Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভর্তির দাবিতে আধিকারিকদের ঘেরাও

সপ্তাহ খানেক আগেই ভর্তি নেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ছাদে চড়ে বসেছিলেন এক ছাত্র। হুমকি দিয়েছিলেন ভর্তি না নিলে আত্মঘাতী হবেন। পরে অন্য ছাত্রেরা নামিয়ে এনেছিল তাঁকে। তারপরেও দিন তিনেক ধরে অবস্থান, বিক্ষোভ চলছিল। বুধবার ফের ওই ছাত্র, শেখ সুখচাঁদ ও তাঁর সঙ্গী আলমগির মণ্ডলের ভর্তির দাবিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করল টিএমসিপি সমর্থক ছাত্রেরা। ঘেরাও চলে রাত আটটা পর্যন্ত।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ঘেরাও।—নিজস্ব চিত্র।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ঘেরাও।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:০৭
Share: Save:

সপ্তাহ খানেক আগেই ভর্তি নেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ছাদে চড়ে বসেছিলেন এক ছাত্র। হুমকি দিয়েছিলেন ভর্তি না নিলে আত্মঘাতী হবেন। পরে অন্য ছাত্রেরা নামিয়ে এনেছিল তাঁকে। তারপরেও দিন তিনেক ধরে অবস্থান, বিক্ষোভ চলছিল। বুধবার ফের ওই ছাত্র, শেখ সুখচাঁদ ও তাঁর সঙ্গী আলমগির মণ্ডলের ভর্তির দাবিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করল টিএমসিপি সমর্থক ছাত্রেরা। ঘেরাও চলে রাত আটটা পর্যন্ত।

শেখ সুখচাঁদ ও আলমগিরের দাবি, ট্যুরিজম বিভাগের স্নাতকোত্তরে ভর্তির প্রথম তালিকায় তাঁদের নাম ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় তা বাদ পড়ে যায়। ওই দু’জনকে ভর্তির দাবিতে জানুয়ারির শেষ থেকেই আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রদের একাংশ। এ দিনও ওই ঘটনার জেরে দিনভরই উত্তেজনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি ক্যাম্পাসে। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। র্যাফের টহলও চলে। তারপরেও ঘেরাও তুলতে পারেনি পুলিশ।

বিক্ষোভকারী ছাত্রদের দাবি, ওই দু’জনকে ভর্তি নেওয়ার ব্যাপারে আধিকারিকদের নিশ্চয়তা দিতে হবে। যদিও সহ-উপচার্য ষোড়শীমোহন দাঁ ও রেজিস্ট্রার রজত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ওই দুই ছাত্রের ভর্তির ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ববদ্যিালয়ের ওই বিভাগের ভর্তির চূূড়ান্ত তালিকার কোনও রদবদল হবে না। এ দিন সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার বলেন, “ছাত্ররা আমাদের ঘেরাও করে রেখেছে। রাত পর্যন্ত বেরোতে বাধা দেওয়া হয়েছে।”

বুধবার ঘটনার সূত্রপাত হয় বিকেল চারটে নাগাদ। প্রায় ৬ ঘণ্টা অবস্থান বিক্ষোভের পরে জনা তিরিশেক ছাত্রছাত্রী উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের দফতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। ছাত্রেরা জোর করে উপরে ওঠার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়। অভিযোগ, দুই নিরাপত্তারক্ষী, এক ছাত্রী-সহ তিন বিক্ষোভকারী চোট পান। আহত ছাত্রীর অভিযোগ, তাঁকে ওপরে ওঠার সময় এক পুরুষ পুলিশকর্মী লাঠি দিয়ে হাতে আঘাত করেন। তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তাঁর হাতে আঘাত লাগে। এক ছাত্রকেও পুলিশ লাঠি চালিয়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে ছাত্রেরা সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের ঘরের সামনে শুয়ে অবরোধ শুরু করেন। যদিও লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে পুলিশ। পরে রাত আটটা নাগাদ পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের বের করে দেয়। সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকেও বের করে আনা হয়। তবে তারপরেও ওই ছাত্রেরা ঘরের সামনে অবস্থান চালিয়ে যায়। বিক্ষোভকারী ছাত্রদের আরও অভিযোগ, তাঁদের কিনে আনা খাবার পর্যন্ত ফেলে দিয়েছে পুলিশ। এই অভিযোগও পুলিশ অস্বীকার করেছে। তবে গোলমাল শুরুর আগেই উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান এ দিন।

বিক্ষোভকারীদের পক্ষে শুভাশিস ঘোষ, শেখ সুখচােঁদরা বলেন, “পুলিশ আমাদের উপর আক্রমন করেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপরে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। মহিলা পুলিশ ছাড়াই ছাত্রীদের ওপর লাঠি চালানো হয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদে আরও বড় আন্দোলনে নামব। আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।” তাঁদের আরও দাবি, “ওই দু’জনকে এমবিএ ট্যুরিজম বিভাগে ভর্তি করতেই হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা টিএমসিপি নেতা দীপক পাত্র বলেন, “বহিরাগত কিছু লোককে মোতায়েন করে ছাত্রদের পক্ষে যাতে উপাচার্যের ঘরে ঢোকা সম্ভব না হয় তার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে আমরা আরও বড় আন্দোলনে নামব।”

যদিও ছাত্র সংসদের বর্তমান সভাপতি প্রদীপ বাজপেয়ী ও সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, “ওই দুই ছাত্র অন্যায় ও নিয়মবর্হিভূত ভাবে ভর্তি হতে চাইছে। কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে আমরা প্রচুর ছাত্র এনে ওই অন্যায় অবরোধ ভেঙে দিতাম। মানবিকতার খাতিরে তা করিনি।” টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রও বলেন, “দলবিরোধী কাজের অভিযোগে শেখ সুখচাঁদকে আমরা ছাত্র সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছিলাম। এই ঘটনায় টিএমসিপি-র কোনও সমর্থন নেই। শিক্ষামন্ত্রী ও উপাচার্যের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE