শহরের শ্রীবৃদ্ধির থিমকে সামনে রেখে শুক্রবার থেকে বর্ধমান উৎসব শুরু করেছে পুরসভা। কিন্তু আলো, উৎসবের মাঝে শহরের রাস্তার একাংশ রয়ে গিয়েছে তিমিরেই। ভাঙা রাস্তা আর ধুলোর ঝড় নিয়েই দিন কাটছে শহরবাসীর।
বাঁকার পাড়ে উৎসব ময়দানে চলছে বর্ধমান পুর উৎসব। স্থানীয় গুণিজনেরা থেকে কলকাতার নামী গায়ক-গায়িকা, ব্যান্ডের অনুষ্ঠান রয়েছে সেখানে। অথচ সেই উৎসব ময়দানের কাছে বিদ্যার্থী হাইস্কুলের সামনের রাস্তাই ভাঙাচোরা। ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে রাস্তায়। যাতায়াত করতে গিয়ে বাসিন্দাদের হোঁচট খেতে হচ্ছে। এক টোটো চালকের দাবি, “শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই খারাপ। ভাঙা রাস্তায় টোটো উল্টে যাচ্ছে। পথচারীর সঙ্গে ধাক্কা লাগছে। জখমও হচ্ছেন অনেকে।”
আলমগঞ্জ রোড, বংপুর মোড়, তেজগঞ্জ, বাবুরবাগ, ইছলাবাদ, নীলপুরের মতো এলাকাতেও রাস্তা বেহাল। শহরের ‘প্রাণকেন্দ্র’ কোর্ট কম্পাউন্ড এলাকায় রাস্তা কেটে জলের পাইপ লাইন বসানোর পরে তা আর সমান করা হয়নি। কাটা রাস্তার উপরে মাটির স্তুপ করা হয়েছে। পুজোর আগে আলমগঞ্জ রোডে তৈরি হওয়া বড় বড় গর্তে ইট-পাথর ফেলা হয়েছিল। সাম্প্রতিক নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পাথর উঠে গিয়েছে। এখন রাস্তা জুড়ে ধুলো। সেখানকার ব্যবসায়ীদের কথায়, “খরিদ্দার সামলানোর আগে ধুলো সামলাতে দিনে তিন-চারবার রাস্তায় জল দিতে হচ্ছে।” এই রাস্তার উপরেই রয়েছে পুরসভার সবচেয়ে বড় বাজার, একাধিক চালকল, পুরসভা পরিচালিত মাতৃসদন। এই রাস্তার বংপুরে মোড়ে টোল নেওয়া হয়। এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, “বার বার বলার পরেও শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার হাল ফেরে না। দেখেশুনে মনে হয়, পুরসভা যেন নিদ্রায় রয়েছে।”
এক দিকে শহরের ‘মান’কে সামনে রেখে পুর উৎসব হচ্ছে, আর এক দিকে ভাঙা রাস্তা, নর্দমার আবর্জনা পেরিয়েই নিত্য যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বিরোধীরা তো বটেই, শহরের বিশিষ্টজনেরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কথায়, “পুর উৎসবের মধ্যে দিয়ে শহরের অনেক প্রতিভার বিকাশ ঘটছে। অনেক নামী গায়ক-গায়িকার অনুষ্ঠান আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ বারের থিম, বর্ধমানের উন্নয়ন। কিন্তু মেলার মাঠে যেতে গিয়ে যদি হোঁচট খেতে হয়, তাহলে কী আর ভাল লাগে!’’ কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দারের কটাক্ষ, “জেলা প্রশাসনের সামনের রাস্তায় মাটি উঁচু হয়ে আছে, সেখানে উৎসব করে শহরের উন্নয়নের মান বাড়াতে চায়ছে পুরসভা!” বিজেপির চিকিৎসক-নেতা সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “উৎসব ময়দানে যেতে গিয়েই শহরবাসী হারে হারে উন্নয়নের খানা-খন্দ টের পাচ্ছেন। বর্ধমান পুরসভা দৈনন্দিন কাজটুকুও করে না।”
পুরপ্রধান পরেশচন্দ্র সরকারের দাবি, “এত ভাল রাস্তা আর কোথাও নেই। আগেও এর চেয়ে ভাল রাস্তা ছিল না। নতুন পদ্ধতিতে রাস্তা হচ্ছে। নর্দমা পরিষ্কার থেকে সৌন্দর্যায়ন, মানুষের জন্য পুরসভা কাজকরে চলেছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)