Advertisement
E-Paper

ভাল ফল, তবু যাচ্ছে না চিন্তা

ওই স্কুলের তুহিন পাল পেয়েছে ৬০৮। তার বাবা মনিকাঞ্চনবাবু নিজের বিঘা দুয়েক জমিতে চাষবাস করে সংসার চালান। সংসারের সব খরচ জোগাতেই হিমসিম হতে হয়। এত দিন গ্রামেরই বাসিন্দা দুই আত্মীয় তুহিনকে পড়াতেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০৪:০৩
সৌরভ সাধু

সৌরভ সাধু

কেউ সামান্য চাষাবাদ করে সংসার চালান। কেউ ছেলেকে পড়িয়েছেন অটো চালিয়ে। অভাবের সেই সংসারে হাসি ফোটাল ছেলেমেয়েরা। মাধ্যমিকে ভাল ফল করে এ বার উচ্চশিক্ষায় চোখ তাদের। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে সংশয়ে ভুগছেন অভিভাবকেরা।

বারাবনির পাঁচগাছিয়া মনোহরবহাল বিবেকানন্দ বিদ্যায়তনের ছাত্র সৌরভ সাধু ৬২২ পেয়েছে। ইটাপাড়া গ্রামে টালির ছাউনির এক কামরার ঘরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে সে। বাবা বিবেকানন্দবাবু অটো চালান। তিনি জানান, দিনে শ’দুয়েক টাকা রোজগার করেন। তার বেশিরভাগটাই চলে যায় অটো কেনার জন্য নেওয়া ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করতে। সৌরভ জানায়, সে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু তার মা নিভাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের মতো পরিবারে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে অনেক ফারাক।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘সৌরভ ভাল ফল করবে, আমরা জানতাম। কিন্তু এ বার লড়াইটা আরও কঠিন হবে।’’ স্কুলের শিক্ষকেরা সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান উত্তম মাজিও বলেন, ‘‘অর্থের অভাবে সৌরভের পড়ার ক্ষতি হবে না। আমরা সবাই ওর ইচ্ছে পূরণ করব।’’

তুহিন পাল

প্রতিকূলতার মধ্যে ভাল ফল করেছে বুদবুদের কসবা রাধারানি বিদ্যামন্দিরের তিন পড়ুয়া। স্কুলে এ বার সর্বোচ্চ ৬৪১ নম্বর পাওয়া পড়ুয়া রৌনক কোলের বাবা সরলকুমার কোলে হুগলির ব্যান্ডেলে একটি কারখানায় সামান্য বেতনের কর্মী। কসবার বাড়িতে মা কৃষ্ণাদেবী রৌনককে নিয়ে থাকেন।

পিয়ালি দাস

খুড়তুতো দাদা অশোক কোলের কাছে ছোট থেকে পড়াশোনা করছে রৌনক। অশোকবাবু জানান, সংসারে অভাব থাকলেও রৌনক পড়াশোনায় কখনও ফাঁকি রাখেনি। রৌনক এ বার বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চায়। কিন্তু সে জন্য তাঁকে এলাকার বাইরের কোনও স্কুলে যেতে হবে। কিন্তু বাইরে থেকে পড়াশোনার খরচ কী ভাবে জোগাড় হবে, চিন্তায় পরিবার।

ওই স্কুলের তুহিন পাল পেয়েছে ৬০৮। তার বাবা মনিকাঞ্চনবাবু নিজের বিঘা দুয়েক জমিতে চাষবাস করে সংসার চালান। সংসারের সব খরচ জোগাতেই হিমসিম হতে হয়। এত দিন গ্রামেরই বাসিন্দা দুই আত্মীয় তুহিনকে পড়াতেন। বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক ছেলের স্বপ্ন অবশ্য নষ্ট হতে দিতে নারাজ মনিকাঞ্চনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘জমি বিক্রি করে হলেও আমি ছেলেকে পড়াব।’’

রৌনক কোলে

ওই স্কুলেরই ছাত্রী পিয়ালি দাস ৬০৫ পেয়েছে। তার বাবা সাধনবাবুও চাষাবাদ করেন নিজের সামান্য জমিতে। তাঁর আর এক ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালাতে সমস্যা হয়েছে। মেয়ে ভাল ফল করে সেই কষ্টের মান রাখল, মনে করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। তবে সে জন্য অনেক খরচ। একটু চিন্তায় আছি।’’ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তরুণ জোরদার বলেন, ‘‘ওরা খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। ভবিষ্যতেও ভাল ফল করুক, এটাই আমাদের প্রার্থনা।’’

Madhyamik Results 2017
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy