Advertisement
E-Paper

‘ছেলে আর বাড়ি ফিরল না!’

বাসিন্দাদের একাংশের বিক্ষোভে এ দিন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় বরাকর স্টেশন রোড, জিটি রোড, বেগুনিয়া মোড়, ডিসেরগড় রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২১ ০৫:১৫
বরাকর ফাঁড়িতে এ ভাবেই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। (ইনসেটে) মহম্মদ আরমান আনসারি। মঙ্গলবার।

বরাকর ফাঁড়িতে এ ভাবেই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। (ইনসেটে) মহম্মদ আরমান আনসারি। মঙ্গলবার। ছবি: পাপন চৌধুরী।

কাজ থেকে ফিরে সবে খেতে বসেছিলেন ছেলে। খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই ফাঁড়ির চার সিভিক ভলান্টিয়ার ‘কোনও কারণ না দেখিয়ে’ সঙ্গে করে নিয়ে যান মহম্মদ আরমান আনসারিকে (২১)। ‘‘ছেলেকে গাড়িতে তোলার আগে ওরা বলেছিল, ‘বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে’।’’— পুলিশ হেফাজতে আরমানের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নাগাড়ে এই কথাগুলিই বলছিলেন তাঁর মা খাস্তগির বিবি। পাশাপাশি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ফাঁড়ি থেকে রাতভর শোনা গিয়েছে এক জনের আর্তনাদ। তাঁদের সন্দেহ, আরমানকে তখন মারধর করা হচ্ছিল।

বরাকর পুলিশ ফাঁড়ি রোডের উল্টো দিকে স্টেশন রোড। সে রাস্তারই লাগোয়া এক গলির শেষ প্রান্তে দু’কামরার ছোট্ট বাড়িতে মা-বাবাকে নিয়ে সংসার ছিল আনাসারির। তাঁর বাবা মহম্মদ কালাম আনসারির একটি গদির দোকান আছে বরাকরেই। কালাম বলেন, ‘‘ছেলে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এক দিন খুব বকাবকি করেছিলাম। তার পরেই মাস কয়েক হল, আমার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিল। ছেলে আর বাড়ি ফিরল না!’’ পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার অন্য দিনের চেয়ে একটু আগেই বাড়ি ফিরে এসেছিলেন কালাম। একটু পরে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা সেরে ছেলে দোকানে তালা দিয়ে ফেরেন। কালাম বলেন, ‘‘বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেকে এক রকম জোর করে তুলে নিয়ে গেলেন চার জন সিভিক ভলান্টিয়ার।’’ আরমানের এক দিদি আছেন। বছর দু’য়েক আগে তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কালাম ও খাস্তগির বলেন, ‘‘এখন আমরা কী করে বেঁচে থাকব জানি না। এর বিচার চাই।’’

পুলিশ হেফাজতে আরমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসীও। পুলিশ ফাঁড়ির কাছে যে বসতি আছে, সেখানকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি করেছেন, ‘‘সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ফাঁড়ি থেকে এক জনের চিৎকার শুনতে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, মারধর করা হচ্ছে। কারণ, মাঝেমধ্যেই এমন আওয়াজ আসে।’’ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

এ দিকে, বাসিন্দাদের একাংশের বিক্ষোভে এ দিন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় বরাকর স্টেশন রোড, জিটি রোড, বাসস্ট্যান্ড, বেগুনিয়া মোড়, ডিসেরগড় রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। পাশাপাশি, ‘হামলা’ চালানো হয় বরাকর ফাঁড়িতে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তাতে চার-পাঁচ পুলিশকর্মী সামান্য জখম হন। তবে পুলিশ কমিশনার অজয়কুমার ঠাকুর এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধও করেন এ দিন। পুলিশ রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ অবরোধ bতুলে দেয়। আরমান আর নেই শুনে তাঁর বন্ধুরাও এ দিন এক জোট হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তেমনই কয়েকজন নিশাদ আনসারি, বিট্টু গোপদের মন্তব্য, ‘‘পুলিশ কাউকে সন্দেহবশত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যেতেই পারে। কিন্তু পিটিয়ে মারবে কেন? কড়া শাস্তি দাবি করছি দোষীদের।’’

Death police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy