চিকিৎসকের স্ত্রীকে খুন এবং চিকিৎসককে খুনের চেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত হলেন গাড়িচালক। শুক্রবার রায় ঘোষণা করেছে বর্ধমান আদালত। আগামী সোমবার আসামির শাস্তি ঘোষণা হওয়ার কথা।
দোষীর নাম তপন দাস। বর্ধমান শহরের বাবুরবাগে তাঁর বাড়ি। আদালত সূত্রে খবর, বর্ধমান শহরের খোসবাগান লাগোয়া তুলা লেনের বাসিন্দা চিকিৎসক সুব্রত নাগের গাড়ি চালাতেন তপন। ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর দুপুরে চিকিৎসকের স্ত্রী মৌসুমী নাগের কাছে বেতন চান তপন। কিন্তু মাস শেষ হওয়ার আগে বেতন দিতে রাজি হননি চিকিৎসক-পত্নী। এ নিয়ে গাড়িচালকের সঙ্গে তাঁর বচসা শুরু হয়। সেই সময় শৌচাগারে ছিলেন চিকিৎসক। শৌচাগার থেকে বেরিয়ে তিনিও চালকের কাছে জানতে চান, মাস শেষ হওয়ার আগে কেন তাঁকে বেতন দিতে হবে? ওই নিয়ে বচসার সময় উত্তেজিত হয়ে তপন লাঠি দিয়ে চিকিৎসককে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। স্বামীকে বাঁচাতে যান মৌসুমী। তখন তাঁর মাথায় লাঠির ঘা বসিয়ে দেন তপন। ওই বাড়ির আয়া ফিরোজা বিবি তপনকে আটকাতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। গুরুতর জখম চিকিৎসক, তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দারা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা ৫৮ বছরের মৌসুমীকে মৃত ঘোষণা করেন। স্ত্রীর খুনের ঘটনায় চিকিৎসক গাড়িচালকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। চিকিৎসক-পত্নীকে খুন এবং চিকিৎসককে খুনের পৃথক মামলা রুজু হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৫, ৩০৭ ও ৩০২ ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। পরে ৩০২, ৩২৬ ও ৩০৭ ধারায় চার্জ গঠন হয়। ওই মামলায় ১৮ জন সাক্ষ্য দেন।
শুক্রবার ওই মামলায় গাড়িচালককে দোষী সাব্যস্ত করেন দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র। বস্তুত, দু’টি মামলায় রায় দিয়ে কার্যত নজির গড়েছেন তিনি। মামলার সরকারি আইনজীবী শিবরাম ঘোষাল বলেন, ‘‘মাইনে চাওয়া নিয়ে চালকের সঙ্গে বিরোধ হয়। তার জেরেই চিকিৎসকের পত্নীকে বেধড়ক পেটান তাঁদের গাড়ির চালক। চিকিৎসককেও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। তাঁর মাথায় বেশ কয়েক’টি সেলাই করতে হয়। চিকিৎসককে মেরে ফেলার চেষ্টা ও তাঁর স্ত্রীকে খুনের দায়ে গাড়ির চালককে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। খুনের ধারায় সর্বোচ্চ ফাঁসি এবং সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।’’
অন্য দিকে, আগামী সোমবার বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে। তাই ওই দিন তপনের শাস্তি ঘোষণা অনিশ্চিত। এক প্রবীণ আইনজীবীর মৃত্যুতে মঙ্গলবার আবার শোকসভা হওয়ার কথা। সে দিনও আইনজীবীরা সম্ভবত কাজে যোগ দেবেন না। ফলে বুধবার সাজা ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। সে দিনই শেষবারের মতো দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের এজলাসে বসবেন বিচারক মিশ্র। কারণ, তাঁর ঝাড়গ্রাম আদালতে বদলি হয়ে গিয়েছে।