E-Paper

বাধা অনেক, মার্চের মধ্যে কি সই হবে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি?

কূটনৈতিক সূত্রে খবর, চুক্তি বাস্তবায়িত হতে কত সময় গড়াবে তা বলার সময় আসেনি। নাগেশ্বরনের মন্তব্যেই তার ইঙ্গিত রয়েছে। নভেম্বরের সময়সীমা রক্ষা করা যায়নি।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:১৬
(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে আশার কথা শোনালেন দেশের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন। তাঁর বক্তব্য, এই চুক্তি মার্চের মধ্যে সই না হলে তিনি ‘বিস্মিত’ হবেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি আশা করেছিলাম নভেম্বরের শেষের মধ্যে কিছু হবে। কিন্তু তা অধরাই রয়ে গিয়েছে। তবে এই অর্থবর্ষের মধ্যে সই না হলে বিস্মিত হব।’’ আজ আমেরিকার বাণিজ্য উপ প্রতিনিধি রিক সুইৎজ়ারের নেতৃত্বাধীন একটি দলের ভারত সফর শেষ হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বাণিজ্য ও আর্থিক চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মত হয়েছে আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। আজ সন্ধ্যায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা সত্ত্বেও সামনে আসছে বেশ কিছু প্রশ্ন।

কূটনৈতিক সূত্রে খবর, চুক্তি বাস্তবায়িত হতে কত সময় গড়াবে তা বলার সময় আসেনি। নাগেশ্বরনের মন্তব্যেই তার ইঙ্গিত রয়েছে। নভেম্বরের সময়সীমা রক্ষা করা যায়নি। ফলে মার্চের মধ্যে চুক্তি হবে, এমন কথাই বা নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে কী ভাবে?

চুক্তি ঝুলে রয়েছে কেন? সূত্রের মতে, ট্রাম্প এবং মোদী উভয়েই চুক্তি শেষে নিজ নিজ দেশে নিজেকে বিজয়ী হিসেবে দেখাতে চাইবেন। চুক্তি ঝুলে রয়েছে, এমন বার্তা মোদীর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়লেও সামলানোর উপায় রয়েছে। কিন্তু চুক্তির পর ট্রাম্প যদি হোয়াটই হাউসে দাঁড়িয়ে বলেন যে তাঁর শর্তে ভারত ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছে, তবে তা ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদীর পক্ষে চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, প্রতিনিধি দলকে দিল্লি পাঠানোর মুখেই ভারতের চালে বাড়তি শুল্ক চাপানোর কথা বলে নেতিবাচক সঙ্কেত দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। ভারত যদিও মোট রফতানি করা চালের মাত্র ৩% আমেরিকায় পাঠায়। আর গোটা পশ্চিম এশিয়ার বিরিয়ানি তৈরি হয় ভারতের বাসমতিতে। ফলে ট্রাম্পের হুমকিতে ভারতের অর্থনীতিতে বিশেষ ধাক্কা লাগার কথা নয়। কিন্তু আলোচনার সময়ে এই ধরনের বার্তা তিক্ততা তৈরির পক্ষে যথেষ্ট। অন্য দিকে, ভারতে বিপুল সয়াবিন ও ভুট্টা রফতানি করতে চাইছিলেন ট্রাম্প। দিল্লির সঙ্গে চুক্তি তাঁর কাছে লোভনীয় হওয়ার একটি কারণ এটি। কিন্তু ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ব্রাজ়িলের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছেন। নজরে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার আরও একটি দেশ। যেখানে সয়াবিন, ভুট্টার চাহিদা বিপুল। ফলে চটজলদি ভারতের সঙ্গে চুক্তি সই না হলে আমেরিকার ভাত হজম হবে না, বিষয়টি এমনও নয়।

চুক্তির পাশাপাশি আমেরিকার চাপানো ৫০% শুল্ক কমানো ভারতের অন্যতম অগ্রাধিকার। রুশ তেলের আমদানি কমানোর জন্য ২৫% শাস্তি-শুল্ক ওয়াশিংটন তুলে নেবে বলে আশা করছে সাউথ ব্লক। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের মূল্যবান পাথর, গহনা, বস্ত্র, কার্পেট, ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রাদির মতো ক্ষেত্রে ভারত ইতিমধ্যেই আমেরিকার শুল্কের চাপে ভুগতে শুরু করেছে। সেই চাপ কমানোর জন্য বিকল্প রফতানি গন্তব্যের খোঁজও চলছে। রফতানি বাড়ানো নিয়ে আলোচনা চলছে রাশিয়ার সঙ্গে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, ভারতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করিয়ে রফতানি সস্তা করার জন্যও সক্রিয় ভারত। যদিও তাতে আমদানির খরচ বাড়বে।

অমসৃণ পথ

লক্ষ্য ছিল নভেম্বরে প্রাথমিক চুক্তি। হয়নি।

বাণিজ্য আলোচনার ঠিক আগে চালের শুল্ক বাড়ানোর হুমকি ট্রাম্পের।

চুক্তি থেকে রাজনৈতিক মুনাফা চান নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনেই। ফলে সতর্ক উভয় পক্ষ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India USA Trade Deal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy