এলাকায় তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
কর্মী-আধিকারিকদের বন্দুক দেখিয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লুঠের ঘটনা ঘটেছে এ রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম বাজারে। শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে।
বন্দুক দেখিয়ে কর্মী-আধিকারিকদের দিয়ে ক্যাশ কাউন্টারের আলমারি খুলিয়ে টাকা নিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, তারা ৬৯ লক্ষ টাকা লুঠ করে পালিয়েছে। তবে কোনও ব্যাঙ্ক কর্মীকে মারধর করেনি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিকে, থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জনবহুল এলাকায় দিনের আলোয় এমন লুঠপাটের ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জেলার পুলিশকর্তারা। তদন্ত জোর কদমে চলছে জানিয়ে দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
চিত্তরঞ্জন রেল স্টেশন ও চিত্তরঞ্জন রেল শহরের ঢোকার এক নম্বর গেট সংলগ্ন এই মিহিজাম বাজার। মিহিজাম জামতাড়া জেলার মধ্যে পড়ে। এই এলাকায় হাজারেরও বেশি ছোটবড় দোকান ছাড়াও রয়েছে কয়েকশো অস্থায়ী দোকান। সকাল থেকেই রাস্তা জুড়ে বসে যায় আনাজের বাজার। এই বাজারেই রয়েছে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। জেলা মহিলা প্রাথমিক স্কুলের ঠিক উল্টো দিকে এমনই একটি ব্যাঙ্কে শুক্রবার লুঠপাট চালাল দুস্কৃতীরা। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অভিষেক পান্ডে দাবি করেন, সকাল দশটা নাগাদ তিনজন সহকর্মীকে নিয়ে তিনি ব্যাঙ্কে ঢোকেন। প্রায় তাঁদের সঙ্গেই পিছন পিছন আরও চারজন অচেনা লোক গ্রাহক সেজে ভিতরে ঢুকে যায়। তিনি বলেন, ‘‘এরপরেই তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে কর্মীদের মাথায় ও কাঁধে রিভলভার ঠেকিয়ে দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে রাখে। সিসি ক্যামেরা ভেঙে দেয়। কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নষ্ট করেও দিয়েছে। এরপরে ক্যাশ কাউন্টারের আলমারি খুলিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা বের করে নেয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে এই ‘অপারেশন’ শেষ করে দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্ক কর্মীদের শৌচাগারে বন্ধ করে চম্পট দেয়। যাওয়ার সময় তারা কর্মীদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়। বেলা ১১টা নাগাদ স্থানীয়রা তাঁদের চিৎকার শুনে মুক্ত করেন।’’ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানান, কয়েক লক্ষ টাকা খোওয়া গিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ব্যাঙ্কে লুঠপাটের খবর পেতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জামতাড়ার পুলিশ সুপার জয়া রায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই চলে আসেন ঝাড়খণ্ড পুলিশের ডিআইজি অখিলেশকুমার ঝা। ব্যাঙ্ক কর্মী-আধিকারিকদের তাঁরা দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করেন। ঘণ্টা খানেক পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুরও নিয়ে আসা হয়। অখিলেশকুমার ঝা বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আশাকরি দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।’’
এ দিকে মিহিজাম বাজারের মতো এমন একটি জনবহুল অঞ্চলে দিনে-দুপুরে লুঠপাট হওয়ায় ভয়ে রয়েছেন স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা। অমিত মণ্ডল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমরা বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিহিজাম এলাকায় সম্প্রতি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। অনেক মোটরবাইকও চুরি হয়েছে। কিন্তু দিনে-দুপুরে এমন লুঠপাট আগে কখনও হয়নি। এই ঘটনায় তাঁরা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেছেন। এ দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকার বিধায়ক ইরফান আনসারি দাবি করেন, অবিলম্বে দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাঙ্কে কোনও বন্দুকধারী নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন না। ব্যাঙ্কে ঢোকা বেরনোর মুখে কোনও সিসি ক্যামেরাও লাগানো ছিল না। ডিআইজি জানিয়েছেন, সমস্ত অভিযোগ পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy