Advertisement
০২ মে ২০২৪
Cancer Warrior

অশক্ত শরীরেও অসুস্থদের আগলে রাখেন অর্চনা

২০১২ জুনে পেটের নীচের অংশে আচমকা যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার পরে প্লীহায় ক্যানসার ধরা পড়ে।

গুসকরার স্বাস্থ্যকর্মী অর্চনা।

গুসকরার স্বাস্থ্যকর্মী অর্চনা। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
গুসকরা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৩৬
Share: Save:

এগারো বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন। বাদ গিয়েছে শরীরের তিনটি অঙ্গ। তার পরেও অদম্য গুসকরার সংহতি পল্লির বছর উনষাটের অর্চনা চট্টোপাধ্যায়। কেউ মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন খবর পেলেই ছুটে যান সেখানে। নিজের উদাহরণ দিয়ে লড়াইয়ের সাহস জোগান তাঁকে।

১৯৮৫ সালে কুড়ি বছর বয়সে গুসকরা এপি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীর কাজে যোগ দেন অর্চনা। ৩৯ বছরের কর্মজীবনে বহু গর্ভবতী, প্রসূতি, নবজাতকদের চিকিৎসা করেছেন, টিকা দিয়েছেন। সবার সঙ্গেই কেজো সম্পর্কের বাইরে মায়ার বাঁধন তৈরি হয় তাঁর। কারও শরীর খারাপ হয়েছে জানতে পারলে নিকট আত্মীয়ের মতো ছুটে যান। নিজের বেতন থেকে অপুষ্ট শিশুদের চিকিৎসা, দুঃস্থ মায়েদের পথ্যের খরচ করেন। একদিন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গেলে ফোন করে দিদির খোঁজ নেন রোগীরাও।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, ‘‘নিজে একটা মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে অন্যদের পরিষেবা দেওয়া অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ওই স্বাস্থ্যকর্মীর পাশে যে আমরা সকলে আছি, তা জানাতে আমি নিজে গিয়ে ওঁর সঙ্গে দেখা করব।’’

২০১২ জুনে পেটের নীচের অংশে আচমকা যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার পরে প্লীহায় ক্যানসার ধরা পড়ে। একদম প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ায় কলকাতার নার্সিংহোমে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। বাদ পড়ে প্লীহা, ওমেনটাম এবং ইউটেরাস। এরপরে প্রায় সাত বছর সুস্থ ছিলেন। ২০২২ সালে ফের তাঁর লিভার ও কিডনির একাংশে ক্যানসার ধরা পড়ে। এখনও পর্যন্ত ১৩ বার কেমোথেরাপি হয়ে গিয়েছে তাঁর। অর্চনা বলেন, ‘‘আমি ঘরে থাকতে পারি না। মানুষ আমায় ভরসা করেন। তাই কেমো নিয়েও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাই। ২৪ ঘণ্টা মোবাইল খোলা রাখি। মানুষের ভালবাসাতেই বেঁচে আছি হয়তো।” লড়াইটা শুরু হয়েছিল ছোট থেকেই। অভাবের সংসারে বাবাকে সাহায্য করতে কখনও দোকানের চায়ের কাপ ধুয়ে দিয়েছেন, কখনও সাইকেলের টায়ারের ফুটো সারিয়েছেন অর্চনা। তাঁর দাবি, ‘‘খুব কাছ থেকে অভাব দেখেছি। তাই কাউকে ওই অবস্থায় দেখলে যেটুকু পারি পাশে থাকার চেষ্টা করি।’’ স্বামী অশোক চট্টোপাধ্যায়, ছেলে ইন্দ্রনীল, মেয়ে শতভিষা সবসময় তাঁর লড়াইয়ে পাশে রয়েছেন। জিএনএম নার্সিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া শতভিষা বলেন, “মাকে কখনও ভেঙে পড়তে দেখিনি। আমিও মানুষের সেবা করতে এই পেশায় আসতে চাই।’’

গুসকরার পুরপ্রধান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, “গুসকরাবাসীর সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক খুবই নিবিড়। শরীরের ওই অবস্থাতেও কাজ নিয়ে সচেতন উনি। ওঁকে কুর্নিশ জানাই।”

রাজু শর্মা, চাঁদ ঘোষ, সন্তোষ বাহির, নিতু মাহান্ত, অপর্ণা সমাদ্দারেরা বলেন, “দিদিমনি আমাদের অসময়ে দশ হাত দিয়ে আগলে রাখেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Guskara Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE