Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Old Man Gets New Home

জীবনযুদ্ধের সায়াহ্নে এসে ‘যোদ্ধা’ মানিক পেলেন নতুন ‘সুখের ঘর’, নেপথ্যে ভাতার থানার ওসি প্রসেনজিৎ

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রসেনজিৎকে নিজের অসহায় অবস্থা সম্পর্কে মানিক কিছু না জানালেও কোনও রকম ভাবে তাঁর কানে পৌঁছে যায় বৃদ্ধের অবস্থার কথা।

old man

বৃদ্ধ মানিক বিশ্বাস। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ০১:২০
Share: Save:

মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে ছিল শুধুই একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর। আর ছিল এক রাশ প্রতিকূলতা এবং অবিরাম ঘটে চলা ‘যুদ্ধ’। না, আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধ বলতে যে রকমটা বোঝায়, তেমনটা নয়। এটা ছিল এক প্রকার বেঁচে থাকার লড়াই। কঠিন ও বাস্তব জীবন সংগ্রাম। কিন্তু কথায় আছে, গভীর অন্ধকারের পরেও থাকে ক্ষীণ আলোর রেখা। অশীতিপর বৃদ্ধ মানিক বিশ্বাসের এ রকমই এক ‘অন্ধকারময়’ জীবনে আলোর রেখা দেখালেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত।

ভাতার বাজারের বাসিন্দা মানিক। বয়স ৬৫ বছর। আক্ষরিক অর্থে তিনি 'সর্বহারা'! মাথার উপর ছাদ, পেটের ভাত — জীবনধারণের ন্যূনতম রসদও তাঁর কাছে বিলাসিতা। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছোট্ট কুঁড়েঘরটিও আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি আর প্রবল দাবদাহে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে কাটছিল তাঁর জীবন। অনেক আবেদন নিবেদন করেও মেলেনি কোনও সুরাহা। ঘরের আশায় বারবার ছুটে গিয়েছিলেন একাধিক সরকারি দফতরে। কিন্তু তাঁকে প্রতিবারই হতাশ হয়েই ফিরে আসতে হয়েছে। বৃদ্ধের এই কাহিনি শুনে নিজেই এগিয়ে আসেন প্রসেনজিৎ। তাঁর উদ্যোগেই ঘর পেলেন মানিক। শুধু তাই নয়, থানার ক্যান্টিনে বৃদ্ধের দু’বেলার খাওয়ারও ব্যবস্থা করেছেন ওসি। পাশাপাশি বেশ কিছু পোশাকও তিনি কিনে দিয়েছেন বলে খবর।

জানা গিয়েছে, ভাতার বাজারে মাটির ছিটেবেড়া দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি দেওয়া এক চিলতে ঘরের মধ্যে বসবাস ছিল মানিকের৷ স্ত্রী বাসন্তী বিশ্বাস বহুদিন আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন৷ একমাত্র ছেলে সুখেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু বলে অভিযোগ। এখন মানিকের সংসার বলতে ১২টি ছাগল!

মানিক বলেন, “আমি আমার ঘরের বিষয়ে ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিকবার গিয়েছি। বেশ কয়েকবার আমার ঘরের ছবিও করে নিয়ে গেছে ওরা । কিন্তু আমার ঘরের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। আমার বাড়ির কিছুটা দূরেই রয়েছে বিডিও অফিস । সেখানেও জানিয়েছিলাম । বিডিও অফিস থেকে আমার হাতে একটা ত্রিপল ধরিয়ে দেওয়া হয়। ব্যস, ওইটুকুই সরকারি সাহায্য পেয়েছি আমি।”

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রসেনজিৎকে নিজের অসহায় অবস্থা সম্পর্কে মানিক কিছু না জানালেও কোনও রকম ভাবে তাঁর কানে পৌঁছে যায় বৃদ্ধের অবস্থার কথা। বৃদ্ধের কথা শোনার পরই ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়ে তিনি সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি বৃদ্ধকে একটা মাথা গোঁজার জন্য ঘর তৈরি করে দেন। ঘরে বিদ্যুতের সংযোগও করেছেন তিনি। ঘুমোবার জন্য বৃদ্ধকে দেওয়া হয় একটি খাট ও বিছানাপত্র।

এ প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোঁয়ার বলেন, “ ভাতার থানার বড়বাবু ওই বৃদ্ধের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু ওই বৃদ্ধ কোনও সরকারি সহায়তা পাননি — এই ধরনের অপপ্রচার ঠিক নয়। মানিক বিশ্বাস নামে ওই বৃদ্ধ বার্ধক্যভাতা পান। এটাও স্থানীয় প্রশাসনের তদ্বিরের জন্যই হয়েছে। এ ছাড়া উনি বিনা পয়সায় রেশন পান। সরকারি আবাস যোজনার অনুদানও পেয়ে যাবেন।”

অন্য দিকে, জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপ জানান, এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। এতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhatar East Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE