Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হস্টেল সারানোর দাবিতে বিক্ষোভ, সরলেন সুপার

ভাঙাচোরা ভবন। আশপাশে সাপের উপদ্রব। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। হস্টেলে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই থাকতে হয় বলে অভিযোগ বর্ধমানের হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের

এমনই হাল হস্টেলের, দেখাচ্ছেন ছাত্রেরা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

এমনই হাল হস্টেলের, দেখাচ্ছেন ছাত্রেরা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

ভাঙাচোরা ভবন। আশপাশে সাপের উপদ্রব। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। হস্টেলে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই থাকতে হয় বলে অভিযোগ বর্ধমানের হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের। হস্টেলের সমস্যা মেটানোর দাবিতে শনিবার সকাল থেকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। দুপুরে পদত্যাগ করেন হস্টেল সুপার অসীমকুমার সামন্ত। পদ থেকে সরে দাঁড়ান ডেপুটি সুপার ললিতবরণ চক্রবর্তীও। এর পরে পড়ুয়ারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।

মাস কয়েক আগে নতুন হস্টেলের দাবিতে অবস্থান-বিক্ষোভ করেছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। শনিবার সেই পথেই হাঁটেন বর্ধমানের হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পড়ুয়ারা। হাসপাতালের মূল ভবনটি প্রায় দু’শো বছরের পুরনো। রাজা কীর্তিচাঁদ এটি নির্মাণ করেন। পাশে নতুন ভবন তৈরি করে কলেজ ও হাসপাতাল চলছে। তার পাশেই রয়েছে ছাত্রদের হস্টেল। সেটির হাল ভাল নয়।

কলেজ থেকে ভগ্নপ্রায় খিলান-গম্বুজের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় হস্টেলে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রয়েছে সাপের উৎপাতও। তা পেরিয়ে একটি হলঘরে ছেলেদের হস্টেল। চারপাশ ঝোপঝাড়ে ভর্তি। কার্যত পোড়ো বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়ের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাতে হয়, ক্ষোভ তাঁদের।

হস্টেলে একটি লম্বা হলঘরে প্লাই দিয়ে কিছু কামরা করা রয়েছে। ফুট আটেক সেই কামরায় থাকেন দু’জন করে পড়ুয়া। দু’দিকে দু’টি বিছানা, মাঝে একটি টেবিল। পড়ুয়াদের অভিযোগ, নড়াচড়ার জায়গা নেই। তার উপরে বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে জল পড়ে। মেঝেতে বালতি রাখতে হয়। অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকতে হয়। ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ে। ১৯ জন আবাসিকের অভিযোগ, চেয়ার কেনার জন্য ভর্তির সময়ে টাকা নেওয়া হলেও এখনও তা দেওয়া হয়নি।

আবাসিক প্রকাশ মিশ্র, শৌভিক কুণ্ডুরা জানান, প্রতি মাসে হস্টেল বাবদ সাড়ে পাঁচশো টাকা দিতে হয়। বিদ্যুতের বিল আলাদা। হস্টেলের জন্য ১০ হাজার টাকা ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ও দিতে হয়। তার পরেও কেন পরিষেবার এই হাল, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। মহিন হাসান নামে এক ছাত্রের কথায়, ‘‘হস্টেলে মাঝে-মধ্যেই সাপ ঢুকে পড়ে। বিদ্যুৎ চলে গেলে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই।’’ অসম থেকে পড়তে আসা অংশুমীর শর্মার অভিযোগ, ‘‘হস্টেলের জন্য কোনও সাফাইকর্মী বা প্রহরীও নেই।’’

হস্টেল সংস্কার ও ভাল পরিষেবার দাবিতে এ দিন সকাল থেকেই হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেন পড়ুয়ারা। ভিতরে আটকে পড়েন কলেজের অধ্যক্ষ-সহ আধিকারিকেরা। তবে রোগীদের আটকানো হয়নি। অধ্যক্ষ ছাত্রদের সঙ্গে কথা বললেও তাঁরা হস্টেলের সুপারের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন। কিছু নতুন চেয়ার কিনে এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও ফল হয়নি। শেষে ছাত্রদের সুপার অসীমবাবু পদত্যাগ করেন। পদ থেকে সরে দাঁড়ান ডেপুটি সুপারও।

সুপার অসীমবাবু বলেন, ‘‘ছাত্ররা আমার অপসারণ চেয়ে আন্দোলন করছিল। ওদের দাবি মেনে আমি সরে গেলাম। অন্য কেউ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করুক।’’ কলেজের অধ্যক্ষ পান্নালাল দে বলেন, ‘‘পুরনো ভবন, তাই সমস্যা রয়েছে। তাড়াতাড়ি বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করব।’’ তাঁর আশ্বাস, হস্টেলে সর্বক্ষণের জন্য এক জন কেয়ারটেকার রাখা হবে। কলেজের ছাত্র সংসদ প্রতিনিধি অভিজিৎ বিশ্বাসের দাবি, তাঁদের নৈতিক জয় হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE