E-Paper

পুরসভার টোল আদায়ের বিরুদ্ধে রায়

পুরসভা বেআইনি ভাবে টোল নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’ ২০২৩ সালের নভেম্বরে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করে।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৫
বাঁ দিক থেকে, মঙ্গলবারও টোল নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বুধবার তা বন্ধ। হ্যানিম্যান সরণিতে।

বাঁ দিক থেকে, মঙ্গলবারও টোল নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বুধবার তা বন্ধ। হ্যানিম্যান সরণিতে। নিজস্ব চিত্র।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের দায়ের করা মামলায় দিন দশেক আগে শিল্পতালুকের বিভিন্ন রাস্তায় পুরসভার টোল আদায়ের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট। তার পরেও কয়েক দিন টোল নেওয়া চলেছে বলে অভিযোগ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, টোলের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলিকে চিঠি দিয়ে আদালতের রায়ের কথা আগেই জানানো হয়েছিল। বুধবার থেকে টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের মোট ৭টি রাস্তায় টোল নেওয়া হয়— শ্যামপুর-নডিহা সড়ক, নাসের অ্যাভিনিউ, হ্যানিমান সরণি, বনফুল সরণি, কাঞ্জিলাল অ্যাভিনিউ, পিসিবিএল রোড ও নাচন রোডে। টেন্ডার ডেকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। প্রায় সব রাস্তা ধরেই যাতায়াত করে বিভিন্ন শিল্পতালুকের যানবাহন। ৬ চাকার যানের ক্ষেত্রে গড়ে ১০০-১৫০টাকা, ১৬ চাকা পর্যন্ত ১৪০-২০০টাকা এবং তার বেশি চাকার যানের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা টোল নেওয়া হয়। শিল্পোদ্যোগীদের অভিযোগ, জেলার অন্য শিল্পতালুকের রাস্তায় কোনও টোল নেওয়া হয় না। শুধু দুর্গাপুরেই তা নেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, এর জন্য দুর্গাপুরে পণ্য পরিবহণে প্রতি টনে গড়ে ৫০ টাকা করে বেশি লাগে। অনেক সময়ে একটি গাড়িকে দু’তিনটি রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। সব রাস্তাতেই টোল দিতে হয়। আসা ও যাওয়া, দুই সময়েই টোল দিতে হয়। সব মিলিয়ে, বছরে কয়েক হাজার টাকা টোল বাবদ খরচ হয়।

পুরসভা বেআইনি ভাবে টোল নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’ ২০২৩ সালের নভেম্বরে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করে। অভিযোগ করা হয়, আগে টোলের পরিমাণ কম থাকায় তত সমস্যা হত না। কিন্তু গত কয়েক বছরে তা অনেক বেড়েছে। পুরসভা, শিল্প ও শ্রম দফতরে বিষয়টি জানিয়েও ফল হয়নি। সংগঠনের আইনজীবী সন্দীপ চক্রবর্তী জানান, ১০ জানুয়ারি হাই কোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ রায় দেন, দুর্গাপুর পুরসভা রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনও টোল আদায় করতে পারবে না।

শিল্পোদ্যোগীদের একাংশের অভিযোগ, কোর্টের নির্দেশের পরেও মঙ্গলবার পর্যন্ত টোল আদায় বন্ধ হয়নি। যদিও পুরসভার কমিশনার আবুল কালাম আজাদ ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, “টোল সংগ্রহকারী সংস্থাগুলিকে চিঠি দিয়ে হাই কোর্টের রায়ের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া কী ভাবে পুরসভা টোল নিচ্ছে? কমিশনার জানান, বছরের পর বছর এ ভাবেই বিষয়টি চলে এসেছে। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন ও দুর্গাপুর পুরসভা, দুই পক্ষকেই ২৪ জানুয়ারি শুনানিতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেলে টোল আদায় আইনি হয়ে যাবে। তাই পুর কর্তৃপক্ষের নজর এখন ওই শুনানির দিকে।

তবে ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর আইনজীবী কৌশিক বলেন, “হাই কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাজ্য পুর আইন ২০০৬-এর ১৫৪ ধারা অনুযায়ী, পুরসভা কোনও যানবাহনের ক্ষেত্রে টোল নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে শুনানির কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে গেলে, তা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা বিষয়টি জানিয়ে পুরসভাকে নোটিস পাঠিয়েছি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman Calcutta High Court

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy