Advertisement
E-Paper

খারাপ ফলে দোষারোপ সন্ত্রাসকে

লোকসভা নির্বাচনে বেশ খানিকটা ছাপ ফেললেও পুরসভা নির্বাচনে ধস নামল গেরুয়ায়। বর্ধমানের চারটি পুরসভার মধ্যে দাঁইহাটের একটি আসন ছাড়া আরও কোথাও সেভাবে দেখা মিলল না বিজেপির। বিজেপি যদিও খারাপ ফলের কারণ হিসেবে সন্ত্রাসকেই দায়ী করেছে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০১:৫০

লোকসভা নির্বাচনে বেশ খানিকটা ছাপ ফেললেও পুরসভা নির্বাচনে ধস নামল গেরুয়ায়। বর্ধমানের চারটি পুরসভার মধ্যে দাঁইহাটের একটি আসন ছাড়া আরও কোথাও সেভাবে দেখা মিলল না বিজেপির। বিজেপি যদিও খারাপ ফলের কারণ হিসেবে সন্ত্রাসকেই দায়ী করেছে।

লোকসভা ভোটে কালনার ১৮টি ওয়ার্ড মিলিয়ে হাজার ছয়েক ভোট পেয়েছিল বিজেপি। অথচ পুরভোটে শহরের বহু বুথে এজেন্টই দিতে পারেনি তারা। কর্মীদের দাবি, লোকসভা ভোটের পরপরই সংগঠন বেশি খানিকটা চাঙ্গা হয়। শহরের নানা পরিষেবামূলক সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে নামে। কিন্তু পুরভোটে তার কোনও প্রভাবই সেভাবে পড়েনি। ১৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া কোনও ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানেও তাদের দেখা মেলেনি। দাঁইহাটে বিজেপির একমাত্র জয়ী প্রার্থী কাজলরানি সাহা। তৃণমূল প্রার্থী স্বাধীনা নন্দীকে ২৩ ভোটে হারিয়েছেন তিনি। মেমারিতেও ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে বিজেপি। যদিও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী স্বপন বিষয়ীর সঙ্গে জয়ের ব্যবধান ৮১১ ভোট। কাটোয়ায় লোকসভা ভোটের নিরিখে সাতটি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি, দ্বিতীয় স্থানে ছিল আরও ৭টি আসনে। কিন্তু পুরভোটে ২, ৭, ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থান ছাড়া প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ভরাডুবির কারণ কী? বিজেপির একাংশের মতে বনগাঁ উপনির্বাচনের পর থেকে ভোটারদের মধ্যে ভাটা দেখা যায়। লোকসভা নিবার্চনের পরে সিপিএম, তৃণমূল থেকে যেভাবে কর্মীদের বিজেপিতে যোগদান দেখা যাচ্ছিল তা অনেকাই থমকে যায়। পরে পুরভোটের মাস তিনেক আগে থেকে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নামেন বিজেপি কর্মীরা। কর্মীদের একাংশের মতে, এই সময় আন্দোলন ছেড়ে অন্য পথে আসায় সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। অনেকেই ভাবেন গেরুয়া শিবির লড়াই থেকে সরে যাচ্ছে। এছাড়া তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা নিয়ে দলের অন্দরেই যে ক্ষোভ ছিল, তার সুফল আশা করেছিলেন কিছু বিজেপি নেতা। কিন্তু কার্যত তা হয়নি। দু’চার জন মাঝারি মাপের নেতা কর্মীরা ছাড়া শাসক দল ছেড়ে বিশেষ বিরোন নি নেতারা। ফলে বিপক্ষের গোষ্ঠীকোন্দলের ভরসায় নিজেদের ভোট ব্যাঙ্কে লাভের যে আশা করেছিলেন বিজেপি নেতারা তাও ফলপ্রসূ হয় না। জেলার এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘এ বার তিনটি পুর এলাকায় প্রার্থী হতে চেয়ে প্রচুর আবেদন জমা পড়েছিল আমাদের কাছে। জানতাম যাঁরা টিকিট পাবেন না, তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে। কিন্তু ক্ষোভকে যাতে বিরোধীরা হাতিয়ার করতে না পারে তাই আমাদের স্ট্র্যাটেজি ছিল মনোনয়নের দু’এক দিন আগে তালিকা প্রকাশ করা।’’ বিজেপি নেতাদের একাংশেরও দাবি, একে তো অন্য দল থেকে সামাজিক পরিচিতি রয়েছে এমন লোকজন যোগ দেন নি, তার উপরে বহু ওয়ার্ডেই প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরেই ছিল মতানৈক্য ছিল। যার জেরে নিজেদের প্রার্থীর হয়েই প্রচারে নামেন নি অনেকে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে ভোটারদের কাছে। তবে এরপরেও বেশ কিছু ওয়ার্ডে বিজেপি ভাল ভোট পাওয়ার আশা ছিল বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু শাসক দল সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে তা হতে দেয়নি বলে বিজেপি নেতাদের অভিযোগ। কিছু নেতা আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি করেন, ‘‘একেবারেই স্থানীয় ভোট বলে ভোটারদের একাংশ শাসক দলের বিরোধিতার সাহস দেখাতে পারেনি।’’

তবে বিজেপির বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিক জানান, দাইহাটে একটি আসনে দল জয়লাভ করলেও আরও বেশ কয়েকটি আসনে দলীয় প্রার্থীরা ভাল লড়াই দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কাটোয়াতে লোকসভার থেকে খারাপ ফলের কারণ এখানে শাসক এবং কংগ্রেস দু’দলই চূড়ান্ত সন্ত্রাস চালায়। তাতে সাধারন ভোটাররা ঠিকঠাক ভোটই দিতে পারেন নি। ঠিকঠাক ভোট পড়লে আমাদের ভোট আরও বাড়ত।’’ কালনার ক্ষেত্রেও তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করেছেন তিনি। কিন্তু বারবার সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলার পরেও সিপিএম ৬টি আসন পায় কালনায়। সেক্ষেত্রে বিজেপি ব্যর্থ কেন? রাজীববাবুর উত্তর, ‘‘শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই সিপিএম আসন পেয়েছে।’’ যদিও বিজেপির এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কে কি বলছে জানি না। আমরা হিসেব করে দেখেছি শাসক দল যদি কালনায় গণতন্ত্রের পথে হাঁটত, তাহলে বেশির ভাগ আসনেই বামপন্থীরা জিতত।’’

police kedarnath bhattacharya bjp vandalism municipal election poll vote
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy