Advertisement
E-Paper

ডাইনি বলে অপবাদ, ঘরছাড়া ১৭

‘‘একটি পরিবার কয়েকজন দুষ্কৃতীর জন্য তিন বছর ধরে গ্রামের বাইরে রয়েছে ভাবা যায়! ওই সব দুষ্কৃতীর জামিন বাতিল করার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ১৪:০১

তিন বছর ধরে ঘরছাড়া তাঁরা। পরিবারের ১৭ জনের কেউ থাকেন শ্বশুরবাড়িতে, কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে। কয়েকবার গ্রামের ঢোকার চেষ্টা করেও ‘মাতব্বর’দের বাধায় ফিরে যেতে হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। এমনকী, ওই পরিবারের ভাঙা বাড়ি সারাতে গিয়েও স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েছিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার মেমারির কাঁটাডাঙার ওই পরিবারকে নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়।

সুনন্দাদেবীর কথায়, ‘‘একটি পরিবার কয়েকজন দুষ্কৃতীর জন্য তিন বছর ধরে গ্রামের বাইরে রয়েছে ভাবা যায়! ওই সব দুষ্কৃতীর জামিন বাতিল করার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।” আগেও ওই পরিবারকে বাড়ি ফেরানোর জন্য জেলা প্রশাসন এবং কাঁটাডাঙার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। মহিলা কমিশনের সদস্য শিখা আদিত্যও বলেন, “ওই পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। প্রশাসনের কাছে ওই পরিবারের সদস্যদের দ্রুত বাড়ি ফেরানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

ওই পরিবারের বড় ছেলে সোমাই হেমব্রম প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ২০১৪ সালের মার্চে গ্রামের কয়েকজন ‘মাতব্বর’ তাঁদের ডাইনি অপবাদে গ্রামছাড়া করে। ঝাড়খণ্ডের এক ‘জানগুরু’র প্ররোচনায় তাঁদের উপর হামলা চালানো হয় বলেও অভিযোগ। পরিবারের অন্য সদস্যেরাও জানান, ২০১৩ সালের পুজোর পর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের গ্রামে চার জন মারা যান। প্রথমে এক বধূ অসুস্থ হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। কিছু দিন পরে পেটে আঘাত লেগে ও অসুস্থ হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। আর এক জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এরপরেই গ্রামের মাতব্বররা ঝাড়খণ্ড থেকে জানগুরুকে ডেকে আনে। অভিযোগ, ওই গুরু নিদান দেন, সোমাই পরিবারের মধ্যে ডাইন বাসা বেঁধেছে। এরপরেই তাঁদের গ্রামছাড়া করার জন্য নিয়মিত হামলা হতে থাকে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের মার্চে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয় ওই পরিবার। প্রশাসনের কাছে সোমাই হেমব্রম দাবি করেন, তাঁদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে জিনিসপত্র লুঠ করা হয়েছে। বাড়িঘর ভাঙচুরও করা হয়েছে। জমিও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সুনন্দাদেবীরও দাবি, “ওই পরিবারকে গ্রামছাড়া করে বাড়িটা দখল নেওয়ায় উদ্দেশ্য দুষ্কৃতীদের।”

এ দিন জেলাশাসকের দফতরের সামনে সোমাইবাবু বলেন, “আমরা চার ভাই বউ-ছেলে নিয়ে নিজেদের শ্বশুরবাড়িতে আছি। ছেলে-মেয়েদের বাড়ির কাছের সুলতানপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে সাতগেছিয়াতে ভর্তি করাতে হয়েছে। ওদের পড়াশোনা তো বটেই আমাদের কাজও শিকেয় উঠেছে। বাড়িতে কী থাকতে পারব না?” মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল বাগের দাবি, বাসিন্দাদের একাংশ কথা শুনছেন না। তাঁদের বোঝানো হয়েছে।

জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “ওই পরিবারের বাড়ি বিশাল পুলিশ বাহিনী রেখে সংস্কার করা হচ্ছে। আশা করছি, সপ্তাহ খানেকে ওই পরিবারকে ফেরাতে পারব। গ্রামে পুলিশ পিকেটও রাখা হবে।”

Superstition Witch Homeless ডাইনি সুলতানপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy