Advertisement
E-Paper

দাপট বাইকের, ‘ছাপ্পা’রও

শাসকদলের বিরুদ্ধে মারধর, ছাপ্পা, বহিরাগত এনে ভোট লুঠের অভিযোগ তো উঠলই, কিছু কিছু জায়গায় তৃণমূল প্রার্থীদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০২:৩৯
ছিন্নভিন্ন: রোষের আঁচ ব্যালট বাক্সে, কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

ছিন্নভিন্ন: রোষের আঁচ ব্যালট বাক্সে, কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

বিরোধীরা আগেই বুথের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা করছিলেন। সোমবার রক্তপাত না হলেও জেলা জুড়ে বিক্ষিপ্ত গোলমালে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। শাসকদলের বিরুদ্ধে মারধর, ছাপ্পা, বহিরাগত এনে ভোট লুঠের অভিযোগ তো উঠলই, কিছু কিছু জায়গায় তৃণমূল প্রার্থীদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীরা ভোট লুঠ আটকাতে রুখে দাঁড়িয়েছেন এমন উদাহরণও মিলেছে।

পূর্বস্থলী

পূর্বস্থলীর বেশির ভাগ আসনেই ত্রিমুখী লড়াই ছিল। অভিযোগও উঠেছে ঝুড়ি ঝুড়ি। সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকেই বহিরাগত তাণ্ডবের অভিযোগ করতে থাকেন বিরোধীরা। কাটোয়া মহকুমার নানা জায়গা থেকে মোটরবাইক, ম্যাটাডরে এদের আনা হয় বলেও অভিযোগ। সিপিএম, বিজেপির দাবি, কালো-সাদা কাপড়ে মুখ বেঁধে মোটরবাইকে এলাকায় দাপায় বহিরাগতরা। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের খড়দত্তপাড়া, হাঁপানিয়ায় বিরোধী এজেন্টদের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। মুকশিমপাড়ার জেলা পরিষদের কংগ্রেস প্রার্থী নুরুল ইসলামের অভিযোগ, ১০৮, ১০৯ নম্বর বুথ সকাল থেকে ছিল বহিরাগতদের দখলে। পূর্বস্থলী ২-এর সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহার অভিযোগ, ‘‘বিকেল পর্যন্ত আমাদের হিসেবে ৫০-এর বেশি বুথে বাইকবাহিনী অবাধে ছাপ্পা মেরেছে। আমরা এখানে পুনরায় ভোটের আবেদন জানাব।’’ পিলা, পাটুলি, নিমদহ, কালেখাঁতল ২, যজ্ঞেশ্বরপুরে একের পর এক বুথ দখলের অভিযোগ আসতে থাকে।

বড়গাছি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে ভোটার ৯১৯। দুপুরেও বুথ ছিল সুনসান। গ্রামবাসীদের দাবি, ‘‘আমাদের বুথে যেতে হয়নি। ভোট দিয়েছে বহিরাগতরাই।’’ তাঁরা দেখান তাঁদের আঙুলে ভোটের কালি নেই। নিমদহ পঞ্চায়েতের চাঁদপাড়ায় তৃণমূলের বহিরাগতদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান সিপিএমের কর্মী ও গ্রামের বাসিন্দারা। মারধর করা হয় বাইকবাহিনীকে। বেলা ২টোর পরে পূর্বস্থলী ২-এর বহু বুথেই বিরোধী এজেন্ট দেখা যায়নি। সিপিএম নেত্রী অঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘পূর্বস্থলী ২ নয়, তৃণমূলের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ যে পঞ্চায়েত এলাকায় থাকেন সেখানকার সব বুথই শাসক দলের দখলে।’’ কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েতের পদ্মবিলপাড়ায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ভোট চলছিল। ১০৭৫ ভোটের মধ্যে ১১৫টা ভোট পড়েছিল। ন’টা নাগাদ কয়েকজন যুবক বুথে ঢুকে ব্যালট বাক্স বাইরে নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রশাসনের তরফে নতুন করে ব্যালট ছাপিয়ে বিকেলে ভোট নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। বিজেপির দাবি, বহিরাগতদের এনে তৃণমূল গোলমাল পাকিয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপি ওই কাজ করিয়েছে।

তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী সহদেব দত্ত ও তাঁর ছেলে আদর্শ দত্তকে মারের অভিযোগ পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাটের ন’পাড়া বুথে। মাথায় চোট নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি। সহদেবের অভিযোগ, ‘‘আমার স্ত্রী এই বুথের প্রার্থী। বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী আমাদের উপর চড়াও হন।’’ পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালীতলা প্রাথমিক স্কুলে তৃণমূলের প্রার্থী রোশনারা বিবির বিরুদ্ধে আবার অন্যের হয়ে ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁর যদিও দাবি, ‘‘আমি প্রতিবন্ধী, দৃষ্টিশক্তিহীনদের সাহায্য করছিলাম।’’

মার: বহিরাগতকে মার, কৃষ্ণদেবপুরে। নিজস্ব চিত্র

মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘ব্যালট পুড়েছে যেখানে সেখানে বিকেলে ভোট করানো হয়েছে। নিবার্চন শান্তিপূর্ণই।’’

কালনা

ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামকালনা, হাটকালনা পঞ্চায়েতের উত্তর গোয়াড়াতেও বাইকে এসে ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিকেল ৩টে নাগাদ কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে প্রায় ৪০ জনকে বাইকে দেখা যায়। পাশ দিয়েই যাচ্ছিল পর্যবেক্ষকের গাড়ি। পরে পুলিশ আসায় ছত্রভঙ্গ হয় বাহিনী। বিরোধীদের অভিযোগ, পূর্ব সাতগেছিয়ার বেশির ভাগ বুথ কালনা শহরের তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা দখল নেয়। দিঘিরপাড়, শাসপুর, বন্দেবাজ এলাকাতেও তাদের দেখা যায়। কালনা ২-এর কেলনই গ্রামে আবার বিজেপির মহিলারা তেড়ে এসে বুথ দখল আটকান। পালায় বাইকবাহিনী। মন্তেশ্বরে কংগ্রেস প্রার্থীদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের দাবি, ‘‘মন্তেশ্বরে মামুদপুরের বেশির ভাগ বুথ থেকে আমাদের প্রার্থী, এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কালনায় দলের জেলা পরিষদ প্রার্থী নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন প্রতিবাদে।’’ বিকেলে কৃষ্ণদেবপুর হাইস্কুলে তৃণমূল প্রার্থীকে মারের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। আহত চম্পক হাওলাদার, রঞ্জিত দাস। চম্পকের মাথায় ২৫টি সেলাই পড়ে। কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি তাঁরা। বিজেপির যদিও দাবি, তৃণমূলের বাইকবাহিনী ভোট লুঠের চেষ্টা চালাচ্ছিল। সাধারণ মানুষই জবাব দিয়েছেন।

মেমারি-জামালপুর

সকাল থেকেই বুথ দখলের অভিযোগ তোলে সিপিএম। নিমো ২ পঞ্চায়েতের বিনয়পল্লি, সাহানুই গ্রামের বুথে দেখা যায় তৃণমলের এজেন্টরা ভোট দিচ্ছে। আর বুথের বাইরে দাঁড়িয়ে ৭-৮ জন যুবক ভিডিওগ্রাফিতে বাধা দিচ্ছেন। তাতারপুর গ্রামেও ভোট দেওয়ার সময় মহিলারা দাঁড়িয়ে থেকে কে, কোথায় ভোট দিচ্ছেন তা দেখেন। আমাদপুর, পাল্লাগ্রাম, দলুইবাজার, কাশিয়াড়া, রাধাকান্তপুর, কিস্কিন্ধ্যা-সহ একাধিক গ্রামে তৃণমূলের লোকেরা সিপিএমের এজেন্টদের তুলে দিয়ে বুথের দখল নেন বলেও অভিযোগ। আমাদপুর পঞ্চায়েতের একটি বুথে কৌশিক হাজরা নামে এক জনকে মারা হয়। গোপগন্তার ১ পঞ্চায়েতে কবিবপুর অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলে আবার বুথ দখল করতে এলে রুখে দাঁড়ান গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ভোট লুঠ করার সময় ব্যালট বাক্স ও পেপার পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পাল্টা তৃণমূলের পোস্টার ছেঁড়েন গ্রামবাসীরা। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জামালপুরের সেলিমাবাদ, পাহাড়পুরে বুথ দখল করতে গিয়ে বাধা পায় তৃণমূল। রায়না, খণ্ডঘোষের বিভিন্ন জায়গায় বুথ দখল হয়। তারই মধ্যে সিপিএমের হাতে তৃণমূল প্রার্থী মার খান বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।

ভাতার-গলসি

ভাতারের মুরাতিপুরে আক্রান্ত ৫৩ ও ৫৪ নম্বর সংসদের দুই সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী। অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে। আহতদের ভাতার স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে বর্ধমানে পাঠানো হয়েছে। বামুনারা পঞ্চায়েতের ১১৪ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী সমাপ্তি হাটিও আক্রান্ত। অভিযুক্ত বিজেপি।

গলসি ১-এর লোয়া-রামগোপালপুরের বুথে বোমাবাজি হয়। জখম চার জন।

West Bengal Panchayat Elections 2018 Vote Loot Chappa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy