E-Paper

অভুক্তের পেট ভরাতে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে নাচ অরুণের

বাণীপীঠ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন অরুণ। আর পড়া হয়নি। বাবা, মা, এক দিদি ও তিন বোনকে নিয়ে তাঁর সংসার।

সুপ্রকাশ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৯
অরুণ মল্লিক। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস 

অরুণ মল্লিক। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস 

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে...’ পায়ের তলায় খরখরে মেঝে, ঘর্মাক্ত গা, সামনে রাখা একটা টুপি। তিনি নেচে চলেছেন অবিরত আনন্দে। তাল, ছন্দের সঙ্গে শরীরের বিভঙ্গ, নমনীয়তা থেকে বলিষ্ঠ মুদ্রা, সবেতেই অনায়াস যাওয়া আসা। কিছুক্ষণের মধ্যেই টুপি ভরে ওঠে খুচরো টাকা, পয়সায়। নাচ শেষে সেই টাকা দিয়ে কাছাকাছি হোটেল থেকে খাবার কিনে স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডে থাকা অসহায় মানুষের পেট ভরান বর্ধমানের অরুণ মল্লিক।

ষাঁড়খানা গলির বছর ছাব্বিশের অরুণের ছোট থেকে নাচেই আনন্দ। তবে প্রথাগত ভাবে নাচ শেখার সুযোগ হয়নি। টিভি দেখেই নাচ তুলে ফেলতেন। ছোটখাটো অনুষ্ঠানে ডাকও পেতেন। পরে অবশ্য অনেকেই তাঁকে নাচের নানা দিক শিখিয়েছেন। আর মুঠোফোনে প্রভুদেবা, রেমো ডিসুজ়ারা তো রয়েছেনই।

নাচ তো অনেকেই করেন, কিন্তু অরুণের মতো ‘হাসিকান্না হীরাপান্না’য় নাচকে জুড়ে নিয়ে অন্যের ভালমন্দের তালে তাল মেলাতে সবাই পারেন না। ছোট থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে যুঝে বড় হওয়ায় খেতে না পাওয়ার কষ্টটা তিনি জানেন। তাই জনবহুল এলাকায় নাচ করে যা উপার্জন হয়, তার সঙ্গে পকেটের কিছুটা জুড়ে ভবঘুরেদের পেট ভরাতে তিনি দু’বার ভাবেন না। একটা সাউন্ড সিস্টেম আর টুপি নিয়ে নানা স্টেশনে ঘুরে বেড়ান তিনি।

বাণীপীঠ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন অরুণ। আর পড়া হয়নি। বাবা, মা, এক দিদি ও তিন বোনকে নিয়ে তাঁর সংসার। বর্তমানে তাঁর একটি নাচের স্কুল রয়েছে। মূলত ‘ফ্রি স্টাইল’ শেখান তিনি। বিভিন্ন সংস্থার হয়েও অনুষ্ঠান করেন।

অরুণ জানান, মাসে হাজার পাঁচেক টাকা রোজগার হয়। স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডে নাচ দেখিয়ে দুশো থেকে পাঁচশো টাকা ওঠে। সেই টাকা অভুক্তদের জন্যই খরচ করেন তিনি। জনপ্রিয় একটি রিয়ালিটি শোয়ে যোগ দিয়েছিলেন একবার। তবে শিকে ছেঁড়েনি।

অরুণ বলেন, ‘‘মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল। ভাবলাম যেটুকু প্রতিভা রয়েছে, কাজে লাগাই। বর্ধমান শহরের বাসস্ট্যান্ড এবং রেলস্টেশন দিয়ে শুরু করেছিলাম নাচ। মানুষের উৎসাহ দেখে পরিধি বাড়িয়েছি। শক্তিগড়, মেমারি, দুর্গাপুর থেকে কলকাতার একাধিক বাসস্ট্যান্ডেও নাচ করেছি।’’ তবে যেহেতু বর্ধমানের মতো বড় স্টেশনে অনেক সংস্থা বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাবার বিলি হয় তাই অরুণের লক্ষ্য তুলনামূলক ছোট স্টেশন। ছোট কোণায়, প্ল্যাটফর্মে সংসার পাতা মানুষগুলোর ‘নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু পাছে পাছে’র জীবনে আনন্দ গুঁজে দেন অরুণ। নৃত্যশিল্পী মেহেবুব হাসান, পিয়ালি ঘোষেরা বলেন, ‘‘নিজের শিল্প নিয়ে অসহায় মানুষের দাঁড়ানো সাধুবাদযোগ্য। ওঁর পাশে রয়েছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy