জলজ পক্ষী বার্ষিক শুমারিতে দক্ষিণবঙ্গে প্রথম বার দেখা মিলেছে উত্তর আমেরিকার প্রজাতির কমন মারগ্যানসার পাখির। দুর্গাপুর বন দফতরের দাবি, বার্নপুরের ভূতাবুড়ি এলাকায় দামোদর নদে এক ঝাঁক এই বিরল পাখিকে চরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। কোথায় এই পাখি এসেছে, তা জানতে বনকর্মীরা বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে পর্যবেক্ষণ। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে হঠাৎ এই পাখির দেখা মিলল কেন, তার অনুসন্ধানও হচ্ছে বলে বনাধিকারিকেরা জানিয়েছেন।
দুর্গাপুর বন বিভাগের উদ্যোগে ফি বছর জলজ পাখির বার্ষিক শুমারি হয়। এ বারও ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। বার্নপুর ভূতাবুড়ি, পাম্পহাউস এলাকায় দামোদর নদ, মাইথনের বরাকর নদ, চিত্তরঞ্জনের হ্রদ, দুর্গাপুরে দামোদর নদ ব্যারাজ ও উখড়ার মুদিরবাঁধ এলাকায় যৌথ ভাবে এই শুমারি করছে দুর্গাপুর বনবিভাগ ও ‘ওয়াইল্ড লাইফ ইনফর্মেশন অ্যান্ড নেচার গাইড সোসাইটি’ (উইনস)। তবে কমন মারগ্যানসারের দেখা মিলেছে এক মাত্র বার্নপুরের ভূতাবুড়ি এলাকায়। ডিএফও (দুর্গাপুর) অনুপম খান বলেন, “দক্ষিণবঙ্গের কোথাও এর আগে এই প্রজাতির পাখি দেখা যায়নি। তবে উত্তরবঙ্গের গজলডোবায় তিস্তাতে দেখা গিয়েছে।” উইনসের যুগ্ম সম্পাদক মনীশ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ভারতবর্ষে সাধারণত অরুণাচল প্রদেশ ও অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় নিয়মিত এই প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথম। তাঁরা জানিয়েছেন, আর কোথাও এই পাখি এসেছে কি না খোঁজ করা হচ্ছে।
ডিএফও অনুপম খান জানান, দলছুট হয়ে পাখিরা চলে আসতে পারে আবার এমন হতে পারে, এত দিন যেখানে নামত সেখানে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। তাই নতুন জায়গায় ডেরা বেঁধেছে। ঠিক কারণ খুঁজতে বিশেষজ্ঞরা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। এ বারের জলজ পক্ষী শুমারিতে নর্দার্ন পিনটেল, গাডওয়াল, রুডিসেল ডাক, কমন পোচার্ড, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, লেসার হুইসলিং প্রভৃতি পাখির দেখা মিলেছে বলেও তিনি জানান। তবে এই পরিযায়ী পাখিগুলি প্রতি বছরই এই এলাকায় দেখা যায়।
উইনসের যুগ্ম সম্পাদক মনীশ জানান, গত বারের চেয়ে এই বছর পাখির সংখ্যায় বিশেষ কোনও হেরফের হয়নি। এর থেকে অনুমান করা যেতে পারে শিল্পাঞ্চলের জলবায়ু পরিবেশ বান্ধব আছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, জলজ পক্ষী শুমারির মূল উদ্দেশ্য দু’টি। প্রথমত, কোন কোন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কত সংখ্যায় আসছে, তার একটি মোটামুটি ধারণা জানা। দ্বিতীয়ত, এলাকার জলবায়ু কতটা পরিবেশবান্ধব রয়েছে সেই বিষয়ে অবগত হওয়া। তবে চিত্তরঞ্জনের হ্রদগুলিতে গত বছরের তুলনায় এই বছর পাখির সংখ্যা অনেক কমেছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বনকর্মীদের মনে হযেছে, হ্রদগুলির পরিবেশগত পরিস্থিতি পক্ষী সহায়ক নয়। তাই প্রতি বছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে।
ডিএফও অনুপম খান জানিয়েছেন, এই হ্রদগুলি বন বিভাগের অধীনে নয়। কিন্তু প্রতি বছর পাখি দেখতে ভিড় করেন বাসিন্দারা। তাই হ্রদের পরিবেশ পক্ষী সহায়ক রাখতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনুপম জানিয়েছেন, জলাশয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে কচুরিপানা রাখতে হয়। কারণ, এগুলির গোড়া থেকে পাখি খাদ্য সংগ্রহ করে। আবার খুব বেশি সংখ্যায় কচুরিপানা থাকলে পাখি জল না পেয়ে নামতে চায় না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)