Advertisement
E-Paper

আরও একটি দেহ ফেরাল ভাগীরথী

নৌকাডুবির দু’দিন পরেও দেহ ফিরিয়ে দিচ্ছে ভাগীরথী। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ঠেকল কুড়িতে। সোমবার দুপুরের পরে আর দেহ না মেলায় ধরে নেওয়া হয়েছিল, উদ্ধার মোটামুটি শেষ। ডুবুরিরাও জানিয়ে দিয়েছিলেন, জলের নীচে কাঠ, বাঁশের টুকরো, পচাগলা কাপড় দেখতে পেলেও আর কোনও দেহের সন্ধান মেলেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০২:১০
কালনা খেয়াঘাটে চলছে উদ্ধার কাজ। নিজস্ব চিত্র।

কালনা খেয়াঘাটে চলছে উদ্ধার কাজ। নিজস্ব চিত্র।

নৌকাডুবির দু’দিন পরেও দেহ ফিরিয়ে দিচ্ছে ভাগীরথী। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ঠেকল কুড়িতে।

সোমবার দুপুরের পরে আর দেহ না মেলায় ধরে নেওয়া হয়েছিল, উদ্ধার মোটামুটি শেষ। ডুবুরিরাও জানিয়ে দিয়েছিলেন, জলের নীচে কাঠ, বাঁশের টুকরো, পচাগলা কাপড় দেখতে পেলেও আর কোনও দেহের সন্ধান মেলেনি। সন্ধ্যার পরে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরাও তাঁবু গুটিয়ে চলে যান। মঙ্গলবার সকালে ফের ঘটনাস্থলের ২০০ মিটারের মধ্যে আর একটি দেহ ভেসে ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কী আরও দেহ রয়ে গিয়েছে। যদিও দিনভর তল্লাশির পরেও উত্তর মেলেনি। খোঁজ মেলেনি ভেঙে পড়া নৌকাটিরও।

শনিবার রাতে কালনার ভবা পাগলার মন্দিরে উৎসব দেখে ফেরার পথে ভুটভুটি উল্টে তলিয়ে যান প্রায় শ’দুয়েক মানুষ। তাদের বেশির ভাগই শান্তিপুরের বাসিন্দা। রবিবার সকালে প্রশাসনিক অব্যবস্থা, উদ্ধার কাজে গাফিলতির অভিযোগে নৃসিংহপুর ঘাটে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বাধে পুলিশের সঙ্গে জনতার। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একাধিক নৌকা, লঞ্চে। পরে দু’দিন ধরে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে মেলে মোট ২০টি দেহ।

মঙ্গলবার সারা দিনই তল্লাশি চালাতে দেখা যায় রাজ্য পুলিশ এবং সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের। দফায় দফায় কালনা খেয়াঘাট থেকে নৃসিংহপুর ঘাট ও আশপাশের চত্বরে চক্কর দেন তাঁরা। রবিবার জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধের পর থেকেই নৃসিংহপুর ঘাটে সাধারণ মানুষকে পুলিশ ভিড়তে দেয়নি। মঙ্গলবারও পুলিশ কর্মীদের ঘাটের ধারে দেখা গিয়েছে। তবে কালনা খেয়াঘাটে ভিড় ছিল। রোদে ছাতা, গামছা মাথায় উদ্ধার কাজ দেখছিলেন বহু জন। তাঁদের অনেকেই বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। কালনার বাসিন্দা, কল্যাণ মজুমদারের দাবি, ‘‘দুর্ঘটনার সময় অনেকেই বলেছিলেন জলের তলায় রয়েছে বহু মৃতদেহ। ২০টি দেহ উদ্ধার হয়ে গিয়েছে। আর কোনও দেহ আছে কিনা দেখতেই পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি।’’ নৌকাটির হদিস মিলছে না কেন, সে প্রশ্নও তোলেন অনেকে। তবে এনডিআরএফ দলের এক সদস্য চিদানন্দ একের কথায়, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে স্কোয়ারে বারবার নৌকাটিকে খুঁজেছি। কিন্তু খোঁজ পাইনি।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া একটি ইটভাটার সামনে তরঙ্গ দেবনাথ (৭১) নামে এক মহিলার দেহ ভেসে ওঠে। পরে জানা যায়, তাঁর নদিয়ার হরিপুর এলাকায়। তরঙ্গদেবীর আত্মীয়েরা জানান, শনিবার বোনপো রঞ্জিতকে নিয়ে ভবা পাগলার মন্দিরে উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি। ফিরছিলেন ওই নৌকাতেই। রঞ্জিত নিজকে বাঁচাতে পারলেও আর বহু জনের মতোই তলিয়ে গিয়েছিলেন তরঙ্গদেবী। তরঙ্গদেবীর এক আত্মীয়া মমতা দেবনাথ বলেন, “নৌকাডুবির পরে প্রশাসনের কাছে নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। ঘটনার দিন থেকে প্রতিদিনই নদীর পাড়ে গিয়ে কোনও খবর আছে কিনা জানার চেষ্টা করতাম। শেষে এই খবর এল।’’ পুলিশ জানায়, ফুলিয়ার মনোরঞ্জন বসাকের (৪৫) দেগ আগেই মিলেছিল। এ দিন পরিবারের লোকজনের হাতে দেহটি তুলে দেওয়া হয়।

এ দিকে, রবিবার সকাল থেকে খেয়া পারাপার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মুশকিলে পড়েছেন দু’জেলার বহু মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ভুটভুটি চলে। স্কুল, কলেজ, চাকরি সূত্রে অনেকে যেমন যাতায়াত করেন, তেমনি নৌকা করে ব্যবসার জন্য ধান, চালও নিয়ে যাওয়া হয়। ঘাট বন্ধ থাকায় বহু ঘুরে কাজ মেটাতে হচ্ছে। মঙ্গলবার খেয়াঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইজারাদারদের অফিসে তালা ঝুলছে। যাত্রী পরিবহণের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে গাড়ি পারাপারও। ঘাটে এসে ফিরে যাওয়ার পথে কালনার কাঠিগঙ্গা এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘‘নদীর ওপারে বিভিন্ন চায়ের দোকানে বেকারির বিস্কুট বিক্রি করি। বিস্কুট চেয়ে বারবার ফোন এলেও পারাপার বন্ধ থাকায় ও পাড়ে যেতে পারিনি।’’ তাঁর দাবি, ও পাড়ের বহু মানুষ রোজ সকালে মাছ, সব্জি বিক্রি করতে আসেন। যাতায়াত বন্ধ হওয়াই সবারই ব্যবসা বন্ধ।

যদিও কালনা পুরসভার দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘রবিবার নৃসিংহপুর ঘাটে ৬টি নৌকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেগুলিতে যাত্রী পরিবহণ করা হতো। উদ্ধার কাজও চলছে। দ্রুত খেয়া পারাপার স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

20 bodies boat capsize Kalna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy