Advertisement
২০ মে ২০২৪
Panchayat Poll 2018

কালনায় জোড়া খুনে রাশ পড়ল কলহে

পঞ্চায়েত ভোটের জন্য জেলার অন্যত্র দলের অন্দরের নানা ঝুটঝামেলা মেটাতে নেতারা যেখানে জেরবার, সুলতানপুর সেখানে যেন এক ‘মরূদ্যান’।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০৮:০৪
Share: Save:

ক’দিন আগেও এলাকায় ‘অন্তঃকলহে’ জেরবার ছিল দল—অন্তত ঘনিষ্ঠদের কাছে তেমন মানতেন তৃণমূলের অনেক নেতা। কিন্তু সুলতানপুর পঞ্চায়েতে প্রার্থিপদ চেয়ে দরবারে নাজেহাল হতে হয়নি নেতাদের। মাথাব্যথার কারণ হয়নি ‘গোঁজ’। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য জেলার অন্যত্র দলের অন্দরের নানা ঝুটঝামেলা মেটাতে নেতারা যেখানে জেরবার, সুলতানপুর সেখানে যেন এক ‘মরূদ্যান’। তবে পূর্ব বর্ধমানের কালনার পঞ্চায়েতটিতে এই উলটপুরাণ সম্ভব হয়েছে দু’টি প্রাণের বিনিময়ে, আক্ষেপ তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশের।

২৪ মার্চ বিকেলে প্রকাশ্যে রাস্তায় গুলিতে খুন হন সুলতানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সুকুর শেখ ও তাঁর সঙ্গী বাপন শেখ। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলেরই নেতা, কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সাদেক শেখ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ১৬ জন গ্রেফতার হলেও সাদেক এখনও পলাতক। সুকুরের ভাই, এ বার পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রার্থী নাসের শেখ বলেন, ‘‘এলাকা শান্ত হল, কিন্তু দু’টো জীবনের বিনিময়ে— এটাই আমাদের আক্ষেপ।’’

গত পঞ্চায়েত ভোটে সুলতানপুরে ১৮টি আসনের মধ্যে ১৬টি তৃণমূল ও দু’টি বামেরা জেতে। তৃণমূল সূত্রের খবর, তার পর থেকেই সুকুর ও সাদেকের গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। দু’পক্ষের গোলমালে বারবার রাশ টানতে কখনও বর্ধমান, কখনও কলকাতায় তাঁদের ডেকে বৈঠক করেন দলীয় নেতৃত্ব। তবে সমস্যা মেটেনি। উল্টে, পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে কারা গুরুত্ব পাবে, তা নিয়ে উত্তেজনা ছিল বলে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি।

ব্লক তৃণমূল সূত্রের খবর, সুলতানপুরে টিকিট বণ্টন নিয়ে অশান্তি, এমনকী, ‘গোঁজ’-প্রার্থীর সমস্যা তৈরির আশঙ্কায় ছিলেন দলের নেতারা। ভোট ঘোষণার সপ্তাহখানেক আগে এক বিকেলে দু’পক্ষ এলাকায় আলাদা ভাবে দু’টি বৈঠক করে। সুকুর ও তাঁর
সঙ্গীরা বৈঠক সেরে হরিশঙ্কর মোড়ে চা খেতে গেলে চড়াও হয় আততায়ীরা। গুলিতে খুন হয়ে যান সুকুর ও বাপন।

এর পরেই পাল্টে যায় আবহ। সাদেক-গোষ্ঠীর কয়েকজন গ্রেফতার হন। পঞ্চায়েতে প্রার্থী হন সুকুরের অনুগামীরা। পঞ্চায়েতটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে তৃণমূল। ১৮টি আসনের পাঁচটিতে শুধু বিরোধী প্রার্থী রয়েছেন। নাসের বলেন, ‘‘দাদা সব সময় গণ্ডগোল বন্ধ করার আবেদন জানাত। শান্তির বার্তা দিতে পঞ্চায়েতে মহাত্মা গাঁধীর
মূর্তিও বসিয়েছিল। এখন দাদার নাম করেই ভোট চাইছি।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাদেক অনুগামীর বক্তব্য, ‘‘পরিস্থিতি বুঝে আমাদের কেউ আর টিকিটের জন্য দরবার করেনি।’’ যদিও কালনার তৃণমূল নেতা তথা বিদায়ী জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর দাবি, ‘‘গোষ্ঠী-কলহের ব্যাপার নয়, যোগ্যদের প্রার্থী করা হয়েছে।’’ জোড়া খুনের প্রভাব সুলতানপুরে পড়েনি বলছেন? দেবুবাবুর জবাব, ‘‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। তবে রাজনীতি নিজের পথে চলবে।’’

মিছিলে মন্ত্রী, তবু দু’পক্ষের মারপিট

তৃণমূলের প্রচার মিছিলে মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট বেধে গেল। জখম জনা তিনেক। একটি গাড়িতে ভাঙচুর চলে। বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুরে। পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ হয়নি। রাজ্যের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার ছেলে মোস্তাক আহমেদ এ বার ভোটে দাঁড়িয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের আসনে। তাঁর সমর্থনেই বিকেলেপাকাপোল থেকে হাতিশালা পর্যন্ত মিছিল বেরোয়। সামনের সারিতে ছিলেন রেজ্জাক, মোস্তাকরা। তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম, নান্নু হোসেন, ওহিদুল ইসলামরাও মিছিলে পা মেলান। বিকেলে মিছিল শুরু কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানেনি তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE