E-Paper

তিনের কাজ একে, পাট-যন্ত্রে পুরস্কার অনুপের

কালনা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের সলঘড়া গ্রামে পৈত্রিক বাসভূমি রয়েছে পঞ্চাশোর্ধ অনুপের।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩৪
শাড়িতে পাটের সুতোয় বোনা নকশা, অনুপ নন্দী (ডান দিকে)।

শাড়িতে পাটের সুতোয় বোনা নকশা, অনুপ নন্দী (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

পাট থেকে সুতো তৈরির যন্ত্রের আধুনিকীকরণ করে ভারত সরকারের টেক্সটাইল মন্ত্রকের ‘টেকনোলজি ইনোভেশন গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জ ২০২৪’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন কালনা শহরের শ্যামরায়পাড়ার বাসিন্দা অনুপকুমার নন্দী। ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই দফতর থেকে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে তাঁকে। দেওয়া হবে পুরস্কারের নগদ অর্থও। সোমবার অনুপ জানান, তাঁর ভাবনায় তৈরি যন্ত্রটিকে চেহারা দিয়েছে হাওড়ার একটি সংস্থা। পুরস্কৃত হয়েছেন তাঁরাও।

কালনা শহরের অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন অনুপ। পরে কালনা কলেজ থেকে অঙ্কে অনার্স করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইবার টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেন। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই মেকানিক্যাল প্রসেসিং অব টেক্সটাইলে এমটেক করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে বেশ কিছু নামী বেসরকারি সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় সংস্থায় কাজ করেছেন। দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন ইন্ডিয়ান জুট ইন্টারন্যাশানাল ইন্ডাস্ট্রিস রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞানী হিসাবেও। কাজ করেছেন ন্যাশনাল জুট বোর্ডের টেকনিক্যাল এক্সিকিউটিভ হিসাবে। বর্তমানে একটি নামী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত অনুপের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে পাট থেকে সুতো তৈরির দেশি, বিদেশী যন্ত্র তৈরিতে। সম্প্রতি পাটের সরু সুতো দিয়ে তাঁতের শাড়ির বুননেও নকশা ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

কালনা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের সলঘড়া গ্রামে পৈত্রিক বাসভূমি রয়েছে পঞ্চাশোর্ধ অনুপের। সেখানে বিঘে দেড়েক জমিতে ছাগল, মুরগির খামার গড়েছেন তিনি। চাষ হচ্ছে বিট, গাজর, ধনেপাতার। ছাগল পালনের জন্য বিশেষ ঘাসেরও চাষ হচ্ছে সেখানে। খামারের কাজ করেন গ্রামেরই কয়েক জন। কোলাহলমুক্ত সেই খামারে সপ্তাহে একদিন কাটান অনুপ। তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে পুরনো যন্ত্রে পাটের সুতো তৈরি হয়। নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করতে চেয়েছিলাম। আমার ভাবনায় তৈরি যন্ত্রের বিষয়টি টেক্সটাইল মন্ত্রকের তালিকাভুক্ত হয় ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি। কীভাবে যন্ত্রটি কাজ করবে, কী সুবিধা মিলবে তা ৪ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়ালি জানাই বিশেষজ্ঞদের। ১৫ ফেব্রুয়ারি পুরস্কার পাই।’’ কী ভাবে কাজ করবে নতুন যন্ত্র? সাধারণত দুটি যন্ত্রের মাধ্যমে পাটের তন্তু বার করা হয় এবং একটি যন্ত্র সুতো তৈরি করে। অনুপের ভাবনায় তিনটি যন্ত্রের কাজ একটিতেই হবে। পরিবেশবান্ধব নতুন যন্ত্রে বিদ্যুৎ কম লাগবে। কম সময়ে উৎপাদন হবে বেশি। হাওড়ার যে সংস্থা যন্ত্রটি তৈরি করেছে, তাদের কথায়, ‘‘পাটের সুতো কী ভাবে আরও মিহি করা যায় তা নিয়ে পরবর্তী গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা ঠিকঠাক এগোলে ওই সুতো দিয়ে শুধু শাড়িতে নয়, চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাপ্রন, বিছানার চাদর, বিভিন্ন পোশাক তৈরিতেও ব্যবহার করা যাবে।বিদেশে এমন জিনিসের ভাল চাহিদা রয়েছে। পাটের ব্যবহার বাড়লে চাষিরা উপকৃত হবেন।’’ কালনা মহকুমা হ্যান্ডলুম দফতরের আধিকারিক রঞ্জিত মাইতি বলেন, ‘‘পাটের যন্ত্র নিয়ে কাজ করার ওঁর দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পুরস্কারের কথা শুনেছি। আশা করছি, পাট থেকে সুতো তৈরির যন্ত্রের যে আধুনিকীকরণ উনি করেছেন তা কাজে আসবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalna

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy