তিনি নারকেলের মালা থেকে পেনদানি, লবনদানি, পেপার ওয়েট, চাবির রিং-সহ নানা সামগ্রী তৈরির কৌশল শিখিয়েছেন কালনা উপসংশোধনাগারে বন্দিদের । সে সব জিনিস সংশোধনাগারের ভিতরে হওয়া প্রদর্শনীতে বিক্রিও হয়েছে। নারকেল মালার উপরে শিল্পকর্ম শেখা বন্দিদের মধ্যে তাঁর হাত ধরে যাঁরা ‘মাস্টার ট্রেনার’ হয়েছেন, তাঁদের অন্য সংশোধনাগারে নিয়ে গিয়ে আরও বহু বন্দিকে শিল্পকর্ম শেখানোয় উদ্যোগী হয়েছেন জাতীয় এবং ইউনেস্কোর পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিল্পী তাপস পাল। কালনার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। কাজের ফাঁকে নারকেলের মালার উপরে বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করতেন তাপস। তাঁর তৈরি শিল্পকর্ম ২০১২-এ জাতীয় পুরস্কার পায়। তিনি পেয়েছেন ইউনেস্কোর পুরস্কারও। ২০১৪-ও তাপস জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সরকারি কর্মী হিসেবে অবসর নেওয়ার পরে তাঁর পরিকল্পনা ছিল, বাজারে চাহিদা রয়েছে, এমন বেশ কিছু জিনিসপত্র তৈরির কৌশল জেলবন্দিদের শেখানো। তাঁর যুক্তি, কাজ শিখে উপার্জনের পথ তৈরি হলে অপরাধ প্রবণতা কমবে। সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে আয়ও করতে পারবেন বন্দিরা। শিল্পীর এই আর্জিতে সম্মতি দেন কালনা উপসংশোধনাগারের সুপার তথা মহকুমাশাসক।
২০২৪-র ১৫ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত টানা দু’মাস তিনি কালনা উপসংশোধনাগারে গিয়ে বন্দিদের নারকেলের মালা থেকে ক্রেতাদের পছন্দের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি শেখান। বন্দিরা দ্রুত তাঁর থেকে শিখে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি শুরু করেন।
উপসংশোধনাগারের ভিতরে একটি প্রদর্শনী করে বন্দিদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি হয়। সূত্রের খবর, ওই সব জিনিসপত্র বিক্রি করে আয় হয় ২৩ হাজার ৬০ টাকা। বন্দিদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে আসা অর্থ প্রিজ়নার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ডে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে আবেদনও জানানো হয়েছে। কারা দফতর অর্থ দফতরের অনুমতি চেয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে।
এখানেই থামতে চান না তাপস। ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি জেলেও বন্দিদের একই কাজ শেখানোর জন্য কারা দফতরে আবেদন করেছেন তিনি। তাতে তিনি জানিয়েছেন, কালনা উপসংশোধনাগারে এই কাজে শিখে তিন জন বন্দি ‘মাস্টার ট্রেনার’ হয়েছেন।তাঁরা প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দিদের কাজ শেখাবেন। পাশাপাশি, তিনিও বন্দিদের পাশে থেকে সাহায্য করবেন। ২০২৪-র ১০ ডিসেম্বর কারা দফতরের তরফে সম্মতি জানিয়ে মেল পাঠানো হয়েছে। তবে বিচারাধীন বন্দিদের ক্ষেত্রে এক জেল থেকে অন্য জেলে নিয়ে যেতে গেলে প্রয়োজন হয় আদালতের সম্মতির।
তাপস বলেন, ‘‘আমার উদ্যোগের প্রসংসা করেছে কারা দফতর। আশা করছি আদালতের অনুমতি মিলবে। বহু বন্দিকে নারকেলের মালার তৈরি জিনিসপত্র শেখানোই আমার লক্ষ্য। এতে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে তাঁদের অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে না।’’
কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘উদ্যোগ ভাল। বন্দিরা এই ধরনের উদ্যোগ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)