এই বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন মেয়েটিকে। পুলিশ সেই মহিলার খোঁজ করছে। শনিবার মাঝ রাতেই বাড়ি ফেরেন মুক্তিপ্রকাশবাবু। মেয়েটি তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘সকালেই মিহিজাম গিয়েছিলাম। ওকে তালা দিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কারা বাড়ির তালা ভেঙেছে জানি না।’’ তবে রবিবার ভোর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ মেলেনি বলে পুলিশ জানায়। চিত্তরঞ্জন আরপিএফের কমান্ড্যান্ট এস তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমরা গোটা বিষয়ের উপরে নজর রেখেছি।’’

ওই আবাসনটি চিত্তরঞ্জন কাখানার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার ভাইস ওয়ার্ডেন সুরেন্দ্রকুমার ঝা বলেন, ‘‘আমরা সোমবার কমিটির সভা ডেকে পুলিশের কাছে ওই ব্যক্তির শাস্তির দাবি জানাব।’’ বর্ধমান জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শিখা আচার্য জানান, আজ, বিষয়টি নিয়ে সোমবার কমিটির বৈঠক করবেন। ঘটনার নিন্দা করে জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’

এ দিন আসানসোল আদালতে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম অনামিত্রা ভট্টাচার্যের এজলাসে ওই নাবালিকার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। মেয়েটিকে লিলুয়ার সরকারি হোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতা বলেন, ‘‘আমরা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করেছি। তাঁর খোঁজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

house girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE