Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সইফুলকে গ্রেফতারের দাবিতে বিজেপি-র ক্ষোভ

গত ৯ ডিসেম্বর রাতে কাঁকসার সরস্বতীগঞ্জ ও রূপগঞ্জের মাঝে জঙ্গলের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন সন্দীপ। বিজেপি-র অভিযোগ, জাটগড়িয়ার বাসিন্দা, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য তথা এলাকায় বালি মাফিয়া বলে পরিচিত সইফুলের নেতৃত্বে হামলা চলে।

দুর্গাপুরে ডিসি-র (পূর্ব) কার্যালয়ের সামনে হুলস্থূল। নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুরে ডিসি-র (পূর্ব) কার্যালয়ের সামনে হুলস্থূল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

দলের বুথ সভাপতি সন্দীপ ঘোষ খুনে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত শেখ সইফুলকে গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি। বিজেপি-র অভিযোগ, অন্যতম অভিযুক্ত শেখ সইফুল শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্য হওয়াতেই পুলিশ তাঁকে ধরেনি। উল্টে, এ দিন বিক্ষোভ চলাকালীন বিজেপি নেতাদের উপরে লাঠি হাতে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

গত ৯ ডিসেম্বর রাতে কাঁকসার সরস্বতীগঞ্জ ও রূপগঞ্জের মাঝে জঙ্গলের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন সন্দীপ। বিজেপি-র অভিযোগ, জাটগড়িয়ার বাসিন্দা, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য তথা এলাকায় বালি মাফিয়া বলে পরিচিত সইফুলের নেতৃত্বে হামলা চলে। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু সইফুল অধরাই। তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে মহকুমাশাসকের (দুর্গাপুর) কার্যালয়ের সামনে টানা তিন দিন ধরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।

একই দাবিতে শুক্রবার দলীয় কর্মী-সদস্যেরা মিছিল করে যান ডিসি-র (পূর্ব) কার্যালয়ে। মূল গেটটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দ্বিতীয় গেটটি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। মিছিলকারীরা সেই গেটটি দিয়ে ভিতরে ঢুকতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। সেই সময় পুলিশের লাঠির ঘায়ে বিজেপি-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, দলের নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কয়েক জন জখম হন বলে অভিযোগ। এর পরেই গেটের কাছে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। রাজুবাবু বলেন, ‘‘ডিসি (পূর্ব) স্বয়ং মারধর করেছেন।’’ লক্ষ্মণবাবুর অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের ছত্রছায়ায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন অভিযুক্তেরা। অথচ তাঁদের গ্রেফতারের দাবি জানানোয় আমাদের পুলিশের লাঠি খেতে হল।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও এ দিন কলকাতায় অভিযোগ করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই। এখানে গুন্ডারাজ চলছে। এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ।’’

পুলিশের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ তাঁদের উপরে লাঠি হাতে চড়াও হন। এমনকি, পুলিশের ব্যারিকেডও ভেঙে ফেলা হয়। ভেঙে গিয়েছে কার্যালয়ের পাঁচিলের একাংশও। ডিসি (পূর্ব) অভিষেকবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ লাঠি চালায়নি। পুরো ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়েছে। তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

লক্ষ্ণণবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘সইফুলের বেআইনি কারবারের টাকা নেয় শাসক দল। তাই তাঁকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এমনকি, অভিযোগকারী ও তাঁদের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।’’ যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির নেতারা রূপগঞ্জে গিয়ে দেখেছেন, গ্রামের মানুষ কেউ তাঁদের পাশে নেই। নিজেদের গা বাঁচাতে আমাদের ঘাড়ে এমন মিথ্যা অভিযোগ চাপাচ্ছেন তাঁরা।’’

খুনের ঘটনার বিষয়ে ডিসি (পূর্ব) অভিষেকবাবুর বক্তব্য, ‘‘রূপগঞ্জের ঘটনার তদন্তে কোনও রাজনৈতিক যোগ মেলেনি। ইতিমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনের দিন যে মোটরবাইকটি ব্যবহার করা হয়েছিল, তা-ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’ শেখ সইফুলকে কি গ্রেফতার করা হবে? ডিসি-র (পূর্ব) বক্তব্য, ‘‘যাঁরা প্রকৃত দোষী তাঁদের সবাইকেই গ্রেফতার করা হবে।’’

এ দিন বিজেপি-র ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বিকৃত করার অভিযোগ ওঠে বিজেপি-র এক কর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূল আইনজীবী সেলের নেতা দেবব্রত সাঁইয়ের নেতৃত্বে দুর্গাপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশ থানায় নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি জানান তাঁরা। ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। সেই সঙ্গে বিজেপি-র জেলা সভাপতি লক্ষ্মণবাবু জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সইফুলকে গ্রেফতার না করা হলে দলের রাজ্য সভাপতির নেতৃত্বে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Protest BJP Durgapur-Asansol Commissionerate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE