—প্রতীকী ছবি।
এ যেন পুরো ইরফান খান অভিনীত ‘হিন্দি মিডিয়াম’ ছবির চিত্রনাট্য!
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা হাতানোর জন্য নিখুঁত গল্প ফেঁদেছিলেন এক দম্পতি। শুধু তা-ই নয়, সেই গল্প অনুযায়ী অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে গেলেন প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। জেলাশাসকের নির্দেশে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাসিন্দা ওই দম্পতির অভিনয়ই এখন প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগ, আবাসের টাকা হাতানোর জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনে ‘দরিদ্রের’ অভিনয় করেছিলেন রহিম শেখ এবং তাঁর স্ত্রী সালেহার বিবি। পূর্বস্থলী-২ ব্লকের মাজিদা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পশ্চিম আটপাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। ঘটনার সূত্রপাত আবাস তালিকায় গরমিল থেকে। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামে পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাসের তালিকায় নাম ছিল রহিমের। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের পাকা বাড়ি। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা তালিকা যাচাই করতে এলেই ধরা পড়বে গরমিল। বাদ পড়বে তাঁদের নাম। সেই আশঙ্কা করেই ফন্দি আঁটেন ওই দম্পতি।
অভিযোগ, দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও রহিমদের প্রতিবেশী আনসুরা বিবির নাম ছিল না আবাসের তালিকায়। সেই সুযোগটাই কাজে লাগান রহিম এবং তাঁর স্ত্রী । আনসুরা গ্রামের একটি স্কুলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা হিসাবে রান্না করেন। আবাসের তালিকা ধরে যাচাই প্রক্রিয়ার নেমে প্রশাসনের লোকজন সম্প্রতি পূর্বস্থলীর পশ্চিম আটপাড়া গ্রামে যান। সেই খবর রহিম শেখের কাছে পৌঁছয়। তখন আনসুরা স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সেই সুযোগে স্কুলে গিয়ে আনসুরার থেকে তাঁর বাড়ির চাবি নিয়ে আসেন রহিম। তার পরই নিজেদের পাকা বাড়ি ছেড়ে আনসুরার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন রহিমেরা। সেটাই যে তাঁদের বাড়ি এমন প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন তাঁরা। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সামনেও সমান তালে অভিনয় করেন ওই দম্পতি। প্রশাসনের লোকজন নিয়ম মেনে বাড়িটির ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে চাইলে রহিম শেখ সাবলীল ভাবে আনসুরার মাটির বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে পড়েন। কোনও সন্দেহই হয়নি প্রশাসনিক কর্তাদের। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হতেই ভেস্তে যায় দম্পতির সব পরিকল্পনা। তাঁকে ধোঁকা দিয়ে তাঁর বাড়ি নিজের নামে দেখিয়েছেন রহিম, বুঝতে পেরেই কালনার মহকুমাশাসককে বিস্তারিত ভাবে সব লিখে জানান আনসুরা। সেই অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসে মহকুমা প্রশাসন। শুরু হয়েছে ঘটনার তদন্ত ।
এ বিষয়ে আনসুরা বিবি বলেন, ‘‘আমার কাঁচাবাড়িকে নিয়ে প্রতিবেশী রহিম এমন ছলচাতুরির ঘটনা ঘটাবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। প্রশাসনকে ধোঁকা দিতে তাঁর স্ত্রী আমার বাড়ির উনুনে রান্নাবান্নাও করেন। আমার বাড়ির চাবি নিয়ে যে রহিম এ সব কাণ্ড ঘটাবেন তা আমাকে জানাননি।’’ আনসুরার কথায়, ‘‘রহিমের স্ত্রী কয়েক দিন আগে আমাকে বলে ‘বেকার ভাতা’ পাওয়ার জন্য রহিমকে আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে হবে। তাই রহিম যখন আমার বাড়ির চাবিটা আমার কাছ চাইতে আসে তখন আমি সেটাই ধরে নিয়েছিলাম। সরল মনে আমি আমার বাড়ির চাবিটা রহিমকে দিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি ‘বেকার ভাতার’ জন্য নয়, আসলে আবাস যোজনার লক্ষাধিক টাকা হাতানোর জন্য প্রশাসনের লোকজনকে ধোঁকা দিতেই আমার বাড়িটা ব্যবহার করেছে।”
আনসুরার এক প্রতিবেশী দাবি করেন, এই গোটা ছলচাতুরি-কাণ্ডে শাসক দলের স্থানীয় এক জন রহিম শেখকে ইন্ধন জুগিয়েছেন। তবে গোটা ঘটনা জানাজানি হতেই বিপদে পড়ে যান রহিম। প্রতিবেশীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে সাজানো গল্পের কথা স্বীকার করে নেন তিনি। যদিও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান মাজিদা পঞ্চায়েতের প্রধান মজিবর রহমান। কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল জানিয়েছেন, অভিযোগ জমা পড়ার পরেই পূর্বস্থলীর বিডিওকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy