Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কম্পিউটার এডেড লার্নিং

স্কুলে নজরদারি অভাবে ধুঁকছে প্রকল্প

পর্যবেক্ষণ হয় না। তার ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে কম্পিউটার এডেড লার্নিং (ক্যাল) প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, স্কুলের দৈনন্দিন পড়াশোনা প্রাণবন্ত করে তুলতে কম্পিউটারের মাধ্যমে তা ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা, যাতে পড়ুয়াদের মনের মধ্যে পড়া গেঁথে যায়। তা ছাড়া পড়ুয়াদের আরও বেশি করে স্কুলে ধরে রাখা এবং স্কুলছুটের সংখ্যা কমানোও এই অন্যতম লক্ষ্য।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০১
Share: Save:

পর্যবেক্ষণ হয় না। তার ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে কম্পিউটার এডেড লার্নিং (ক্যাল) প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, স্কুলের দৈনন্দিন পড়াশোনা প্রাণবন্ত করে তুলতে কম্পিউটারের মাধ্যমে তা ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা, যাতে পড়ুয়াদের মনের মধ্যে পড়া গেঁথে যায়। তা ছাড়া পড়ুয়াদের আরও বেশি করে স্কুলে ধরে রাখা এবং স্কুলছুটের সংখ্যা কমানোও এই অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু সর্বশিক্ষা অভিযান জানতে পেরেছে, নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অভাবে এবং শিক্ষক সমস্যার কারণে বর্ধমান জেলার ১৬৮টি স্কুলের মধ্যে হাতেগোনা ১০-১৫টি স্কুলে এই প্রকল্প ঠিক মতো চলছে। বাকিগুলির অবস্থা তথৈবচ। তার মধ্যে আবার বেশ কিছু স্কুলে এই প্রকল্পের কম্পিউটার অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে।

সর্বশিক্ষা অভিযানের জেলা প্রকল্প আধিকারিক ভাস্কর পাল বলেন, “স্কুলগুলিতে সরেজমিন তদন্ত করে দেখার জন্য তিন জনের কমিটি তৈরি করা হবে। স্কুল পরিদর্শকদেরও পর্যবেক্ষণ করার জন্য বলা হয়েছে। সমস্ত স্কুল পর্যবেক্ষণ করার পরে কম্পিউটার এডেড লার্নিং প্রকল্পের কী হাল তা জানা যাবে। তার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে সর্বশিক্ষা অভিযানের কর্তারা স্বীকার করেছেন, হাতেগোনা ১০-১৫টি স্কুল ছাড়া আর কোনও স্কুলেই সে ভাবে এই প্রকল্প চলছে না। যে সব স্কুলে প্রকল্প চলছে সেখানকার শিক্ষকেরা নিয়মিত ভাবে জেলা সর্বশিক্ষা অভিযান দফতরে যোগাযোগ রাখেন।

২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে বর্ধমানের কয়েকটি স্কুলে প্রথম ‘ক্যাল’ চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের জন্য স্কুল পিছু চার জন করে শিক্ষক নিয়ে শুরুতেই ১৫ দিনের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করে জেলা সর্বশিক্ষা অভিযান দফতর। গোড়ায় বর্ধমান জেলায় বারো হাজার ছাত্রছাত্রী নিয়ে এই প্রকল্প চালু হয়েছিল। প্রথম বছর স্কুলগুলিকে একটি করে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছিল। ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুরোদমে এই প্রকল্প চালু করে সর্বশিক্ষা অভিযান। তখন থেকে ফি-বছর ২২টি স্কুলকে বেছে নিয়ে চারটি করে কম্পিউটার ও দু’টো করে প্রজেক্টর দেওয়া হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১৬৮টি স্কুলে রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ছাত্রছাত্রী। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে প্রকল্পের আওতাভুক্ত স্কুলগুলিতে নজরদারি চালানোর জন্য তিন বছর মেয়াদের ১১ সদস্যের ডিস্ট্রিক্ট রিসোর্স গ্রুপ (ডিআরজি) তৈরি করা হয়েছিল। এই গ্রুপের সদস্যেরা বিভিন্ন সময়ে নানা স্কুলে পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট দিতেন। তা রাজ্য সর্বশিক্ষা অভিযান দফতরেও পাঠানো হত।

২০১১ সালে রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ‘ক্যাল’ নিয়ে কোনও ‘নির্দেশিকা’ না আসায় সেই বছর অগস্টের পর থেকে ডিআরজি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে। এই প্রকল্প চালানোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান হিসেবে দেয় জেলা সর্বশিক্ষা অভিযান দফতর। দফতর সূত্রে জানা যায়, ফি-বছর ৫০ লক্ষ টাকা করে এই প্রকল্পের জন্য পাওয়া যায়। সেখান থেকে চারটি কম্পিউটার ও দু’টি প্রজেক্টর কিনে দেয় সর্বশিক্ষা অভিযান। এ ছাড়াও শুরুতেই স্কুলগুলিকে ব্রডব্যন্ড সংযোগ নেওয়ার জন্য এবং আনুষাঙ্গিক জিনিস কেনার জন্য সাড়ে ছ’হাজার টাকা করে দিয়ে থাকে সর্বশিক্ষা অভিযান। এই বিভাগের এক কর্তার দাবি, “তিন বছর শেষ হওয়ার আগে ডিআরজি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাজ্য দফতর থেকে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। তার ফলে বিগত সময়ের ডিআরজি কার্যহীন হয়ে পড়ে রয়েছে।”

আর তার পর থেকেই ‘ক্যাল’ প্রকল্প ধুঁকতে শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে। সর্বশিক্ষা অভিযানের কর্তারা জেনেছেন, আসানসোল ও কাটোয়ার বেশ কয়েকটি স্কুলে কম্পিউটার-প্রজেক্টর সবই অফিসঘরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোথাও-কোথাও কম্পিউটারগুলি দফতরের কাজে ব্যবহার করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও বেশ কিছু স্কুলে কম্পিউটার বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। দাঁইহাটের একটি স্কুলে যেমন কম্পিউটার এক বছর ধরে পড়ে থাকলেও ‘ইনস্টল’ হয়নি। এই পরিস্থিতি রয়েছে আরও বেশ কিছু স্কুলে। নানা স্কুলে আবার ‘ক্যাল’ প্রকল্পকে পড়ুয়াদের মধ্যে জনপ্রিয় করার কোনও উদ্যোগই হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

উল্টো দিকে অবশ্য এমন স্কুলও রয়েছে যেখানে ‘ক্যাল’ প্রকল্প চালু হওয়ার সুফল পেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সর্বশিক্ষা অভিযান সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুরের একটি স্কুলে টিফিনের পরে ক্লাসে পড়ুয়াদের উপস্থিতি অস্বাভাবিক হারে কমে যেত। সেখানে নিয়মিত ভাবে ‘ক্যাল’ চালু থাকায় স্কুল পালানোর সংখ্যা কমে গিয়েছে। মেমারির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কেশব ঘোষাল বলেন, “আমরা ‘ক্যাল’ চালানোর জন্য ১৫০ আসনের একটি বড় ঘর তৈরি করেছি। সেখানে সব সময়ের জন্য এক জন শিক্ষকও রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের উপরে পড়ুয়াদের মুখাপেক্ষী থাকতে হচ্ছে না। এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।” রায়নার একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, “ওই প্রকল্পের জন্য আমাদের স্কুলে পড়াশোনার মান বাড়ছে। পাশের হারেও বাড়ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE