Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিন্‌-রাজ্যে কাজে গিয়ে মার, ছ্যাঁকা

মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ, রক্তাক্ত ওই কিশোরকে জামালপুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুজরাতের রাজকোটে একটি গয়নার দোকানে কাজ করত রবি দলুই।

আক্রান্ত কিশোর। —নিজস্ব চিত্র।

আক্রান্ত কিশোর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৩০
Share: Save:

ছেলেকে ফিরে পেতে হলে দিতে হবে নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। বছর পনেরোর অনাথ ছেলেটার জন্য মামারা ওই টাকা জোগাড় করতে পারেননি। ফল, টানা নির্যাতন, সিগারেটের ছ্যাঁকা। মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ, রক্তাক্ত ওই কিশোরকে জামালপুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুজরাতের রাজকোটে একটি গয়নার দোকানে কাজ করত রবি দলুই। বছর খানেক আগে স্থানীয় সুশোভন পোড়েল নামে এক ঠিকাদার তার সঙ্গে আরও চার নাবালককে ওই কাজে পাঠায়। নির্যাতন বরাবরই ছিল। তবে মাসখানেক আগে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার পরে টানা জ্বলন্ত সিগারেট ও তরল লোহার ছ্যাঁকায় অসুস্থ হয়ে পড়ে রবি। তাতেই ভয় পেয়ে যান ওই দোকানের অন্যতম ‘মালিক’ আলমগীর শেখ। তিনিই লোক পাঠিয়ে জামালপুরের বেরুগ্রামে সুশোভনের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেন রবিকে। বুধবার জামালপুর থানা ও বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানায় ওই কিশোর। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই শ্রমিক-ঠিকাদার সুশোভন পলাতক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুরের বলরামপুরে মামার বাড়িতে বড় হয়েছে রবি। মামার বাড়ির সকলেই খেতমজুর। বছর খানেক আগে স্থানীয় যুবক সুশোভনের সঙ্গে এক মামার আলাপ হয়। মামা বেচারাম দলুইয়ের দাবি, অলঙ্কারের দোকানে কাজ দেওয়ার নাম করে রবি-সহ আরও পাঁচ জনকে গুজরাতের রাজকোটে নিয়ে যায় সুশোভন। খাওয়া-পড়া ও রোজগারের সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দেয়। কয়েকমাস আগে ওই নাবলকদের রাজকোটে আলমগীরের দোকানে কাজে লাগানো হয়। কয়েক দিন যাওয়ার পর থেকেই অত্যাচার শুরু হয়।

রবির দাবি, ওই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা চার জন রাতের অন্ধকারে পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ধরা পড়ে যাওয়ার পরে অত্যাচার বাড়তে থাকে। রবির মামাদের দাবি, আলমগীরের লোকেরা ফোনে জানায় ছেলেকে ফিরে পেতে হলে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। তিন জন কিশোরের পরিবার ওই টাকা জোগাড় করে দিলে ছেলে ফেরত পায়। তাঁরা ওই টাকা দিতে পারেননি। রবির অভিযোগ, “জ্বলন্ত সিগারেট ও লোহার ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। এ ছাড়াও লাঠি দিয়ে মার, কিল-চড়-ঘুষি প্রতিদিন পড়ত। খাবার চাইলেই মার জুটত।”

এ দিন জামালপুর হাসপাতালে ওই নাবালককে দেখতে যান বিডিও সুব্রত মল্লিক। রবির ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখে শিউরে ওঠেন তিনি। বিডিও বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। পাশবিক অত্যাচার করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ দফতরকেও ঘটনাটি জানানো হয়েছে।” জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক পার্থসারথি সিংহ বলেন, “ওই কিশোরের শরীর জুড়ে রয়েছে অমানুষিক অত্যাচারের চিহ্ন। সে এখন ট্রমার মধ্যে রয়েছে। তার দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।” বর্ধমান চাইল্ডলাইনও এ দিন ওই নাবালকের সঙ্গে কথা বলেছেন। চাইল্ড লাইনের কর্মী অতনু ঘোষ বলেন, “ওই কিশোরকে সবরকম সাহায্য করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE