Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘নাক’ আসতেই ভোলবদল

ছুটি বাতিল আধিকারিক, কর্মীদের। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন পরিকাঠামো। আবর্জনাকে ম্যারাপের আড়ালে রেখে ঝাঁ চকচকে রাজবাটি, গোলাপবাগ চত্বর।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বাগান পরিচর্যা। নিজস্ব চিত্র।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বাগান পরিচর্যা। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

ছুটি বাতিল আধিকারিক, কর্মীদের। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন পরিকাঠামো। আবর্জনাকে ম্যারাপের আড়ালে রেখে ঝাঁ চকচকে রাজবাটি, গোলাপবাগ চত্বর। —ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের (নাক) বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের পরিদর্শন উপলক্ষে এ ভাবেই ‘রূপবদল’ ঘটেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের। কর্মী, আধিকারিকদের মতে, নাকের মূল্যায়ণে ভাল গ্রেড পেতেই এমন রূপবদল।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম অনুসারে, চার বছর অন্তর নাক-এর মূল্যায়ণ করানো প্রয়োজন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আট বছর আগে নাকের পরিদর্শন হয়। সেই সময় নাকের মূল্যায়ণে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছিল ‘বি প্লাস’। এ বছর নাকের মূল্যায়ণ না হলে বিভিন্ন খাতে দেওয়া ইউজিসি-র বরাদ্দ আটকে যেত। ভাল গ্রেড মিললে ইউজিসি-র বরাদ্দ বাড়বে এবং রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান থেকেও শিক্ষা ও পরিকাঠামোর জন্য বিশেষ অনুদান পাওয়া যাবে। এই জন্যই নাকের মূল্যায়ণে সর্বোচ্চ গ্রেড পেতে দীর্ঘমেয়াদী ভাবনা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজানো হয়েছে বলে মত এক প্রশাসনিক কর্তার।

আর সেই ‘সাজানো’ বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম দিন থেকেই পরিদর্শকদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। এ দিন বেলা ন’টা নাগাদ উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারের কাছে যান নাকের পরিদর্শকেরা। সূত্রের খবর, উপাচার্য শুরুর দিন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কোন কোন ক্ষেত্রে কী ভাবে এগিয়েছে তা পরিদর্শকদের জানান। এরপরেই পরিদর্শকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত ক্যাম্পাসে যান। প্রথমেই আইকিউএসি-তে (ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাসুয়ের‌্যান্স সেল) যান। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার পরিদর্শনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক পরিদর্শকদের সামনে দাবি করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে সম্পূর্ণ ভাবে ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। ই-জার্নাল, ই-বুক ও নতুন বই কেনার জন্যই ৩০ লাখ টাকা খচ হয়েছে। বই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে কী কী গবেষণা হচ্ছে, ল্যাবরেটারির হাল কেমন, তাও ঘুরে দেখেন নাকের পরিদর্শকেরা।

পরিদর্শনে নাকের সদস্যেরা।

নাকের পরিদর্শনের কথা মাথায় রেখে আরও বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক। কী রকম? গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের জন্য ‘ই-কর্নার’ তৈরি, প্রতিটি বিভাগে ‘ফ্রি ওয়াইফাই’য়ের ব্যবস্থা করা রয়েছে। পুরসভা ও জেলা পরিষদের হাতে থাকা কৃষ্ণসায়র পার্ককে ‘ইকো পার্ক’ হিসেবে তৈরি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও প্রতিটি ছাত্রাবাসে মাল্টিজিম ও ছাত্রী আবাসে ন্যাপকিন ভেন্ডার মেশিন বসানো হয়েছে। বিদ্যুতের সাশ্রয়ের জন্য সোলার-প্যানেল বাসনোর কাজও শুরু হয়েছে। আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরির জন্য দু’টি আধুনিক যন্ত্র কেনা হয়েছে। সেই সার ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি ফার্মে। গবেষণার জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়ে টিইএম (ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ) কেনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ঘাটতি মেটাতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগও করে হয়েছে। বেশ কিছু ছাত্রাবাসে সুপার ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী, সহকারী অধ্যাপক পদে থাকা শিক্ষকদের সুপার নিয়োগ করতে হয়। স্থায়ী সুপার না পেয়ে অস্থায়ী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি যাতে না থাকে, সে জন্য গত ১৭ অক্টোবর থেকে নাক পরিদর্শন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আধিকারিক, সাধারণ কর্মীদের পুজোর ছুটিও বাতিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের সৌন্দর্যায়নেও জোর দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববদ্যালেয়র রূপবদলের এ দিন সামান্য হলেও তাল কেটেছে এক বিএড ছাত্রের অভিযোগে। জেলাশাসকের কাছে এ দিন ওই ছাত্র অভিযোগ করেন, ফলপ্রকাশ হলেও মার্কশিট মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এক জন ছাত্রের ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

পরিদর্শন-পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর এমন ‘রূপবদলে’র ভাল ফলই মিলবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NAAC burdwan university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE